সীমান্তে যুবক নিহত
এ বর্বরতার অবসান হোক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সীমান্তে সংযত আচরণে ভারতের প্রতিশ্রæতি সত্ত্বেও বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে রাজুম মিয়া নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সীমান্তে হত্যার খবর গণমাধ্যমে আসছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রথম ৫ মাসে বিএসএফের গুলিতে ১৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড একটি সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময় দুদেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকে সীমান্তে হত্যা বন্ধে নানা উদ্যোগ ও প্রতিশ্রæতির কথা বললেও বাস্তবায়ন কম। এছাড়া প্রতি বছর সীমান্ত সম্মেলনে হত্যার বিষয়টি আলোচিত হলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। সীমান্তে সংযত আচরণে ভারতের প্রতিশ্রæতি সত্ত্বেও বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। যুদ্ধাবস্থা ছাড়া বন্ধুভাবাপন্ন দুই দেশের সীমান্তে এ রকম প্রাণহানি অস্বাভাবিক, অমানবিক। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছিল কিশোরী ফেলানী খাতুন। তার মরদেহ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। তখন কুড়িগ্রামের কিশোরী ফেলানীর ঝুলন্ত মরদেহের ছবি দেশে-বিদেশে আলোড়ন তুলেছিল। ওই ঘটনার পর সীমান্তে হত্যা বন্ধে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল বিএসএফ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে কেবল ২০১৮ সালে সীমান্তে হত্যার ঘটনা দুই অঙ্কের নিচে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ওই বছর সরকারি হিসাবে তিনজন হত্যার শিকার হন। ওই সময়ে সীমান্তের পরিবেশও ছিল স্বস্তিদায়ক। অথচ পরের বছরই তা এক লাফে ১৩ গুণ বেড়ে যায়। অথচ বিভিন্ন সময় ভারতীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার নীতিতে কাজ করা হবে। সীমান্ত হত্যা রোধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র দেয়া হবে না বলেও প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেসব প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন নেই। কয়েক দশক ধরে গুলি করে হত্যা করে চোরাকারবার ঠেকানো গেছে কি? দুদেশের মধ্যে সমঝোতা এবং এ সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী যদি কোনো দেশের নাগরিক অননুমোদিতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে তা অনুপ্রবেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কথা এবং সেই অনুযায়ী ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের নিয়ম। গুলি করে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করা কেন? যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, মানুষ পাচার এবং চোরাচালান বন্ধে যৌথ উদ্যোগ ও দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দুই দেশ কাজ করছে, সেখানে সীমান্তে গুলি-হত্যা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। সীমান্তে যে কোনো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিদ্যমান আইনে বিচার হবে এবং এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। ভারত বারবার বলেছে, তারা সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে না। কিন্তু পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে, তাতে তাদের এই বক্তব্য অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ছে। আমরা আর সীমান্তে হত্যার বর্বরতা দেখতে চাই না।