প্রণোদনা এখন ০.৫ শতাংশ থেকে কমে ০.৩ শতাংশ
তৈরি পোশাক খাতে বিপর্যয়ের শঙ্কা
৪৩ খাতের পণ্যে কমেছে নগদ প্রণোদনা
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের আওতায় আসবে। এ লক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকার ৫ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার প্রায় সব রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা কমিয়েছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক হলেও সুবিধাবঞ্চিতের তালিকায় এ খাতই শীর্ষে।
সম্প্রতি প্রণোদনা হ্রাসের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করেছে।
এত বলা হয়েছে, আর্থিক পরিমাণের দিক থেকে সর্বাধিক প্রণোদনা পাওয়া তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) জন্য বিশেষ প্রণোদনার হার ০.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৩ শতাংশ করা হয়েছে।
তবে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এখনই প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত ভালো হয়নি বলে মনে করছেন পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দুই দফায় প্রণোদনা কর্তনের ফলে আগামীতে রপ্তানি আয় আরো কমবে। নতুন অর্থবছরের প্রথমদিন অর্থাৎ গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে এ প্রজ্ঞাপন, যা ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে এতে ক্রাস্ট চামড়া রপ্তানিতে প্রণোদনা শূন্য শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ০.৬ শতাংশ করা হয়েছে। মাত্র একটি পণ্যেই তা বাড়ানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রণোদনা বাবদ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। তবে প্রণোদনার হার কমিয়ে দেয়ার কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রণোদনা খরচ কমে আসবে। প্রজ্ঞাপনে নতুন বাজারে রপ্তানিতে প্রণোদনা ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য খাতের জন্যও হ্রাসকৃত এ হার প্রযোজ্য হবে।
এটি কার্যকর হওয়ার আগে, সর্বোচ্চ প্রণোদনা হার ছিল কৃষিপণ্যে। যেমন আলু, প্রক্রিয়াজাত মাংসের মতো পণ্য রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ হারে দেয়া হতো। ফেব্রুয়ারির আগে এসব পণ্যে নগর প্রণোদনার হার ছিল ২০ শতাংশ। প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সরকার ৪৩টি রপ্তানি পণ্যে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নগদ প্রণোদনার সিংহভাগ বা ৬৫ শতাংশ পায় তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল (বস্ত্র) শিল্প।
এ ব্যাপারে নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশের রপ্তানির বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প এখন আইসিইউতে। সঠিক চিকিৎসা না পেলে একে লাইফ সাপোর্টে দিতে হবে। এ মুহূর্তে রপ্তানি প্রণোদনা কমানো মানে এ খাতকে গলাটিপে হত্যা করার সামিল।
তিনি বলেন, এখন প্রণোদনা হ্রাসের সময় না। এতে স্থানীয় স্পিনিং মিলসহ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ০.৩ শতাংশ নগদ প্রণোদনার জন্য আবেদন করতে প্রণোদনার তুলনায় বেশি খরচ পড়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরাসরি প্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের ওপর প্রণোদনা দেয়া হলে আমাদের হয়রানি কিছুটা হলেও কমবে।
বিকেএমইএর এ নেতা জানান, এখন আমাদের আমদানি খরচ আরো বাড়বে, কারণ প্রণোদনা হ্রাসের কারণে আমরা বাধ্য হয়ে কাঁচামাল আমদানি করব। প্রণোদনা এখন না কমিয়ে ২০২৫ বা ২০২৬ সালেও কমানো যেত বলেও মনে করেন তিনি।
রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে হাতেম বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে এবং একই সঙ্গে ব্যাংক লোনের সুদের হারও বেড়েছে। ফলে আমাদের খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে প্রণোদনা ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে। এখন আমরা রপ্তানিতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাব। আগের ইনসেনটিভ রেট অনুযায়ী আমরা অনেকগুলো অর্ডার নিয়েছি, ফলে আমাদের ক্ষতি হবে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অর্থনীতি এখন প্রতিকূল অবস্থায় রয়েছে, এর মধ্যে রপ্তানির সুবিধা কমানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। তিনি জানান, ২০২৯ সাল পর্যন্ত আমাদের এ প্রণোদনা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বস্ত্র খাতের পাঁচটি এইচ এস কোডের আওতায় রপ্তানি হওয়া পণ্যে কোনো নগদ সহায়তা দেয়া হবে না। এইচ এস কোডগুলো হলো- ৬১০৫, ৬১০৭, ৬১০৯, ৬১১০ এবং ৬২০৩।
বিজিএমইএর তথ্য মতে, নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করা এ পাঁচ ধরনের আইটেম থেকে ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে- যা গত অর্থবছরে হওয়া মোট রপ্তানির ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির মধ্যে যা ছিল ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ।