বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
মানুষের হাতে নগদ টাকা বাড়ছে টানা ৭ মাস
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : গত এক বছরে আমানতের ওপর সুদহার প্রায় দ্বিগুণ হলেও মানুষের হাতে নগদ টাকা বা ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ গত ৭ মাস ধরে বাড়ছে। মূলত চলমান মুদ্রাস্ফীতির চাপে ব্যাংকে টাকা না রেখে বরং নিজের হাতেই নগদ টাকা রাখতে মানুষ স্বাছন্দ্যবোধ করছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মে মাস শেষে ব্যাংকের বাইরে (কারেন্সি আউটসাইড ব্যাংক) বা মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭১ লাখ কোটি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যার পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৪৬ লাখ কোটি টাকা।
এরপর থেকে প্রতি মাসে বেড়েই চলেছে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ। সে হিসাবে গত ৭ মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত মে মাসেই এ পরিমাণ ৬ হাজার ৩১০ কোটি টাকা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ করার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে তাদের সঞ্চয় কমছে। তাই ব্যাংকে আমানত বা ডিপোজিট সেভাবে করতে পারছে না। পাশাপাশি বেশকিছু ব্যাংক নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হওয়ায় অনেকেরই ব্যাংকে ডিপোজিট করার ক্ষেত্রে কিছুটা অনীহা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গেল মে মাসে দেশের মূল্যস্ফীতি সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ১৫ মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি।
ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ কেন বাড়ছে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, ব্যাংক খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘নো ইওর কাস্টমার’ (কেওয়াইসি) বা ‘ভোক্তাকে জানুন’ এবং অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) বা অর্থ পাচার বিরোধী নিয়মনীতিসহ বেশকিছু আইনকানুন করে দিয়েছে। ব্যাংকিং কাঠামো দিন দিন কঠিন হচ্ছে। এটি সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য ভালো হলেও অনেকেই এখন কালো টাকা ব্যাংকে জমা করছে না। নিয়ে আসলেও ধরা পড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এটিও ব্যাংকের বাইরে টাকা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। তবে ব্যাংকের বাইরে এত টাকা থাকা উদ্বেগের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, মে মাসে মোট আমানত ১৭ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা এপ্রিলের তুলনায় কিছুটা বেশি এবং আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি। এর মধ্যে টাইম ডিপোজিট বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ডিমান্ড ডিপোজিট বেড়েছে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সর্বোপরি এপ্রিলে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনেকেই এখন ব্যাংকে টাকা আমানত করার বদলে সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। বন্ডের সুদের হার ভালো, ব্যাংকগুলোর ডিপোজিট রেটের চেয়ে বেশি হওয়ায় অনেকেই বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। ব্যাংক খাতে আমানত কমার এটিও একটি কারণ হতে পারে। তবে সব ব্যাংকের অবস্থা একরকম নয়। কিছু ব্যাংকের বর্তমানে টার্গেট অনুযায়ী ডিপোজিট গ্রোথ না হলেও বেশ ভালো গ্রোথ হচ্ছে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সুদহার বেশি হওয়ার পাশাপাশি সরকারি বন্ডে টাকা রাখা ব্যাংকের তুলনায় বেশি নিরাপদ বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া ব্যাংক সুদের ওপর ট্যাক্স কাটা হয় বা ডিপোজিট লিমিটের ওপর আবগারি শুল্ক দিতে হয়; কিন্তু বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এমন খরচ নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমানতের ক্ষেত্রে সব ব্যাংকের চিত্র সমান নয়। ব্র্যাক ব্যাংকে আমানতের ইয়ার অন ইয়ার গ্রোথ হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কিছু ইসলামী ধারার ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি ধীরগতি হয়েছে। আবার অনেক ব্যাংকে গ্রাহকের আস্থার ঘাটতির কারণেও আমানত কমতে পারে। এর বাইরে বেশকিছু মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকায় মানুষের খরচও বেড়েছে। তারা বলেন, ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বাড়াতে এবং ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ টাকা কমাতে হলে নগদ লেনদেন কমাতে হবে। আমাদের এখন ডিজিটাল ব্যাংকিং বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। ক্যাশলেস ডিজিটাল সোসাইটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটিই সঠিক সময়।