কলেজগুলোর অসঙ্গতিগুলো দূর হোক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত সরকারের আমলে ২০১৬ সালে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই সেসব উপজেলায় কমপক্ষে একটি কলেজকে জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়া হয়। উদ্যোগটি সব মহলে তখন প্রশংসিত হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কলেজগুলোকে জাতীয়করণ করা হয়। একসঙ্গে প্রায় ৩০৩টি কলেজকে জাতীয়করণ করা হয় এবং পরবর্তী সময় আরো কিছু প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি গত ৬ বছরেও এসব প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রক্রিয়াটি কতটা জটিল ছিল সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষ করে প্রক্রিয়াটি ৬ বছরেও কেন শেষ করা গেল না সেটা নতুন সরকারের বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করা, সব ধরনের বৈষম্য দূর করে শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসাহিত করা, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক সংকট দূর করা ও শিক্ষার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনাসহ সব অসঙ্গতি নিয়ে ভাবতে হবে নতুন সরকারকে।
জাতীয়করণকৃত কলেজগুলোতে ২০১৬ সাল থেকে সব ধরনের পদে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অর্থাৎ গত ৮ বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদগুলোতে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়নি। পাশাপাশি গত ৮ বছরে অবসরে যাওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদগুলো নতুন করে শূন্য হয়েছে। তাই সরকারিকৃত কলেজগুলোর শিক্ষক সংকট এখন চরমে। বেশির ভাগ কলেজের গত ৮ বছরে প্রায় অর্ধেক শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান চলছে খণ্ডকালীন শিক্ষকের ওপর ভরসা করে। ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কিছু প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় কোনো বিষয়ের একাধিক শিক্ষকও অবসরে গিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার মান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কলেজগুলো শিক্ষকহীনতায় ভুগছে। শুধু শিক্ষক সংকটই নয়, প্রশাসনিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে অনেক প্রতিষ্ঠানেই অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষরা অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্তরা দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে। অফিস কর্মচারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবসরে যাওয়ায় কলেজ পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। সুতরাং শিক্ষক সংকট দূর করে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়ছে, পাশাপাশি প্রশাসনিক অন্য পদগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করে সংকট দূর করা প্রয়োজন। দরকার হলে শিক্ষক সংকট দূর করতে বিশেষ বিসিএসের ব্যবস্থা করে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা যেতে পারে। এতে শিক্ষক সংকটে ভুগতে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান প্রাণ ফিরে পাবে। নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আশা করি তিনি জাতীয়করণকৃত এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অবগত এবং এসব প্রতিষ্ঠানের অসঙ্গতিগুলো নিয়ে তার সরকার কাজ করবে। দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক সংকট দূরীকরণ, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ, গ্রেড অবনমন রোধ করা এবং সবাইকে স্ব-স্ব গ্রেডে বহাল রাখা, বেসরকারি আমলের সম্পূর্ণ চাকরিকাল বিবেচনা করা, অবসরপ্রাপ্তদের জন্য দ্রুত নীতিমালা করে আর্থিক সুবিধাদি দেয়াসহ অন্যান্য সব অসঙ্গতি তাকে বিবেচনা করতে হবে। আর এসব অসঙ্গতি দূর হলেই কেবল জাতীয়করণের প্রকৃত সুবিধা পাওয়া যাবে, অন্যথায় পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়বে। নতুন এই বাংলাদেশে দূর হোক সব অসঙ্গতি, দূর হোক সব বৈষম্য।
কে এম মাসুম বিল্লাহ : কলামিস্ট ও কর্মকর্তা, পটুয়াখালী।