প্রজন্ম দূরত্বের মিথস্ক্রিয়া ও দায়
ইফতেখার নাজিম
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রজন্মের হাত ধরে প্রজন্ম এগিয়ে যায় সভ্যতায়। তবে স্থান, কাল ও সময় ভেদে সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে যে পরিবর্তনের ঢেউ জাগে, সেটিই প্রজন্মের মাঝে দূরত্ব মিথস্ক্রিয়ার জন্ম দেয়। বিশেষ করে দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক বিকাশ ও আর্থসামাজিক পটপরিবর্তনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মনোভাব, মূল্যবোধ ও আচরণের পার্থক্য বা বিভাজন সৃষ্টি করে। এই পার্থক্য যোগাযোগশৈলী থেকে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে বিরোধপূর্ণ বিশ্বাস পর্যন্ত বিস্তৃত; যা মানসিক স্বাস্থ্য ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ওপর ক্রমবর্ধমান ও এর প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ। প্রবীণ প্রজন্ম মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়া বা যোগাযোগের ঐতিহ্যগত ধারণায় অভ্যস্থ হলেও তরুণ প্রজন্ম এর বিপরীতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যম বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অধিকতর অভ্যস্ত। যখন অগ্রজ প্রজন্ম চাকরির নিরাপত্তা ও ঐতিহ্যগত শ্রেণিবিন্যাসের ওপর উচ্চ মূল্য দেয়, তখন তরুণ প্রজন্ম প্রায়ই নমনীয়তা ও উদ্দেশ্যচালিত কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তরুণ প্রজন্ম প্রগতিশীল ও পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকে, যেখানে অগ্রজরা রক্ষণশীল। প্রজন্মগত মূল্যবোধ ও মনোভাবের মধ্যে বৈষম্য বা আচরণগত বৈচিত্র্য, উভয় প্রজন্মকে মানসিক দ্ব›েদ্বর দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা ব্যক্তি ও তাদের সম্পর্ক উভয়কেই প্রভাবিত করে। অগ্রজদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ের ঘাটতি থাকলে, সেখানে দ্ব›দ্ব বা সংঘাত অনিবার্য। এই মানসিক দ্ব›দ্বকে মোকাবিলার জন্য প্রজন্মের মাঝে বোঝাপড়া ও সহানুভূতিশীল সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত সংলাপ, পারস্পরিক সহানুভূতি ও সক্রিয় শ্রবণ, শিক্ষা ও সচেতনতা, অভিযোজন যোগ্যতা ও নমনীয়তা পারস্পরিক দ্ব›দ্ব বা সংঘাত এড়াতে সহায়ক হতে পারে। বিপরীত প্রচেষ্টা জেনারেশন গ্যাপ বা প্রজন্ম দূরত্বকে বাড়িয়ে দেয়ার শঙ্কা থেকে যায়। সহানুভূতি, সংলাপ ও অভিযোজন যোগ্যতার পার্থক্যগুলো থেকে উদ্ভূত মানসিক দ্ব›দ্ব মোকাবিলার মাধ্যমে আমরা প্রজন্মের মধ্যে শক্তিশালী ও সুরেলা উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। প্রতিটি প্রজন্মের অনন্য অবদানের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন শুধু আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে সমৃদ্ধ করবে না বরং সম্প্রদায়, সমাজ, রাষ্ট্র ও কর্মক্ষেত্রকেও শক্তিশালী করতে পারে। আর্থসামাজিক নানা কারণে সভ্যতার সৃষ্টিলগ্ন থেকে নবীন-প্রবীণের একটা মৌন যুদ্ধ চলমান, যেটাকে জেনারেশন গ্যাপ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এর থেকে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতার একটা সূত্রপাত হয়। বিচ্ছিন্নতা একটি ব্যাপক সামাজিক ঘটনা, যা ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে বৃহত্তর সামাজিক মিথস্ক্রিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন প্রেক্ষাপট জুড়ে ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বা বিচ্ছেদ প্রায়ই পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝির দিকে পরিচালিত করে। তাই গতিশীল ও স্থিতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে বিচ্ছিন্নতার কারণগুলো বুঝতে শেখা সমন্বিত সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচ্ছিন্নতার অন্যতম প্রধান চালক হলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। কেননা একটি জাতি-রাষ্ট্রের সভ্যগণ যখন সম্পদ, সুযোগ ও সম্পদের বৈষম্য অনুভব করে, তখন এটি বর্জন ও হতাশার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের ধারণায় অর্থনৈতিক অসুবিধা, সামাজিক বৈষম্য, জাতিগত বিভাজন ও অন্যান্য কারণের ওপর ভিত্তি করে প্রায়ই বিরক্তির অনুভূতির দিকে তরুণদের পরিচালিত করে, যা মানুষকে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বাধাকে শক্তিশালী করে এবং এই অনুভূতিগুলোকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কাঠামোও বিচ্ছিন্নতায় ভূমিকা পালন করে। পদ্ধতিগত ব্যর্থতা, বিশেষ করে অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিযোগিতায় অসম সুযোগ ও সামাজিক পরিষেবার অভাব, নিরপেক্ষ আইনি অপ্রতুলতা, সুশাসনের অনুপস্থিতি, সর্বত্র গোষ্ঠীপ্রীতির চর্চায় ব্যক্তিদের অবহেলিত ও অসমর্থিত বোধ করতে পারে। যখন সমাজ-রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগোষ্ঠী উপলব্ধি করে তাদের নাগরিক চাহিদা ও নাগরিক নিশ্চয়তার জন্য রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গের সিস্টেমগুলো ব্যর্থ হচ্ছে, তখন তারা এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ভোগেন এবং এ ক্ষেত্রেও নাগরিক ও রাষ্ট্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাদের ব্যাপক বিচ্ছিন্নতা বা দূরত্ব তৈরি হয়। রাষ্ট্রের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, উদীয়মান শিক্ষার্থীদের মাঝে আন্তঃকেন্দ্রিক দ্ব›দ্ব ও দুর্বল যোগাযোগ ব্যক্তি বা সমষ্টিগত স্তরে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যায়। ভুল বোঝাবুঝি, মতবিরোধ ও অমীমাংসিত দ্ব›দ্ব সম্পর্ক সংঘাত টেনে আনতে পারে এবং সমষ্টির মাঝে দূরত্বের দেয়াল গড়ে সমাজ রাষ্ট্রকে বিশৃঙ্খল বা অশান্ত করতে পারে। যে ধরনের দেয়াল এক সময় পারস্পরিক সংঘাতকে উসকে দিতে পারে এবং প্রাণ ও সম্পদহানির মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনার সূত্রপাত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া সামাজিক অসম পরিবর্তনও সম্প্রদায়ের হৃদয়ে এক ধরনের ক্ষত তৈরি করে এবং চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্নতায় অবদান রাখতে পারে; যা সামাজিক রূপান্তরে স্পষ্টত ঐতিহ্যগত বিশ্বাস ও অনুশীলনগুলো উদীয়মান মতাদর্শের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শগত পার্থক্যও নাগরিক বিচ্ছিন্নতায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। বহুমাত্রিক সমাজে পারস্পরিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও অনুশীলনে ভুল বোঝাবুঝি এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলাফল থেকে কেউ রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চতুর্থ মেয়াদে দেশ পরিচালনা করে। এ সময়ে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে এ সময়ে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি গণতন্ত্রকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহণহীন নির্বাচনের কারণে দেশের সার্বিক নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর মোটাদাগে চারিত্রিক মিল থাকলেও তাদের অদায়িত্বশীল আচরণ ও ধারাবাহিক নির্বাচন বয়কট সংস্কৃতি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অনেকাংশে দুর্বল করেছে। শাসক দলের সঙ্গে গণমানুষের দূরত্বের প্রাচীর তৈরি হওয়ায় তারা বহুলাংশে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এমন বাস্তবতায় কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় দলীয় প্রতীক বরাদ্দ এবং প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন নির্বাচন পদ্ধতি চালু, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রার্থী বিক্রির উৎসবে জড়িয়ে পড়ে জেলা পর্যায়ের শাসক দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব। ফলে জনসমর্থনহীন মানুষগুলো ক্রমেই রাজনৈতিক শক্তি বলয়ের কেন্দ্রে চলে আসে। অর্থের বিনিময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বাণিজ্যিক মানসিকতায় পুরো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ব্যবসায়িক হাতিয়ার বানিয়ে ফেলে। সর্বত্র রাজনৈতিক সরলীকরণের সুবিধা নিয়েছে প্রশাসনের একটি বিশাল অংশ। পারস্পরিক যোগসাজশে জড়িয়েছে দুর্নীতি, অনিয়মে। পিছিয়ে ছিল না সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর দুর্বৃত্তায়নচক্র। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সরকারের কল্যাণকামী উন্নয়ন।
এই দুর্নীতি নির্দিষ্ট গণ্ডি পণ্য সিন্ডিকেশন, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, আর্থিক খাতে অনিয়ম, পুঁজিবাজার লুণ্ঠন, দখলদারিত্ব, মাদক, শিক্ষা বাণিজ্য, সামাজিক সংগঠন পর্যায়ে বিস্তৃত হয়। বহুমাত্রিক অপরাধ চালিয়ে নিতে এই সুবিধাভোগীচক্র আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে পাড়া মহল্লার যুব তরুণদের। গড়ে ওঠে কিশোর গ্যাংকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি। তাদের অপ্রতিরোধ্য দৌরাত্ম্য সামাজিক শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ে। অসহায় হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। এসব নিয়ন্ত্রণ যাদের করার কথা ছিল, সেই প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা দেখেও না দেখার ভান করে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মদত দিয়েছে প্রভাব বলয় গড়ে তোলার তাগাদায়। এসব অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদে কোন শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে এলে, তখন তাদের ঢালাওভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাজাকার, পাকিস্তানের এজেন্ট ইত্যাদি নামে অভিহিত করে যৌথ দমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনের আবাসিক হলগুলোতে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে নির্যাতন করেছে, বিশেষ করে দেশের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা আবরার ফাহাদ হত্যার ন্যায় অমানবিক হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারেনি। যেমনি মেনে নিতে পারেনি চারদলীয় সরকারের আমলে সনি হত্যাকাণ্ড। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু নিজেদের পদ-পদবির প্রত্যাশায় এসব প্রশ্রয় দিয়েছে, নানাভাবে মদত দিয়েছে, নষ্ট করেছে শিক্ষার পরিবেশ। যার পুরো দায় গিয়ে পড়েছে সরকারপ্রধানের ওপর। এটাও গণমানুষের সঙ্গে সরকারি দলের বিচ্ছিন্নতার অন্যতম কারণ। যেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আবু সাঈদ, মুগ্ধদের মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
এ ধরনের অরাজক ক্রিয়াকলাপ তরুণ প্রজন্মকে শুধু হতাশ করেনি, বরং চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করেছে। নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম যখন সাধারণের জীবন প্রবাহকে অতিষ্ঠ করে যাচ্ছে, তখন আমলানির্ভর ধারণা থেকে সরকারপ্রধান বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং জনমত উপেক্ষা করে বারবার তেল, গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েছে অযৌক্তিকভাবে। শাসক দলকে কেন্দ্র করে এক ধরনের দেশদ্রোহী ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট জনবিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্তের সুফল নিয়েছে। যার দায়ভার গিয়ে ঠেকেছে শাসক দলের ওপর এবং শাসক দল নীরবে গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যার প্রতিফলন দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে সহজে সমাধানযোগ্য বিষয়টি গিয়ে ঠেকেছে প্রাণ ও সম্পদহানি পর্যায়ে। অথচ বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত রাজনৈতিক দর্শন প্রয়োগে এটি সহজে সমাধানযোগ্য ছিল। জাতির দুর্ভাগ্য, মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব সেই পথে না গিয়ে পুরো বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বৃত্তবলয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব প্রশাসনিক নির্ভরতায় ঝুঁকে পড়ায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনকে সরকারপ্রধানের আনুগত্য বজায় রেখে অবশ্যই কাজ করতে হবে, কিন্তু তাদের অনেক ক্ষেত্রে অতিকথন ও বাড়াবাড়ি বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতো বক্তব্য দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছে না। গোয়েন্দা সংস্থার কাজ হলো গোয়েন্দা তৎপরতায় থাকা। তা না করে যখন সংস্থা প্রধানের কার্যালয় খাবার হোটেল খুলে বসে, ফটোসেশন করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে, সেটি শুধু বাহিনীর ওপর নয়, সরকারের ওপরও জনগণ বিরূপ হয়। এটি শাসক দলের সঙ্গে প্রজন্মের দূরত্বকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই দায় কোনোভাবেই এড়ানো সম্ভব নয়।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি মানুষকে সংযুক্ত করার অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, তা সত্ত্বেও বলা যায় এটিও বিচ্ছিন্নতায় অবদান রাখতে পারে। বর্তমানে ডিজিটাল যোগাযোগ ও সামাজিক মাধ্যমের উত্থান মানুষের যোগাযোগের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করেছে। এটা কখনো সম্মুখ ও কখনো মুখোমুখি যোগাযোগ হ্রাস করে। ব্যক্তিরা বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি অনুভব করতে পারে, যখন তারা মনে করে যে তাদের অনলাইন মিথস্ক্রিয়ায় প্রকৃত মানসিক সংযোগের অভাব রয়েছে বা যখন তারা তাদের জীবনকে অন্যদের কিউরেট করা অনলাইন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে প্রতিকূলভাবে তুলনা করে। বিশেষ কারণে সম্প্রদায়ের মাঝে সৃষ্ট ট্রমা বা প্রত্যাখ্যানের অভিজ্ঞতা ব্যক্তি বা নাগরিকদের সামাজিক রাষ্ট্রিক মিথস্ক্রিয়া থেকে সরে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন করতে পারে। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে নেটওয়ার্ক বন্ধ করে প্রবাসীদের মাঝে যে ভুল বার্তা দেয়া হয়েছে, সেটিও রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। যা সামাজিক ও রাষ্ট্রিক বা সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিকে দুর্বল করে তুলতে পারে। বিষয়গুলোর দায় যত তাড়াতাড়ি শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারবে এবং প্রজন্ম দূরত্ব হ্রাসে উদ্যোগী হবে, ততই দেশ, জাতি ও দলের জন্য মঙ্গল।
ইফতেখার নাজিম : কলাম লেখক।