×

সম্পাদকীয় ও মুক্তচিন্তা

হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা জরুরি

Icon

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা জরুরি

কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে হালদার মা-মাছ ও জীববৈচিত্র্য। কমেছে ডিমের সংখ্যা। মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, নদীর সর্পিলাকার অবয়ব কেটে ফেলা, নদীর চারপাশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য, বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারসহ নানান কারণে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা এখন ভালো নেই। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে একদিকে যেমন মা-মাছের সংখ্যা কমছে, তেমনি বিপন্ন হওয়ার পথে হালদার প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। পত্র-পত্রিকার বরাদ দিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের পর হালদায় এবার সবচেয়ে কম ডিম ছেড়েছে রুই জাতীয় মা-মাছ। জানা গেছে, গত ৭ মে হালদায় সীমিত আকারে ডিম ছাড়ে মা-মাছ। এতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ কেজি রেণু পান জেলেরা। অথচ আগের বছর ২০২৩ সালে রেণু পাওয়া যায় প্রায় ৪৩৭ কেজি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ১০ দিনের ব্যবধানে হালদা থেকে পাঁচটি বড় মা-মাছ মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে একটি রুই, ৪টি কাতলা মাছ ছিল। সর্বশেষ হালদা থেকে ২০ কেজি ওজনের একটি মৃত কাতলা মাছ উদ্ধার হওয়ার খবর এসেছে বিভিন্ন পত্রিকায়। এছাড়া এবার একটি মৃত ডলফিনও উদ্ধার করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এ নিয়ে গত সাড়ে পাঁচ বছরে হালদা থেকে ৪১টি মৃত ডলফিন উদ্ধার হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, হালদার পরিবেশ দিন দিন নাজুক হচ্ছে। গত ১০০ বছরে হালদা নদীর অন্তত ১১টি বড় আকারের বাঁক কেটে সোজা করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নদীর এসব বাঁকই কার্প জাতীয় মাছের প্রধান আবাসস্থল। এছাড়া দূষণের কারণে মা-মাছ অনুকূল পরিবেশের অভাবে ডিম ছাড়ছে না। মা-মাছরা মূলত ডিম ছাড়ার আগে পরীক্ষামূলকভাবে অল্প ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেলে মা-মাছ ডিম নিজের দেহের মধ্যে নষ্ট করে দেয়। হালদার দূষণ যেন কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিনই ভেসে উঠছে ছোট-বড় মৃত মাছ। হালদায় অবৈধ সব ব্যাপার হালদাকে ক্রমাগত মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে। অবৈধ দখল, নদীর উজানে অবৈধ রাবার ড্যাম নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে হালদা নদী এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। হালদার আশপাশের ছোট-ছোট খালের বিষাক্ত বর্জ্য প্রতিদিন এসে পড়ছে এই নদীতে। নদী তীরে গড়ে ওঠা ইটভাটা, পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, বাঁধ তৈরিতে মাছের খাবার কমে যাওয়া, ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেলসহ নানান কারণে হালদার প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। এছাড়া বর্তমানে হালদার পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নষ্ট হচ্ছে নদীর মাটির গঠন। নদীতে প্রায়ই নিষিদ্ধ ইঞ্জিনচালিত নৌকার ইঞ্জিনের ঘূর্ণায়মান পাখার সঙ্গে মা-মাছ কেটে মারা যাচ্ছে। মূলত নানা কারণে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিম ছাড়ে। উজান থেকে আসা বিভিন্ন পুষ্টি ও অন্যান্য পদার্থ এসে এসব গভীর স্থানে জমা হয়। এসব গভীরকে স্থানীয়রা ‘কুম’ বলে। মা-মাছ বেশির ভাগ সময় এসব কুমে আশ্রয় নিয়ে অনুকূল পরিবেশ অনুভব করলে ডিম ছাড়ে। এছাড়া রাসায়নিক ও জৈবিক কারণেও মা মাছ ডিম পাড়ে এই নদীতে। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে গেছে, হালদায় একসময় ৭২ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে হালদায় ডলফিনসহ ৬০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, কিন্তু সেটিও দিন দিন কমে যাচ্ছে। হালদাকে চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’ও বলা হয়। হালদা শুধু রুই জাতীয় মাছের প্রজননের জন্য বিখ্যাত নয়, চট্টগ্রাম শহরের ৭০-৮০ লাখ মানুষের চাহিদা মেটায় মিঠাপানির হালদা। হালদা থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পিউরিফিকেশন করে পানিকে খাবার যোগ্য করার কাজটি করে ওয়াসা। এ নদী শুধু মৎস্যসম্পদের জন্য নয়, যোগাযোগ, কৃষি ও পানিসম্পদেরও একটি বড় উৎস। তাই হালদাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। হালদায় অবৈধ দখল, নিষিদ্ধ যান চলাচল, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, অবৈধ বালু উত্তোলন ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া নদীর আশপাশে দূষণ সৃষ্টিকারী স্থাপনাগুলো দ্রুত অপসারণের বিকল্প নেই। হালদা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ম্যানুয়ালি ডুবুরি দিয়ে নদী খননের কাজ করতে হবে নতুবা হারিয়ে যাবে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ। হালদায় পলি জমে মাছের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল কুমগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হালদার মাছ ও জলজ প্রাণীর নিরাপদ বাস্তুসংস্থান, মাছের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল ফিরিয়ে আনতে এখনই আশু পদক্ষেপ হাতে নিতে হবে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা পালন না করলে দেশের একমাত্র এ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্রটির সম্ভাবনাও আরো ঝুঁকিতে পড়বে।

আরফিুল ইসলাম তামমি : শিক্ষার্থী, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

টাকার বিছানায় ঘুমান দুর্নীতির প্রাণপুরুষ সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল

টাকার বিছানায় ঘুমান দুর্নীতির প্রাণপুরুষ সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল

এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনাও কোটিপতি

এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনাও কোটিপতি

কোহলির ছক্কায় ভাঙল চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের দেয়াল

কোহলির ছক্কায় ভাঙল চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের দেয়াল

আয়নাঘর সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ, প্রয়োজনে যে কাউকে তলব, প্রজ্ঞাপন জারি

আয়নাঘর সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ, প্রয়োজনে যে কাউকে তলব, প্রজ্ঞাপন জারি

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App