পুঁজিবাজার চিত্র
একদিনে সূচক বাড়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : সরকার পতনের পর দেশের পুঁজিবাজারে একের পর এক উল্লম্ফন হচ্ছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩০০ পয়েন্টের ওপরে। ২০১৩ সালে ডিএসইএক্স চালুর পর এর আগে কখনো সূচকটি একদিনে এতটা বাড়েনি।
প্রধান মূল্যসূচক ইতিহাস সৃষ্টির দিনে ডিএসইতে ১৩১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। সেই সঙ্গে লেনদেনেও বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারির পর বাজারটিতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। তবে বাজারটিতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে হাসিনা সরকার পতনের পর লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসেই সূচকের উল্লম্ফন হলো।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হলে পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। তার আগেও নানা ইস্যুতে মন্দা চলছিল। প্রায় চার মাস ধরে বাজারে পতন চলছে। অর্থাৎ হাসিনা সরকারের শেষ সময়টা মোটেও ভালো যায়নি বিনিয়োগকারীদের জন্য।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় পুঁজিবাজারেও লেনদেন বন্ধ থাকে একাধিক দিন। তবে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের মুখে পড়ে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মঙ্গলবার দেশের সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারেও লেনদেন শুরু হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম কার্যদিবসেই উল্লম্ফন হয়। সেই সঙ্গে প্রায় এক মাস পর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। পরের কার্যদিবস বুধবারও পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা যায়।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। পুঁজিবাজারে লেনদেন চলার মধ্যেই দেশে এসে পৌঁছান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূসের দেশে আসা সূচকের উত্থান প্রবণতা যেন আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় দাপট দেখিয়েছে ১৩১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। লেনদেনের প্রায় সময়জুড়ে দিনের সর্বোচ্চ দামে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের বিপুল ক্রয়াদেশ আসে। বিপরীতে শূন্য হয়ে পড়ে বিক্রয়াদেশের ঘর। ১৩১ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরো শতাধিক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখায়। সব মিলিয়ে ২৬৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৫ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৩৫৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর সাতটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি চালু হয় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স। এরপর এ প্রথম সূচকটি একদিনে ৩০০ পয়েন্টের ওপরে বাড়ল। এর আগে ২০১৩ সালের ২ জুন সূচকটি ২৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ছিল। গতকালের এটিই একদিনে সূচকটি সর্বোচ্চ বাড়ার রেকর্ড ছিল।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক রেকর্ড সৃষ্টির দিনে অপর দুই সূচকেরও বড় উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩২ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৮৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোর ৬২ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে টেকনো ড্রাগস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, ওরিয়ন ফার্মা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৬১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৮৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১টির এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।