×

সম্পাদকীয় ও মুক্তচিন্তা

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

বাহক বাহক বিয়ে নয়

Icon

মোস্তাক আহমেদ, সাংবাদিক ও মোটিভেটর

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 বাহক বাহক বিয়ে নয়
রূপ-গুণ, শিক্ষা, অর্থনীতি কিংবা বংশীয় মর্যাদায় বর ও কনে যখন সমান সমান হয়, তখন সে বিয়েকে নিশ্চয়ই হাততালি দেন সবাই। উভয় পরিবারেও বয়ে যায় আনন্দের ফল্গুধারা! তবে বর ও কনে উভয়েই যদি থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক হন, তবে তাদের সন্তানেরও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি। এ কারণেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক বাহক বিয়ে রোধে বিশ্বব্যাপী সেøাগান তুলছেন চিকিৎসক ও সচেতন মানুষ। আজ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। প্রতি বছর ৮ মে নানা সচেতনতার বাণী নিয়ে পালিত হয় দিবসটি। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে- ‘Empowering Lives, Embracing Progress : Equitable and Accessible Thalassaemia Treatment for All’। বিভিন্ন কারণে দিবসটি তাৎপর্যপূর্ণ। এটি জনসাধারণকে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করে। জনশিক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ এর সমাধান নীতিতেও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। থ্যালাসেমিয়া রোগের একমাত্র কার্যকরী চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। নানা কারণে সবার পক্ষে এই চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় না। তাই সাধারণত রক্তস্বল্পতার জন্য একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে প্রতি মাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত শরীরে নিতে হয়। ঘন ঘন রক্ত নেয়া ও পরিপাকনালি থেকে আয়রনের শোষণক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ নানা অঙ্গ ও গ্রন্থিতে নানা জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত রক্ত না নিলে থ্যালাসেমিয়া রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। রক্ত গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও সুচিকিৎসা প্রয়োজন। নিয়মিত রক্ত দিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে চিকিৎসা করালে থ্যালাসেমিয়া রোগীকে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগের জিন বহন করে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৩ লাখের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়ার ‘গুরুতর রূপ’ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ এসব নবজাতক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে জনগণের প্রায় ১০-১২ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ লোক থ্যালাসেমিয়া বাহক বা রোগাক্রান্ত। আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রক্তদান কার্যক্রমের সংগঠনগুলোর রক্তের একটা বড় অংশ সরবরাহ হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য। কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদানের মতো সংগঠনের এক হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগীকে তারা নিয়মিত রক্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সঙ্ঘবদ্ধ রক্ত সেবা ছাড়াও এককভাবে রক্ত সংগ্রহ বা বিতরণের হিসাব তো অজানাই থেকে যায়। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর শুধু রক্ত সঞ্চালনের জন্যই প্রায় ১ দশমিক ৫ থেকে ২ লাখ টাকা বার্ষিক খরচ হয়। এছাড়াও রয়েছে পারিবারিক নানা ভোগান্তি! এমন চিত্রের মধ্য দিয়েই বছর ঘুরে দিবস আসে। দিবস চলে যায়। রোগ, রোগী, রক্তচাহিদা আর চিকিৎসা নিয়ে হা-হুতাশেই শেষ হয় আলোচনা। প্রাপ্তির ঝুড়িতে সারমর্ম দাঁড়ায়, রোগ হলে চিকিৎসার চেয়ে আগেই এ রোগ প্রতিরোধে জনে জনে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। অবশ্য দিন দিন সচেতনতা বাড়ছে। তবে এর গতিটা আরো বাড়াতে হবে। মানুষকে জানতে হবে থ্যালাসেমিয়ার বাহক মানেই রোগ নয়। তিনি কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ। শুধু দুজন বাহক বিয়ে করলে তাদের সন্তানের এ রোগের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। বাহকে বাহকে বিয়ে বন্ধ করতে পারলে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা জরুরি। লেখালেখিসহ সভা-সেমিনার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ তথ্য ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপের মতো থ্যালাসেমিয়া স্ট্যাটাস উল্লেখ করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে বিয়ের রেজিস্ট্রিতে থ্যালাসেমিয়া স্ট্যাটাস নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা যেতেই পারে। অর্থাৎ ‘বাহক বাহক বিয়ে নয়’ বিষয়টিতে সোচ্চার হওয়ার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। মোস্তাক আহমেদ, সাংবাদিক ও মোটিভেটর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App