জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো উদ্ধার ও সংস্কার জরুরি
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৃষ্টি হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও কোনোটাই কাজে আসছে না। টানা কিছুক্ষণ ভারি বৃষ্টি হলে ঢাকার কোনো না কোনো এলাকা ডুববে- এটি যেন নিয়ম হয়ে গেছে। অথচ গত চার বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এর সুফল কতটা কার্যকর হয়েছে, তা গত শুক্রবার সকালের তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্রমাণ মেলেছে। রাজধানীবাসী নতুন করে চরম ভোগান্তি দেখল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। বৃষ্টিতেই ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, নিউমার্কেট, মতিঝিল, আরামবাগ, কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, দক্ষিণখান, কল্যাণপুর, বিজয় সরণি, মালিবাগ, মৌচাকসহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ডুবে যায়। অনেক বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। কোথাও পানি ছিল হাঁটুসমান, কোথাও প্রায় কোমরসমান। তবে প্রকৃতপক্ষে তখন রাজধানীতে ডুবে যাওয়া এলাকার সংখ্যা আরো অনেক বেশি ছিল। অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই রাজধানীবাসীকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হলে টানা বৃষ্টিতে নগরবাসীকে কী ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হবে- তা ভেবে আতঙ্কিত হতে হয়। ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে প্রতি বছরই ভারি বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীর। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা কিছুটা তৎপর হলেও এক পর্যায়ে সব থেমে যায়। আবার ভারি বৃষ্টি হলে সবাই সরব হয়। বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত ড্রেন না থাকা এবং নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করাসহ নগরবাসীর অসচেতনতা এই জলাবদ্ধতার কারণ বলে মনে করি। এছাড়া রাজধানীর খালসহ বিভিন্ন জলাশয় এখনো বেদখলে রয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের জায়গা না থাকার কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। তাহলে এ পানি যাবে কোথায়? প্রাকৃতিকভাবে এ সমস্যা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের যে ড্রেনগুলো আছে, সেগুলো সঠিকভাবে মেরামত করতে পারলে দুর্ভোগ কিছুটা কমবে। আন্ডারগ্রাউন্ড ও উপরিভাগে যে ড্রেনগুলো আছে, সেগুলো রয়েছে পৃথকভাবে ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের অধীনে। এ দুই প্রতিষ্ঠানের কাজে অনেক সময় সমন্বয় হয় না। একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর প্রবণতা দেখা যায়। একসময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ৪৬টি ছোট-বড় খাল প্রবাহিত হতো, যা এই শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দারুণভাবে সহায়ক ছিল। কিন্তু এখন ৪৬টির মধ্যে কোনোরকমে ২৬টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এসব খালের গভীরতাও নেই, প্রশস্ততাও নেই। আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীর খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। খালগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে আরো সোচ্চার হতে হবে। বিদ্যমান খালগুলো দখলমুক্ত ও খনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। খাল, ড্রেন পরিষ্কার রাখতে নগরবাসীকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখা দরকার, ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ কোনো সহজসাধ্য ও স্বল্প সময়ের কাজ নয়। এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক সমন্বয় ও পরিকল্পিত কার্যক্রম।