এমপক্স ঝুঁকিতে বিশ্ব
আগাম সতর্কতা জরুরি
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত উচ্চমাত্রার সংক্রামক রোগ এমপক্স। এটি বেশি মারাত্মক ধরনের বিস্তার ঘটায় বলে সতর্কতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই রোগের নতুন একটি ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং এর উচ্চ মৃত্যুহার নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। শুরুর দিকে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অন্তত সাড়ে ৪০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। ইতোমধ্যে মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, কেনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। পাকিস্তানে শনাক্ত হয়েছে এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি। এদিকে বিশ্বব্যাপী এমপক্স বিস্তারের ব্যাপারে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করায় উদ্বেগ বেড়েছে বাংলাদেশেও। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে হটলাইন চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কারো মধ্যে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে সন্দেহভাজনদের ১৬২৬৩ এবং ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এমপক্স প্রতিরোধে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত বিমানবন্দর এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এমপক্স নিয়ে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে আছে- এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় পুরো বিশ্বই এখন কাছাকাছি চলে এসেছে। বিশ্বের কোনো প্রান্তে কোনো রোগ হলে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া বিচিত্র নয়। সে হিসেবে বাংলাদেশও ঝুঁকিতে রয়েছে। আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ খুব বেশি নেই। তবে বাংলাদেশের কিছু মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি সূত্রে আফ্রিকায় থাকেন। যাতায়াত করেন। অল্প হলেও যাতায়াত তো আছে। তাদের মাধ্যমে যে কোনোভাবে বাংলাদেশে এমপক্স আসতে পারে। এছাড়া আফ্রিকার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর যোগাযোগ ভালো। সেখানে আমাদের দেশের অনেক লোক আছে। সুতরাং ঝুঁকি নেই, তা বলা যাবে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই ঝুঁকিটা রয়েছে। মাঙ্কিপক্স একপ্রকার সংক্রামক রোগ। এর উপসর্গ অনেকটা জ¦র বা ফ্লুর মতো। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস থেকেও অন্য কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারে। এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন হলো- ক্লেড-১ এবং ক্লেড-২। এর আগে ২০২২ সালে তুলনামূলক মৃদু ধরন ক্লেড-২ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এখন আরো অনেক বেশি প্রাণঘাতী ক্লেড ১-এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ভাইরাসটির ধরনে পরিবর্তন আসে। মিউটেশনের মাধ্যমে আরেকটি উপধরন সৃষ্টি হয়, যার নাম দেয়া হয় ক্লেড-১বি। তখন থেকে এটি দ্রুতগতিতে ছড়িয়েছে। একজন বিজ্ঞানী ক্লেড-১বিকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরন বলে বর্ণনা করেছেন। এমন অবস্থায় আফ্রিকাজুড়ে ও এর বাইরের দেশগুলোতে এমপক্সের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুবই উদ্বেগজনক। এই রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে সমন্বিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেমন জরুরি; তেমনি আমাদের দেশে এই সংক্রামক রোগ ছড়ানোর আগে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। যে কোনো সংক্রামক রোগ আমাদের মাঝে দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে। তাই আমাদের দেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগে আগাম প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।