স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ দরকার
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্বর্ণ চোরাচালান চলছে নিজস্ব গতিতেই। কোনোভাবেই থামছে না। দেশে অবৈধ স্বর্ণ আসে দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে। এরপর পাশের দেশ ভারতে পাচার হয়। আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই বাংলাদেশকে তাদের চোরাচালানের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বলছে, দেশের জল, স্থল ও আকাশপথ ব্যবহার করে প্রতিদিন অন্তত ২৫০ কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকছে। সে হিসাবে এক বছরে টাকার অঙ্কে স্বর্ণ চোরাচালানের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার কোটি। দেশি-বিদেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ও অর্থ পাচার এবং চোরাচালান বন্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নীরবতায় হুমকিতে পড়েছে জুয়েলারি শিল্প। এ অবস্থায় সব অপতৎপরতা বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযানের দাবির পাশাপাশি কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- অবিলম্বে স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানে জড়িতদের ধরতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান পরিচালনা করা। পাশাপাশি চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করা। বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা যায়। আমাদের দেশের বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণের ছোট বড় চালান আসছে, ফাঁক গলে বের হয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে দুয়েকটি চালান ধরাও পড়ছে। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে স্বর্ণের চাহিদা বছরে ১৬-২৬ টন। কিন্তু এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি স্বর্ণ অবৈধ পথে দেশে আসছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সীমান্ত এলাকায় চোরাই স্বর্ণের চালান উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে। গত ৫ বছরে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে ৫২৭ কেজি স্বর্ণ। আর গত ১০ বছরে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টম হাউস, বিজিবি, পুলিশ ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি স্বর্ণ জব্দ করে। যশোর অঞ্চলে গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বড় স্বর্ণের চালান উদ্ধার হয় ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট। শার্শার শিকারপুরে বিজিবি সদস্যরা মহিউদ্দিন নামে একজনকে আটক করে তার ব্যাগ থেকে ৬২৪টি স্বর্ণের বার জব্দ করেন, যার ওজন ছিল ৭২ কেজি সাড়ে ৪০০ গ্রাম। গত এক দশকে স্বর্ণ আটকের ঘটনায় যশোরে অন্তত ৬০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার অর্ধেকের বেশি বিচারাধীন। গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের নজরদারি ও সতর্কতা সত্ত্বেও দিন যত যাচ্ছে স্বর্ণ চোরাচালান তত বাড়ছে। একই সঙ্গে আড়ালে থেকে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা। আইনে স্বর্ণ চোরাচালানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও কোনো স্বর্ণ চোরাকারবারির বিরুদ্ধে এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নজির স্থাপন করা হচ্ছে না। এতে চোরাকারবারিরা অবৈধ পথে স্বর্ণ আনতে উৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা মনে করি, স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করতে হলে প্রথমত স্বর্ণ আমদানি নীতিমালার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। বিমানবন্দরগুলোয় জোরদার করতে হবে গোয়েন্দা নজরদারি। স্বর্ণ পাচারে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। সর্বোপরি প্রতিবেশী দেশে স্বর্ণ পাচার রোধে দেশের সীমান্তগুলোয়ও নজরদারি বাড়াতে হবে।