×

অর্থ শিল্প বাণিজ্য

রেমিট্যান্সের খরা কাটছে

Icon

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 রেমিট্যান্সের খরা কাটছে

কাগজ প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে রেমিট্যান্স না পাঠাতে ডাক দেয়ার পর গত জুলাই থেকেই দেশে আসা প্রবাসী আয়ে ধস নামে। এখনো সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ইতোমধ্যে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু আগস্ট মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের মতো। আশা করা হয়েছিল যে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাবেন এবং তা দেশে চলমান ডলারসংকট উত্তরণ ও বিনিময় হার কমাতে কাজে লাগবে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ইন্টারনেট ও সংঘাতের কারণে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা দেন। এর প্রভাবে ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে। যার ধারাবাহিকতা ছিল চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও। তবে সরকার পতনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বিশেষ করে ইতালি থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স আসছে বলে জানা গেছে। গেল বছর সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৬৬ মিলিয়ন ইউরো পাঠালেও এবার সেই রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। ইতালিতে গেল সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার দ্বিগুণেরও বেশি।

মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ইতালির প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবাহ আগামীতে আরো বাড়বে। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রবাসীদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তারা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর মধ্যে প্রায় দেড় কোটি নাগরিক প্রবাসে বিভিন্ন ধরনের কর্মে নিয়োজিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্সপ্রবাহ অব্যাহত আছে। প্রবাসীরা পরিবারের কাছে অর্থ না পাঠিয়ে থাকছেন না। তবে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কম আসছে। কারণ রেমিট্যান্স পাঠাতে তারা ‘হুন্ডি’ বা অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার করছেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী আগস্টের ১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ৮৯০ মিলিয়ন বা ৮৯ কোটি মার্কিন ডলার। এ হিসাবে গড়ে দৈনিক আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ হলো ৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের মতো। আগস্টের ১৪ ও ১৫- এ দুই দিনে আরো ১২-১৩ কোটি ডলার যোগ হলে মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে আসা রেমিট্যান্সের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি।

কিন্তু মে ও জুন- এ দুই মাসেই দৈনিক গড় রেমিট্যান্সপ্রবাহ ছিল প্রায় ৯ কোটি ডলার। ওই দুই মাসেই বাড়তি রেমিট্যান্স আসে এবং তার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২২৫ ও ২৫৩ কোটি ডলার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় জুলাই মাসে। ওই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠাতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানানো হলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমতে শুরু করে। ফলে জুলাইয়ে আগের বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমে ৩ শতাংশের মতো। অথচ মে মাসের প্রথম ভাগে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর এক দফায় ৭ টাকা বৃদ্ধি করলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ছিল। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে ও বিনিময় হারের অস্থিরতা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে একটা বড় রকমের রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। এ ধরনের ট্রানজিশন বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে থাকে। এ সুযোগ নিয়ে বাড়তি মুনাফার আশায় ‘হুন্ডি’র নিয়ন্ত্রকরা ডলার আটকে বা ধরে রাখতে পারে। ব্যাংকের সরাসরি বৈদেশিক শাখার লোকজন কিংবা এক্সচেঞ্জ হাউসের মালিকরা ডলার সংগ্রহ করে তা গোপন রাখতে পারেন। কর্মকর্তারা আরো বলেন, সরকার পতনের পর এ ধরনের সুযোগ বন্ধ করতে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য পরবর্তী ৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে রিপোর্ট করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কেউ কেউ বলেছেন, হুন্ডি সব সময়ই ছিল। এ চক্র শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাসহ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও সক্রিয়। তার পরও আমরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পেয়ে থাকি। এর পরিমাণ সারাবছর একই ধারায় থাকে না। এটি কম-বেশি হতে পারে। আশার কথা হলো যে দুই বছর ধরে রেমিট্যান্সে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। গত বছর রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। এদিকে, বছরের প্রথম তিন মাসে ২৯ কোটি ১৩ লাখের বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ। ইতালিতে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ কোম্পানি গেল সপ্তাহের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। আগের সপ্তাহে যেখানে ১ কোটি ৭৭ লাখ রেমিট্যান্স পাঠানো হয়, চলতি সপ্তাহে সেখানে ৩ কোটি ৫৯ লাখ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে তারা। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ডামাডোল না থাকলে আগের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে চলতি বছর ইতালি থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর নতুন রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশিরা।

এর আগে গত জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও কুরবানি পরবর্তী মাস হওয়ায় প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়। জুলাই মাসে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

৯ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

৯ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

সীমান্ত হত্যা ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক জোরদারে বড় বাধা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সীমান্ত হত্যা ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক জোরদারে বড় বাধা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

শাহরিয়ার আলম ও দিলীপ আগরওয়ালার ব্যাংক হিসাব তলব

শাহরিয়ার আলম ও দিলীপ আগরওয়ালার ব্যাংক হিসাব তলব

র‌্যাবের গাড়ি থেকে আ’লীগ নেতাকে ‘ছিনিয়ে নিলো’ বিএনপি নেতারা

র‌্যাবের গাড়ি থেকে আ’লীগ নেতাকে ‘ছিনিয়ে নিলো’ বিএনপি নেতারা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App