×

অর্থ শিল্প বাণিজ্য

এমডি আরিফ কাদরী

এসএমই ঋণে ঝুঁকছে ইউসিবি

Icon

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এসএমই ঋণে ঝুঁকছে ইউসিবি
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে। ৪১ বছরের এতিহ্যবাহী এ ব্যাংকের দেশের সব জেলা উপজেলায় শাখা রয়েছে, সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড এ ব্যাংকটি এসএমই, করপোরেট এবং প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকটি বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত আরিফ কাদরী। এর আগে তিনি ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা, আগামীর পদক্ষেপ নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন আরিফ কাদরী। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মরিয়ম সেঁজুতি- ভোরের কাগজ : অন্যান্য ব্যাংক থেকে ইউসিবি ব্যাংক আলাদ করা যাবে কীভাবে? আরিফ কাদরী : ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বয়স ৪০ পার হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোর চাইতে ইউসিবি ব্যাংকের সেবার মান অনেক উন্নত। গ্রাহকের চাহিদামতো সেবা দিচ্ছে ইউসিবি ব্যাংকের কর্মীরা। ইউসিবি একটি করপোরেট ব্যাংক হলেও প্রান্তিক মানুষকেও সমানভাবে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। করপোরেট ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি নতুন নতুন সেবার সংযোজন করা, গ্রাহকসেবার মান উন্নয়ন, নিরাপদ ও নির্ভুল সেবার নিশ্চয়তার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছে; এখানে গ্রিন ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের গ্রাহকরা কার্ড দিয়ে দেশজুড়ে এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। বর্তমানে ৭৩ হাজার ২০০ গ্রাহক ইউসিবির কার্ড ব্যবহার করছে। এছাড়া প্রান্তিক ও নি¤œ আয়ের মানুষকে সেবার আওতায় আনতে ইউসিবি ব্যাংকের চালু রয়েছে ২২৪টি শাখা, ১৪৬ উপশাখা ৪২৯টি এটিএম বুথ ও ২৪৮টি সিআরএম এবং ৬৩০ এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা। সামনে সেবা বাড়ানোর জন্য শাখা, উপশাখা ও এটিএম বুথ এবং এজেন্ট আরো বাড়ানো হবে। ভোরের কাগজ : বর্তমানে ব্যাংকের আমানত ও ঋণ বিতরণের পরিমাণ কত? আরিফ কাদরী : ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ হলো ৪৮ হাজার ১০২ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ হলো ৪৭ হজারা ১২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রিটেইল খাতে ২ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, এসএমইতে খাতে ১২ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা ও করপোরেট খাতে ৩১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা এবং তাকওয়া ইসলামিক খাতে ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ঋণ বিতরণের মধ্যে ছয় দশমিক ২৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ। ভোরের কাগজ : আমাদানি ও রপ্তানিতে আপনার ব্যাংক কেমন ভূমিকা রাখছে? আরিফ কাদরী : ব্যাংকের আমদানি হলো ১ হজার ৯৩৬ কোটি টাকা। রপ্তানির পরিমাণ হলো ১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। সামনে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে রপ্তানিমুখী পণ্যে ইউসিবি ব্যাংক বিনিয়োগে আগ্রহ বেশি। ভোরের কাগজ : নতুন করে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে কতটা সফল হচ্ছেন। আরিফ কাদরী : ইউসিবি সব সময় রিটেইল এবং এসএমই ঋণের প্রতি আগ্রহ ছিল। আর এখন সেটাকে আরো বাড়ানো হয়েছে। আগে ঋণের ৩০ শতাংশ ঋণ দেয়া হতো রিটেইল এবং এসএমই খাতে। এখন সেটাকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। সারাদেশে ৬০ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি খাতে ঋণ দিচ্ছে ইউসিবি ব্যাংক। এর মধ্যে ৪৫০ জন কৃষষকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ভোরের কাগজ : আপনারা ঋণের দেয়ার ক্ষেত্রে কাদের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন? আরিফ কাদরী : কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন সব খাতেই ঋণ দিচ্ছি। মূলত যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, অর্থনৈতিক অবদান আছে এবং কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। আমাদের বিতরণকৃত ঋণের সিংহভাগই শিল্প খাতে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএসএসএমই) খাতে ঋণ মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২০ শতাংশ। সেটাকে এবার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। তাই এখন রিটেইল এবং এসএমই খাতে ঋণের গুরুত্ব বেশি দিচ্ছি। ভোরের কাগজ : কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কত এবং বিতরণ করেছেন কত? আরিফ কাদরী : কৃষি ঋণের বরাবরই ইউসিবি ব্যাংক অনেক ব্যাংকের চেয়ে এগিয়ে থাকে। প্রতি বছরই কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ইউসিবি ব্যাংক। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৭৭৬ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমাদের এখন পর্যন্ত বিতরণের পরিমাণ ৯০০.৪৩ কোটি যা লক্ষ্যমাত্রার ১১৭ শতাংশ। ভোরের কাগজ : ডলার সংকট কাটাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? আরিফ কাদরী : ব্যাংকের আমদানি হলো ১ হাজার ৯৩৬ মিলিয়ন ডলার। রপ্তানির পরিমাণ হলো ১ হাজার ৮৮৫ মিলিয়ন। রেমিট্যান্সের পরিমাণ হলো ৩০৭ মিলিয়ন। তাই ডলারে তেমন সংকটে পড়তে হয়নি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের আয়ের অর্থ দিয়েই ডলার ব্যায়ের চাহিদার জোগান দিতে পেরেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খুলতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ভোরের কাগজ : ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? আরিফ কাদরী : খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি গ্রাহকের উন্নত সেবা নিশ্চিত করা। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইউসিবি ব্যাংকের অবদান আরো ত্বরান্বিত করা। ঋণ পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার জন্য ঋণ হিসাব পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে আরো জোরালো করা। ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত এবং বিধি সহজতর করার জন্য সঠিক এবং সময়োপযোগী তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (এমআইএস) নিশ্চিত করা। বড় খেলাপি ঋণ সম্পূর্ণ সমন্বয়ের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। ঋণ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাকে আরো বৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপের সূচনা করা। এছাড়া রিটেইল, এসএমই এবং কার্ড বিভাগ উচ্চ ফোকাস পাবে এবং সেগমেন্টগুলোর বৃদ্ধি করপোরেট বিভাগে বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হবে। ভোরের কাগজ : ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে? আরিফ কাদরী : ব্যাংক খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে ব্যাংক খাতে আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি মুনাফা অর্জন এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে সাড়ে আট শতাংশের বেশি মুনাফা দিয়ে। ঋণ বিতরণ করতে হচ্ছে সাড়ে দশ শতাংশে। ফলে মুনাফা ও আমানত সংগ্রহ ব্যাংক খাতে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমার মতে, ঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া ভালো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App