×

সম্পাদকীয় ও মুক্তচিন্তা

বন্ধ হোক প্রশ্নপত্র ফাঁস

Icon

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কয়েক বছর ধরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর আসছে সংবাদমাধ্যমে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো জেঁকে বসেছে। কোনোভাবেই এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি প্রেসের কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা- অনেকেই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে এর আগে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সর্বশেষ পরীক্ষায় আবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষায় তিন ধাপে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রথম ধাপে জালিয়াতির অভিযোগে ৭৪ জন এবং তৃতীয় ধাপে একই অভিযোগে ১৩ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সব মিলিয়ে আটক ৮৭ জন। গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা চলাকালে উত্তরপত্র, ডিজিটাল ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন এবং রাজবাড়ীতে একজন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাজবাড়ীতে গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থী পরে আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের নিয়োগ পরীক্ষায়ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধায় ৩৭, রংপুরে ১৯ ও দিনাজপুরে ১৮ জনকে আটক করা হয়। ওই সময় তাদের কাছ থেকে ২৪টি মাস্টারকার্ড, ২০টি ব্লুটুথ, ১৭টি মোবাইল ফোনসেট, ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় শুধু রাজবাড়ী জেলা থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ১৩ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরিপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে তারা ১০-১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাস করানোর আশ্বাস দিত। আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস দেয়া হতো এবং তাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে এক-দুই লাখ টাকা জামানত নেয়া হতো। অবশিষ্ট টাকা চাকরি পাওয়ার পর পরিশোধ করবেন বলে চুক্তি করা হতো। শুধু অর্থের বিনিময়ে তারা যা খুশি তাই করতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনা আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, কারণ এর চাহিদা আছে। আর এই ফাঁসে যারা জড়িত, তারা আর্থিক দিক দিয়ে ব্যাপকভাবে লাভবান হন। ২০০১ সাল থেকে পরবর্তী ১৬ বছরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে ১০ বার। সিআইডি সম্প্রতি ২০২০ সালের প্রশ্ন ফাঁসের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এ ঘটনা জানতে পেরেছে। তারা মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৭ জনই চিকিৎসক। আর এই ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে ২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তারা পাস করে চিকিৎসকও হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নানারকম পদক্ষেপ নেয়া হলেও রোধ করা যাচ্ছে না প্রশ্নপত্র ফাঁস। প্রশ্ন ফাঁস প্রশ্ন তৈরি থেকে, ছাপা, পরিবহন এবং বিতরণ যে কোনো পর্যায়ে হতে পারে। তাই প্রতিটি পর্যায়ে সৎ এবং যোগ্য লোক থাকা দরকার। থাকা দরকার কঠোর মনিটরিং। শুধু সৎ হলেই চলবে না, দক্ষতাও থাকতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণাও থাকতে হবে। যেমন কম্পিউটারে প্রশ্ন তৈরি হলো, সেখান থেকে তা ডিলিট করলেই শেষ হয়ে যায় না। আসলে সেটা থেকে যায়। প্রিন্টারেও থেকে যায়। কোনো অনলাইন ডিভাইসেও থেকে যেতে পারে। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে দেখতে হবে প্রশ্নপত্র তৈরি এবং পরীক্ষার হলে পৌঁছানো পর্যন্ত এতে কারা থাকেন। তাদের শিক্ষাজীবন হতে শুরু করে আদর্শ, রাজনৈতিক কার্যকলাপ, এমনকি পারিবারিক ইতিহাসও ঘেঁটে দেখা দরকার। তাদের মধ্যে কেউ সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এমন করছে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। আবার এসব প্রশ্নপত্র যেখানে ছাপা হয়, সে প্রেসের কেউ এ কাজ করছে কিনা সেদিকেও কড়া নজর রাখতে হবে। আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App