২০২৪-২৫ অর্থবছর
রাজস্ব বাড়াতে কৌশলী এনবিআর
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : শুরু হলো নতুন অর্থবছর ২০২৪-২৫। এবারের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। যদিও বিভিন্ন কারণে প্রায় এক দশকের বেশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩০ জুন সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত অর্থবছরে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও, এবার লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সংস্থাটি। নতুন অর্থবছরে ভ্যাট ও আয়কর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বড় অংশ আসবে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে।
বিগত অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে তা আরো ২৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়েছে এনবিআর। বিগত অর্থবছরে ১১ মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন অর্থবছরে ২০ খাতে ভ্যাট বাড়িয়ে অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হবে। এছাড়া মেট্রোরেলের টিকেটে ভ্যাট যুক্ত হতে পারে। সব মিলিয়ে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে না।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের সব স্তরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আসবে ৬ হাজার কোটি টাকার বাড়তি ভ্যাট। সিগারেটের তিন স্তরে সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে, সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে মোবাইল ফোন ও সেবার বিপরীতেও। মোবাইল ফোনের টকটাইম ও সিম বিক্রি থেকে বাড়তি ভ্যাট আসবে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। দেশীয় এসি ও ফ্রিজের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে এ খাত থেকে আসবে ৪০০ কোটি টাকার ভ্যাট। কোমল পানীয়, কার্বনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, আমসত্ত্বের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এসব থেকে আসবে বাড়তি ২০০ কোটি টাকা। বাড়ানো হয়েছে আইসক্রিমের শুল্ক, যা থেকে ৫০ কোটি টাকা আসবে।
এছাড়া নির্মাণসামগ্রী ইটের ভ্যাট ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা করা হয়েছে। এ খাত থেকে আসবে ৫০ কোটি টাকা। ট্যুর অপারেটর, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্ক, সিকিউরিটি সার্ভিস, লটারির টিকেট বিক্রয়কারী সেবাসহ এ ধরনের ১১ আইটেমে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়েছে। এসব থেকে আসবে বাড়তি ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকে জমা আবগারি শুল্কের বিভিন্ন স্তরে বাড়ানো হয়েছে কর। সেখান থেকে আসবে ২ হাজার কোটি টাকা। এভাবে বাড়তি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের ছক বানিয়েছে এনবিআর। এছাড়া মেট্রোরেল থেকেও বড় অঙ্কের ভ্যাট সংগ্রহের কথা ভাবা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন এলাকার বাড়ির মালিকরা পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নানা নাগরিক সুবিধা ভোগ করেন। কিন্তু বেশির ভাগেরই নেই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)। করযোগ্য আয় থাকার পরও আয়কর রিটার্ন জমা দেন না তারা। এর ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সিটি করপোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ২২ লাখ ৬১ হাজার। এনবিআর সংশ্লিষ্টদের দাবি, করজালের বাইরে আছেন অন্তত ৬০ শতাংশ বিদ্যুতের গ্রাহক। যাদের একটা বড় অংশই বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক। বাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও আয়কর রিটার্ন বা আয়কর দেন না তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কর ফাঁকি রোধে এবার বাড়তি মনোযোগ দিয়েছে এনবিআর। ফ্ল্যাট-বাড়ির মালিকদের ও সেবাগ্রহীতাদের করজালের আওতায় আনতে নতুন পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি।
আয়কর কর্মকর্তাদের দাবি, সেবা নিলেও গ্রাহকরা প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছেন। এসব গ্রাহকের মনিটরিং ও তাদের কাছ থেকে কর আদায় করতে এনবিআর তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ১৬টি সংস্থার সঙ্গে থাকবে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার হার কয়েক গুণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য আন্তঃসংযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। এর ফলে করজাল আরো বাড়বে এবং রাজস্ব আদায়ও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।