কী বার্তা দিতে চাইছে দুষ্কৃতকারীরা
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কী অপরাধ ছিল হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল স্টেশনের? কী অপরাধ ছিল সেতু ভবনের? কী অপরাধ ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের? এভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ আরো কিছু অবকাঠামোর ওপর দুষ্কৃতকারীরা যেভাবে আক্রমণ করেছে, তাতে করে প্রমাণ করতে এক সেকেন্ডও সময় লাগে না যে আক্রমণকারীরা আসলে কারা ছিল। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে এদেশের অনেক মানুষের সমর্থন ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই এবং অত্যন্ত যৌক্তিক একটা আন্দোলন করতে গিয়ে বেশকিছু সংখ্যক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এসব ছাত্র হত্যার বিচারের জন্য সরকার ইতোমধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, আশা করছি এর সুবিচার ছাত্ররা পাবে। কিন্তু ছাত্রদের এ আন্দোলনের ওপর ভর করে যেসব দুষ্কৃতকারী সরকারের উন্নয়ন অবকাঠামোর ওপর আক্রমণ করে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, তাতে করে একটা বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার- ছাত্রদের এ আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এরা সম্ভবত এ সুযোগে সরকারকে উৎখাত করার একটা পাঁয়তারা করেছিল। সরকার সঠিক সময়ে ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের সে আশা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, সরকার যদি আরো একটু আগে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলত, আরো একটু সাবধান হতো তাহলে দুষ্কৃতকারীরা এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সাহস পেত না। যে কোনো সরকারকে মনে রাখতে হবে, এ দেশে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, তাদের আন্দোলন মানেই হচ্ছে তারুণ্যের উপস্থিতি। যে তারুণ্য কখনো বাধা মানে না। এ বিষয়টি ছাত্ররা যখন কোনো কোটা চাইছে না এবং সরকারও কোটা চাইছে না, তখন তাদের দাবি দ্রুত মেটানো অসম্ভব ছিল না। মূলত শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট একটা গ্রহণযোগ্য রায় দেয়ার পর এবং সরকারও বিষয়টি আন্তরিকভাবে ইতিবাচক হিসেবে নেয়ার পর এখনো অন্যান্য দফা থাকলেও আপাতত ছাত্রদের মূল আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। এখন তাদের কিছু দাবি দফা হিসেবে সরকারের কাছে পেশ করেছে, সে বিষয়ে শিগগিরই একটা সুরাহা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে গোটা দেশ আছে এ বিষয়টা সরকার খুব ভালোভাবেই বোঝে এবং সরকার সরাসরি তাদের পক্ষে আছে বলে সব সময় বলছে। কিন্তু ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যেসব দুষ্কৃতকারী মেট্রোরেল স্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছে, সেতু ভবন পুড়িয়ে দিয়েছে, পুড়িয়ে দিয়েছে বিটিভি ভবন- তারা কোনো অবস্থাতেই ছাত্র হতে পারে না। এরা দুষ্কৃতকারী, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো চায় না।
মূলত বাংলাদেশের কোটার একটা বড় অংশজুড়ে ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা, যার হার ছিল শতকরা ৩০ শতাংশ। অবশ্য এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের জন্য। এ কোটা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা ব্যবহার করতে থাকলে বিপত্তি দেখা দেয়। বর্তমানে রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা হয়, তা মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান এবং বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য। বাকি ২ শতাংশ অন্যান্য কোটা রাখা হয়। এতে জেলা কোটা এবং নারী কোটা বাদ দেয়া হয়।
দেশের উন্নয়ন অবকাঠামোর ওপর যেসব দুষ্কৃতকারী হামলা চালিয়ে জনগণের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় না দিয়ে নিরপেক্ষতার মানদণ্ডে শাস্তির বিধান করার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি। তার সঙ্গে ছাত্র হত্যার বিচারও দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করে দেশে একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রত্যাশা করছি। আমরা সংঘাত চাই না, আমরা চাই দেশে সব পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। তবে তা কোনো অবস্থাতেই দেশের উন্নয়ন অবকাঠামোর ওপর হামলা করে, দেশের সম্পদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে নয়।
রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক।