মোটরসাইকেল বিক্রি সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : অর্থনৈতিক গতিমন্থরতা এবং ব্যয় ও বিক্রয়মূল্য অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে মোটরসাইকেলের বিক্রি। শিল্পসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়তে শুরু করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৪০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। মূল্যহ্রাস ও যাতায়াতকারীদের প্রয়োজনের কারণে এভাবে বিক্রি বেড়েছিল। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয়ভাবে বিক্রি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কমে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ইউনিটে নেমে এসেছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত কয়েক বছরে এ শিল্পে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু আর্থিকভাবে স্থিতিশীল থাকার জন্য যতটা প্রয়োজন, এখন তার অর্ধেকও বিক্রি হচ্ছে না।
মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা ২০-২৫ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বেড়েছে।
এদিকে ব্যবসা মন্দার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান খরচ, ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়া এবং সময়ে সময়ে বৈরী সরকারি পদক্ষেপ। বিপ্লব কুমার রায় বলেন, সবকিছুই এ খাতের জন্য সঙ্গে বৈরী হয়ে ওঠে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ডলারের দাম ছিল ৮৫-৮৬ টাকা, এখন তা প্রায় ১২০ টাকা। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল ও অন্যান্য উপাদানের আমদানি ব্যয়ও সরাসরি বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করলে শুল্ক কম দিতে হয়। এর সুবাদে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালে মোটরসাইকেলের দাম অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। কিন্তু টাকার মান পড়ে যাওয়ায় দাম আবার ২০১৬-১৭ সালের পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষ যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, সে সময় এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে কোম্পানিগুলোর আয় ব্যাপক কমেছে।
উত্তরা মোটরস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ক্রেডিট সেলের অফার দেয়ার পরও সারাদেশে ডিলাররা বিক্রি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে বাড়তি খরচের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া দিন দিন আরো কষ্টকর হয়ে উঠছে।
এদিকে গত কয়েক বছরে সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের ফলেও মোটরসাইকেলের বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হুট করেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কারো কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি না করতে নির্দেশ দিয়েছে। গাড়ি চালাতে শেখার জন্য যে বাহন দরকার, বিআরটিএকে তা বোঝানোর জন্য হিমশিম খেতে হয়েছিল মোটরসাইকেল শিল্পকে।
এছাড়া ঈদের সময় মহাসড়কে দুই চাকার গাড়ি নিষিদ্ধ করা, একটি দুর্ঘটনার পর পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা এবং শহরে মোটরসাইকেলের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখার নিয়মের মতো পদক্ষেপগুলো ব্যাপক সমালোচিত হয়। যদিও একপর্যায়ে বিগত সরকার সিদ্ধান্ত বদলায়। তবে এসব পদক্ষেপ মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
ঝুঁকিতে বিক্রেতারা : সংশ্লিষ্টরা জানান- গত দুই বছরে মোটরসাইকেলের দাম দ্রুত অনেকটা না বাড়লে বিক্রি এতটা কমত না। দেশের উচিত সামর্থ্যকে অগ্রাধিকার দেয়া। দেশ যন্ত্রাংশ উৎপাদনে আরো উন্নতি করতে পারলে মোটরসাইকেল সাশ্রয়ী মূল্য বিক্রি করা যেত। মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০১৮-এর লক্ষ্য স্থানীয় মূল্য সংযোজন বাড়িয়ে ধীরে ধীরে দাম আরো কমিয়ে আনা। কারণ স্থানীয় মূল্য সংযোজন বাড়ালে শুল্ক কম দিতে হয়। এ শিল্প যত বেশি মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি করবে, শুল্কের বোঝাও তত কম হবে।
এ সুবিধা হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকির মতো জাপানি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বাজাজ, হিরো, টিভিএসের মতো ভারতীয় ব্র্যান্ড, লিফানের মতো চীনা ব্র্যান্ড এবং স্থানীয় ব্র্যান্ড রানারকে স্থানীয় উৎপাদন কারখানা স্থাপনে আকৃষ্ট করেছে।
তবে অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চড়া সুদহার ও ডলার সংকট দীর্ঘায়িত হলে ব্যবসার মন্দা কাটবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে ২০২৭ সাল নাগাদ বার্ষিক ১০ লাখ ইউনিট বিক্রির জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।