উৎপাদন রেকর্ড ছাড়ালেও কমেনি লবণের দাম
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : দেশে অপরিশোধিত লবণের উৎপাদন বেড়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে চলতি মৌসুমে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দুই লাখ আট হাজার টন বেশি। তবে এ বাড়তি উৎপাদনের সুফল মিলছে না। চলতি মৌসুমে মাঠপর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ ৭ টাকা বিক্রি হলেও ভোক্তাপর্যায়ে মাঝারি মানের লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়।
দেশের মুদি দোকান ও সুপার শপগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোক্তাপর্য়ায়ে এখন ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ কেজিপ্রতি ৪২ টাকা, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ ২৫-৩০ টাকা ও সাধারণ লবণ ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। মৌসুমের শেষ দিন (গত ২৫ মে) পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন, যা গত ৬৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত বছরের তুলনায় ২ লাখ ৮ হাজার টন বেশি। গত (২০২২-২৩) মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন।
কৃষক ও বিসিকের তথ্য মতে, সম্প্রতি শেষ হওয়া মৌসুমে মাঠপর্য়ায়ে মণপ্রতি (৪০ কেজি) অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩০০ টাকায়, যা বর্তমানে ৩৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। সেই হিসাবে, মাঠপর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট দশমিক ৭৫ টাকার মধ্যে।
চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লবণ পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান লাল মিয়া সল্টের স্বত্বাধিকারী আসাদ আহমদ বলেন, কৃষকের কাছ থেকে অপরিশোধিত লবণ কিনে এনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে তা প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছে, যার কেজিপ্রতি দাম পড়ে ১০ টাকা। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিশোধন শেষে তা আমরা মিল গেটে ৯৭০-৯৮০ টাকা প্রতি বস্তা বিক্রি করছি, যা কেজিতে দাঁড়ায় ১২.২৫ পয়সা। আমাদের থেকে কিনে বিভিন্ন হাত বদলে তা খোলা বাজারে ১৫-২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
একই মাঠ থেকে ও একই দামে সংগ্রহ করা অপরিশোধিত লবণ মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধন শেষে ভোক্তাপর্য়ায়ে ২৫-৩০ টাকা এবং ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিল মালিকদের অভিযোগ, ক্রয় মূল্যের সঙ্গে পরিশোধন, আয়োডিন যোগ ও অন্যান্য খরচ যোগ করে ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে পরিশোধিত প্রতি কেজি লবণের সর্বোচ্চ বাজার দর হওয়ার কথা ২৫-৩০ টাকার মধ্যে। কিন্তু দেশে ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে লবণ প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা রয়েছে ছয়টি কোম্পানির। যে কারণে কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে।
ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে দেশে লবণ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, এসিআই, কনফিডেন্স, ফ্রেশ, তীর, মোল্লা ও মুসকান। যেসব কোম্পানির বাজারজাত করা প্রতি কেজি লবণ ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এস এ গ্রুপের (মুসকান লবণ) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মিল গেটে প্রতি কেজি অপরিশোধিত লবণ ১০ টাকায় কিনলেও পরিশোধন করতে প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ প্রসেস লস হয়। যে কারণে প্রতি কেজি লবণে প্রসেস লস হিসেবে ৭ টাকা যোগ হয়। এরপর প্রতি কেজি লবণে ৪ টাকা ইউটিলিটি ফি (গ্যাস), কেমিক্যাল, মেইনটেইনেন্স, স্টাফের বেতন ও প্যাকেজিং ফি হিসেবে ১২ টাকা যোগ হয়। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি লবণ পরিশোধন শেষে বাজারে পৌঁছাতে আমাদের খরচ হয় ২৯ টাকা, যা কোম্পানি ভেদে দোকানদারদের কাছে ৩৩-৩৬ টাকায় বিক্রি হয়। ভোক্তাপর্যায়ে এ লবণ ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি করেন দোকানদাররা।
লবণ চাষিরা জানান, গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহ কৃষিজ পণ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও লবণের জন্য আশীর্বাদ। এবারে তাপপ্রবাহ বাড়ায় দেশে লবণ মৌসুমে আবাদযোগ্য জমি এবং কৃষকের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজারের সাত উপজেলায়। এর মধ্যে শীর্ষে মহেশখালী উপজেলা।
তবে উপজেলার মাতারবাড়িতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে লবণ চাষ সীমিত হয়ে আসায় বিকল্প খুঁজছে বিসিক।