জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের খালগুলো উদ্ধার হোক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম নগরীতে টানা বৃষ্টিতে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও কোমরসমান পানি জমে আছে। এতে ধীরগতিতে সড়কের পাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচল করা মানুষ। শুধু চট্টগ্রাম নগর নয়, জলাবদ্ধতায় ডুবেছে নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পাঁচ-ছয় দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি বেড়েছে। গতকাল বুধবারও বৃষ্টির খবর এসেছে গণমাধ্যমে। আরো কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর ছোট-বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। নালা পরিষ্কার না করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) দায়ী করছেন তারা। তবে চসিক এ দায় নিতে নারাজ। টানা বৃষ্টিতে কী ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হবে- তা আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে বৈকি। জানা গেছে, ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ বছর মেয়াদে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ বাকি ছিল অর্ধেক। পরে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। সঙ্গে বাড়ানো হয় ব্যয়। এ অবস্থায় মে মাসে এসেও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৭ শতাংশ। বাকি কাজও যে শিগগির শেষ হবে তার কোনো আলামত নেই। অভিযোগ উঠেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি একটি অসম্পূর্ণ প্রকল্প। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকল্পগুলো নিয়েছে সিডিএ। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি। তাড়াহুড়ো করে করা সম্ভাব্যতা যাচাই, নিরীক্ষণ ও দুর্বল কর্মপরিকল্পনাই এর জন্য দায়ী। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল খনন ও সংস্কার করে সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে কী ধরনের জনবল কাঠামো লাগবে, কী ধরনের ইকুইপমেন্ট লাগবে- প্রকল্পে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টির কাজ শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি নিষ্কাশনের কোনো জায়গা না থাকার কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রামে যে খালগুলো ছিল সেগুলো ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। তাহলে এ পানি যাবে কোথায়? ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে এ সমস্যা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে কৃত্রিমভাবে যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলো সঠিকভাবে মেরামত করতে পারলে কিছুটা স্বস্তি পাবেন নগরবাসী। এই ড্রেনেজ সিস্টেম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ একক কর্তৃত্বে আনতে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ গুরুত্বসহ বিবেচনা করা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি কম হয়নি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরামর্শ কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের খালগুলো ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নগরীর খালগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে আরো সোচ্চার হতে হবে। মেগা প্রকল্পে জলাবদ্ধতা নিরসনে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।