×

অর্থ শিল্প বাণিজ্য

সুনামগঞ্জ মধ্যনগরের চামরদানী গ্রাম

আলং থেকে বছরে আড়াই কোটি টাকার নৌকা বিক্রি

Icon

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলং থেকে বছরে আড়াই  কোটি টাকার নৌকা বিক্রি

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) থেকে : তিন ধাপের বন্যায় চামরদানীর আলংগুলো (নৌকা তৈরির কারখানা) বন্ধ থাকেনি। বরং চাহিদা বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতিতেই নৌকার কারিগর ও জোগালিদের ব্যস্ততা ছিল বেশি। সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী গ্রামে প্রত্যেক নৌকা কারিগরের বাড়িতে নৌকা তৈরির জন্য রয়েছে টিন বাঁশের ছাপটা ঘর।

নৌকা তৈরির এ কারখানাকে আলং বলা হয়। চামরদানী গ্রামে এ রকম আলং রয়েছে ১৯টি। প্রতিটি আলংয়ে কারিগরসহ ২ থেকে ১০ জন লোক কাজ করেন। বড় আলং থেকে প্রতিদিন একাধিক নৌকা তৈরি হয়। আকৃতি ভেদে নৌকা তৈরিতে সময় কমবেশি লাগে। বর্তমানে চামরদানী গ্রামের আলংগুলোতে নতুন নৌকা তৈরির যেমন ধুম পড়েছে আবার অনেকেই পুরনো নৌকাও মেরামত করতে নিয়ে আসছেন।

হাওরাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা হয়ে ওঠে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। এ কারণে জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই চামরদানী গ্রামে প্রতি বছর ১৫-২০টি আলং এ নৌকা তৈরির কাজ শুরু হয়। এবার আলং রয়েছে ১৯টি। চলতি বছরে তিন ধাপের বন্যায় গত বছরের চেয়ে নৌকা বেচা-বিক্রি কিছুটা বেশি, তাই ব্যস্ততাও গতবারের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

সরজমিন চামরদানী গ্রামে একাধিক আলং ঘুরে দেখা যায়- প্রতিটি আলংয়ে কারিগররা নৌকা তৈরিতে এখন বেশ ব্যস্ত। দিন-রাত নৌকা তৈরি করছেন তারা। স্থানীয় বংশীকুন্ডা কলেজে পড়েন যতন সরকার। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের আলংয়ে নৌকা তৈরির কাজ করেন বড় ভাই মানব সরকারের সঙ্গে।

মানব সরকার জানান, আমার পুঁজি কম। তাই দুই ভাই মিলে পরিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত শ্রমিক দরকার হয়। তবে তারা কাজের অনুপাতে মজুরি বেশি নেয়। দিন চুক্তি কাজ করে। সকালে আসে বিকালে চলে যায়। তাই দুই ভাই মিলে আলং চালিয়ে যাচ্ছি। কাজের চাপ থাকলে আমরা গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করি। মানব সরকার আরো জানান, দুজনে তিন দিনে ১২-১৪ হাত একটি নৌকা তৈরি করেন। খরচ হয় ৫-৭ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকায়।

নৌকা কিনতে চামরদানী গ্রামে এসেছেন উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শাহজাহান মিয়া। ভোরের কাগজকে তিনি জানান, চামরদানী গ্রামের নৌকা চাহিদা অনুযায়ী সুলভে কেনা যায়। তাই হাটে না গিয়ে সরাসরি গ্রামের আলংগুলোতে নৌকা দেখছেন, পছন্দ হলে কিনবেন।

তিনি বলেন, এখানকার নৌকার গুণগতমান অনেক ভালো। আর হাটে নৌকা কিনতে যে টাকা খাজনা দিতে হয়, সরাসরি আলং থেকে কিনলে তা দিতে হয় না। এতে দামেও সাশ্রয় হয়। তিনি ১২-১৪ হাত খিলুয়া নৌকা কিনবেন।

কারিগর কাঞ্চন সরকার জানান, চামরদানী গ্রামের তৈরি নৌকা দামের তুলনায় মান ভালো। চাহিদা অনুযায়ী নৌকার আকৃতি ও ক্রেতাদের পছন্দের কাঠ দিয়ে এখানে নৌকা তৈরি করা হয়। তাই আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার লোকজন চামরদানীর আলংয়ে নৌকা কিনতে আসেন। পাশের উপজেলা ধর্মপাশা, তাহিরপুর, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, বারহাট্টার লোকজন এখানকার নৌকা ব্যবহার করে থাকে।

নৌকা বেচাকেনায় হাটের ইজারাদারকে শতকরা ন্যূনতম ১৫ টাকা খাজনা দিতে হয়। এতে নৌকার দাম বেড়ে যায়। হাটের তুলনায় সুলভ মূল্যে রেডিমেট বা চাহিদামতো নৌকা কিনতে পাওয়া যায় বিধায় চামরদানী গ্রামের আলংগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠে বেচাকেনা। প্রতিদিন ছোট-বড় অসংখ্য নৌকা বেচাকেনা হয়। বছর ভেদে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার নৌকা বেচাকেনা হয় চামরদানী গ্রামের আলং থেকে।

তবে কারিগররা বলেন, কাঠসহ নৌকা তৈরির অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচও বেড়েছে। বেড়েছে জোগালি বা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি। কিন্তু সে তুলনায় নৌকার দাম খুব একটা বাড়েনি।

এছাড়া নিজস্ব পুঁজি না থাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে উপকরণ কিনতে হয়। ফলে তারা লাভবান হতে পারেন না। তবে সহজ শর্তে সরকারি ঋণ সহায়তা পেলে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করা যেত বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা ভোরের কাগজকে বলেন, চামরদানী গ্রামের নৌকা কারিগরদের জন্য আমরা সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছি। তাদের সরকারি ঋণ দেয়ার ব্যাপারটি ব্যাংক বা অন্যান্য ঋণ দানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান বিকৃতির প্রতিবাদ

‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান বিকৃতির প্রতিবাদ

পোড়া লাশ দাফনের পর জানা গেল রিফাত বেঁচে আছেন, অতপর...

পোড়া লাশ দাফনের পর জানা গেল রিফাত বেঁচে আছেন, অতপর...

টাকার বিছানায় ঘুমান দুর্নীতির প্রাণপুরুষ সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল

টাকার বিছানায় ঘুমান দুর্নীতির প্রাণপুরুষ সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল

এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও বিপুল টাকা

এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও বিপুল টাকা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App