মৃত্যুঞ্জয় শেখ মুজিব
সারা বাংলার ইতিহাস
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এবারের ১৫ আগস্ট (২০২৪) স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম তিরোধান দিবস। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবের কালজয়ী নেতৃত্বে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব ছিলেন অসাধারণ গুণাবলিসম্পন্ন একজন রাজনৈতিক নেতা। তিনিই বাংলাদেশের নামকরণ করেন এবং বিশ্বকবির ‘আমার সোনার বাংলা’ গানকে জাতীয় সংগীত নির্ধারণ করেন। তিনিই একাত্তরে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি সন্তানকে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ করেন। ঢাকাস্থ মার্কিন কূটনীতিক আর্চার ব্লাড তার গ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৭০-এর জুনেই শেখ মুজিব তাকে জানিয়ে দেন- ‘সামরিক বাহিনী যদি আমাকে বাধা দেয় তাহলে আমি স্বাধীনতা ঘোষণা করব এবং গেরিলা যুদ্ধের ডাক দেব।’ ব্লাড বলেছেন, ‘মুজিব প্রকৃতপক্ষেই পূর্ব পাকিস্তানের মুকুটহীন সম্রাট।’ মার্কিন অবমুক্ত দলিলে আরো বলা হয়েছে, ‘একাত্তরের ফেব্রুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্র মুজিবের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বার্তা পায় যে তার দাবি পূরণ না হলে তিনি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। শেখ মুজিবের অনন্য সাধারণ নেতৃত্বের জন্য ১৯৭১-এর ৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক তাকে ‘চড়বঃ ড়ভ চড়ষরঃরপং’ (রাজনীতির কবি) বলে আখ্যায়িত করে।
আসলে সত্তরের নির্বাচনের ফলাফল মুজিবকে বিশ্বনেতায় পরিণত করে। ৭ ডিসেম্বর ও ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার শতকরা ৯৮ জন ভোটার মুজিব ও মুজিবের দল আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাসে ৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জনগণের ভোটে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩১৩ (৩০০+১৩ মহিলা=৩১৩) আসনের পার্লামেন্টে ১৬৭ (১৬০+ মহিলা ৭ = ১৬৭) আসন পেয়ে শেখ মুজিবের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পূর্ব বাংলার ১৬৯ (১৬২+ মহিলা ৭ = ১৬৯) আসনের মধ্যে ২টি বাদে ১৬৭টি (১৬০+ মহিলা ৭ = ১৬৭) পায় আওয়ামী লীগ। একইভাবে পূর্ব বাংলার ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগ পায় ২৮৮টি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনের ধ্যান-জ্ঞান এবং মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। গবেষক-লেখক-ঐতিহাসিকরা লিখেছেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্যই মুজিবের জন্ম হয়েছিল। শেখ মুজিবের জন্ম না হলে শত বছর পরে হলেও একদিন হয়তো অবাস্তব রাষ্ট্র পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ পৃথক হতো। কিন্তু ১৯৭১ সালে কোনোভাবেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। যেই মুজিব ১৯৪৭ সালে ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় নেতা ছিলেন, সেই মুজিব ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে পাকিস্তান ভেঙে চুরমার করে দেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৪ মাস পর ১৯৪৮-এর ৪ জানুয়ারি কতিপয় সমমনা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন শেখ মুজিব। ছাত্রলীগের মাধ্যমেই বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নেন দূরদর্শী মুজিব। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ঢাকায় পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাত্র ২৯ বছর বয়সে কারাবন্দি থেকেই নবগঠিত দলের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক হলেন শেখ মুজিব।
মাত্র ৩৩ বছর বয়সে দলীয় কাউন্সিলে শেখ মুজিব ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ও সমমনাদের প্রচেষ্টায় ১৯৫৫ সালে দলের কাউন্সিলে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলকে অসাম্প্রদায়িক দলে পরিণত করা হয়। ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে শেখ মুজিব দলীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ প্রধান লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। মাত্র ৩ মাসে বাংলাদেশের মানুষের কাছে শেখ মুজিব প্রমাণ করতে সক্ষম হন ৬ দফা এ দেশের মানুষের বাঁচার দাবি। ৬ দফা দেয়ার পর আইয়ুব-মোনায়েম চক্র অস্ত্রের ভাষায় হুমকি দেয়। পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেন শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু জানতেন, ৬ দফা ওরা মানবে না। আর তখনই ৬ দফা পরিণত হবে এক দফায়। শেষ পর্যন্ত একাত্তরে তাই হয়েছিল।
মুজিবের নেতৃত্বের অনেক বৈশিষ্ট্যের একটি হলো তাঁর দূরদর্শিতা। তিনি জানতেন কখন কোন কথাটি বলতে হবে এবং কখন কোন কর্মসূচি দিতে হবে। ১৯৬৬ সালে আইয়ুব-মোনায়েমের কঠোর শাসনের সময় তিনি ৬ দফা দাবি পেশ করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরে ১২ বছর জেলে থেকে মুজিব প্রমাণ করেন, বাংলার মানুষের জন্য তিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষের সমর্থন প্রমাণ করে এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলার অধিকার একমাত্র মুজিবের। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হন তিনি। তখন দেশে একটি সামরিক সরকার থাকা সত্ত্বেও ওই সরকার তখন সম্পূর্ণভাবে অচল। ১ থেকে ২৫ মার্চ ৩২ নম্বর থেকে দেশ পরিচালনা করেন বিরোধী দলের এই রাজনীতিবিদ। পৃথিবীর ইতিহাসে একটি সরকার (তাও আবার সামরিক সরকার) থাকা অবস্থায় একজন বিরোধী দলের নেতার নির্দেশে সরকার পরিচালিত হওয়ার দ্বিতীয় কোনো নজির অবশ্যই নেই।
একজন বক্তা হিসেবেও মুজিবের সঙ্গে শুধু তাঁরই তুলনা চলে। সারাজীবন কারামুক্ত থাকা অবস্থায় চারণ কবির মতো গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে স্বাধিকারের দাবিতে তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন। প্রকৃতপক্ষে এ দেশের জনগণকে তাদের দাবি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার কৃতিত্বও শেখ মুজিবের। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক চক্রের কামান-মেশিনগান-বন্দুকের মুখে অকুতোভয় মুজিব দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।... বাংলার মানুষকে আর দাবায়া রাখতে পারবা না।... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের ভাষণে মুজিব সরাসরি স্বাধীনতার যেমন ঘোষণা করেননি, আবার স্বাধীনতা ঘোষণার কোনো বাকিও রাখেননি। ওইদিন আসলে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। অর্থাৎ বাংলার মানুষকে চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেন তিনি।
সবাই জানেন, পাকিস্তানিরা ঢাকা সেনানিবাস থেকে রেসকোর্সের জনসভা অভিমুখে সেদিন কামান, মেশিনগান মোতায়েন করে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার সময় বিমানে সৈন্যরা টহল দিচ্ছিল। সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি দস্যুরা জনসভায় সশস্ত্র হামলা চালাত। এতে হাজার হাজার শুধু নয়, লাখো মানুষের প্রাণ হারাবার আশঙ্কা ছিল। মানুষরূপী পাকিস্তানি জানোয়ারদের পক্ষে যে সবকিছু করা সম্ভব ছিল, একাত্তরের ৯ মাসের গণহত্যা তা প্রমাণ করেছে। ওই সময় বর্বর পাকিস্তানিরা এবং তাদের এদেশীয় দোসররা মায়ের সামনে মেয়েকে এবং মেয়ের সামনে মাকে পর্যন্ত ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। মুক্তিযোদ্ধারা অনুপস্থিত সেনাপতি মুজিবের নামেই যুদ্ধ করেছে। তারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন দান করেছেন। এভাবে শত্রæর কামান-বন্দুকের সামনে কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়ার কোনো দ্বিতীয় উদাহরণও বিশ্ব রাজনীতিতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৭ মার্চ যদি বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন, তাহলে পাকিস্তানিরা লাখো মানুষকে হত্যা করত এবং শেখ মুজিবকে ওরা রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা দিত। ওই অবস্থায় স্বাধীনতা সংগ্রামে বিদেশি সমর্থনও পাওয়া যেত না। ভারত, রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক সমর্থন না পেলে বাংলাদেশ ৯ মাসে কেন ৯ বছরেও স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ।
একজন সাহসী নেতা হিসেবেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্য কোনো নেতার তুলনা হয় না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১ নম্বর আসামি হিসেবে ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাতে চেয়েছিল। নিশ্চিত ফাঁসির মুখেও মুজিব মাথা নত করেননি। অবশেষে গণ-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন এবং ১০ বছরের স্বৈরশাসক জে. আইয়ুবের পতন হয়। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে মুজিবের সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল। আপস করেননি বাংলার নয়নমণি মুজিব। তিনি শুধু পাকিস্তানি পশুদের বলেছিলেন, ‘ফাঁসির পর আমার লাশটা আমার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও।’ অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ দেশ স্বাধীন হয়। ইয়াহিয়ার পতন হলো এবং মুজিব বীরবেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় ফিরে আসেন।
বঙ্গবন্ধু মুজিবের দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি ভালোবাসা, দূরদর্শিতা, সাহস, ৭ মার্চের ভাষণ, কালজয়ী নেতৃত্বে একটি দেশকে স্বাধীন করা এবং তাঁর রাজনৈতিক ও মানবিক গুণাবলি নিয়ে অসংখ্য বই, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা লেখা হয়েছে। এই পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে, ততদিনই মুজিব নাম কোনো না কোনোভাবে আলোচনায় থাকবে। বিশ্বখ্যাত একজন ইতিহাসবিদ ও গবেষক যথার্থই লিখেছেন- ‘দেশে দেশে নেতা অনেকেই জন্মান। কেউ ইতিহাসের একটি পঙ্ক্তি, কেউ একটি পাতা, কেউ বা এক অধ্যায়, কিন্তু কেউ আবার সমগ্র ইতিহাস। শেখ মুজিব এই সমগ্র ইতিহাস। সারা বাংলার ইতিহাস। বাংলার ইতিহাসের পলিমাটিতে তাঁর জন্ম। ধ্বংস, বিভীষিকা ও বিরাট বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সেই পলিমাটিকে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের চেতনায় শক্ত ও জমাট করে একটি ভূখণ্ডকে শুধু তাদের মানসে নয়, অস্তিত্বের বাস্তবতায় সত্য করে তোলা এক মহা-ঐতিহাসিক দায়িত্ব। মুজিব মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয় নেতার মতো এই ঐতিহাসিক ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতিহাসের সন্তান ইতিহাসকে পুনর্নির্মাণ করেছেন। এখানেই তাঁর ঐতিহাসিকতা।’ এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেই আমরা পরিবারের সদস্যসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোরে হত্যা করেছি। আবার ৪৯ বছর পর তাঁর ঐতিহাসিক বাড়িকেই আমরা পুড়িয়ে দিয়েছি। ১৯৮২ সালের ২০ মার্চ লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সর্ব ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিখ্যাত আইনজীবী এবং নোবেল ও লেনিন শান্তি পুরস্কার বিজয়ী জন ম্যাকব্রাইড বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দেশের আত্মার প্রতীক।’ পরাধীনতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামকারী লর্ড (ফেনার) ব্রকওয়ে ১৯৭৯ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক পুরুষ, নারী ও শিশুসহ সব নাগরিকের জন্য শেখ মুজিব যে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন তার মধ্যেই তিনি সযতেœ রক্ষিত থাকবেন। তাঁর হত্যা ব্যক্তিবিশেষকে হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। এটা সমগ্র জাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর নাম লেনিন, রোজা লুক্সেমবার্গ, গান্ধী, এনক্রুমা, লুমুম্বা, ক্যাস্ট্রো ও আলেন্দের নামের সঙ্গে নিশ্চয়ই বেঁচে থাকবে।’ ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাসভবন একটি বাড়ি মাত্র নয়। এই বাড়ি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ। এই বাড়িতে থেকে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ১ থেকে ২৬ মার্চ অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। ২৩ মার্চ (১৯৭১) এই বাড়িতেই তিনি স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে এই বাড়িতে বসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৫ আগস্ট স্বজনদের সঙ্গে এই বাড়িতেই তিনি নিহত হন। হত্যার পরদিন (১৬ আগস্ট ১৯৭৫) লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় বলা হয়, ‘সবকিছু সত্ত্বেও শেখ মুজিব স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এ জন্য যে তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশ কখনো বাস্তবে পরিণত হতো না।’ সবশেষে শোকের মাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা মহান মুজিবকে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
মোহাম্মদ শাহজাহান : সম্পাদক ও গবেষক।