পাহাড়ধস রোধে টেকসই উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা বেড়ে যায়। ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে বার্তায় সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না। এতে করে হতাহতের ঘটনাও বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারে চারটি পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে স্কুলছাত্রীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এমন অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর অবসান হওয়া জরুরি। প্রতি বছরই বর্ষায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে পাহাড় ধসে মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটছে। বর্ষা এলে পাহাড় ধসে প্রাণহানি রোধে পাহাড় ঢালের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসনের নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানা যায়। কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে তিন ধরে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজারে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টির পানিতে মাটি সরে গিয়ে কক্সবাজারে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয় ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বাটালি হিল ও বিভিন্ন স্থানে পাহাড়, দেয়াল ও ভূমিধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা। এত ব্যাপক আকারে না হলেও পাহাড় ধস এবং এতে হতাহতের ঘটনা কিন্তু প্রতি বছরই ঘটছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে- এর প্রতিকারে কী করতে পেরেছি আমরা? গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের প্রায় ৭০০ একরে ছোট-বড় ১২টি পাহাড়ে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি বাড়িঘর রয়েছে এবং অবৈধ এসব ঘরে কমপক্ষে আড়াই লাখ মানুষ বাস করছে। এবার বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশে প্রশাসনের জোরালো তৎপরতা দেখা গেলেও কক্সবাজার, বান্দরবান এসব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, পাহাড় ধসে প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও পাহাড় ধস ঠেকানোর ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। বর্ষায় প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ংকর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড় ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড় ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। সর্বোপরি, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনে সরকারের শীর্ষ মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এর কোনো বিকল্প নেই।