রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়ক এখন নিত্যদিনের তীব্র যানজট লেগেই থাকে। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণের। শত শত মালবাহী গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ছে। আটকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল। আটকা পড়ছে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। দুই মহাসড়কের প্রায় ১৫ স্পটে নেই ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও সড়ক নির্মাণকাজের কারণে সড়কগুলো ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব ভাঙা সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে। এতে সড়কের একপাশ বন্ধ হয়ে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রূপসী, বরপা কয়েকটি বাস স্টেশনে শিক্ষার্থীদের যানজট নিরসনে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড, যাত্রামুড়া, বরাব, রূপসী, বরপা, গোলাকান্দাইল, ভুলতা এবং এশিয়ান হাইওয়ের গোলাকান্দাইল, কোশাব, কালাদি, চাঁন টেক্সটাইল, জিন্দা, লালমাটি, কাঞ্চন টোলপ্লাজা, কালাদি রূপসী সড়কের ত্রিশকাহিনা, মুড়াপাড়া, দড়িকান্দি, মুড়াপাড়া শীতলক্ষ্যা ব্রিজে এ যানজট দেখা যায়।

গাড়িচালক, যাত্রী সাধারণ, পথচারী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রূপগঞ্জ একটি গুরুত্বপুর্ণ উপজেলা। এখানে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে।

এসব শিল্প কারখানায় কয়েক লাখ মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক। আর এ দুই মহাসড়কে দেশের সব জেলার মালবাহী যানাবাহন ও বাসে যাত্রী সাধারণ চলাফেরা করে থাকেন। ওই দুই মহাসড়কেরই প্রশস্থকরণ ও নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর থেকে ১৫টি স্পটে দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ নেই। বেশ কিছুদিন ছাত্রসমাজ ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া এখনো বেশকিছু স্থানে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ বাহিনীকে যার যার কর্মস্থলে যোগদান করার নির্দেশনা থাকলেও যানজট নিরসনে রূপগঞ্জের মহাসড়ক দুটির ১৫ স্পটে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। পুলিশবিহীন, সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ চলামান, নিয়ম ভঙ্গ করে যানাবাহন চলাচল, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, কাঞ্চন টোলপ্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতি ও বাকবিতণ্ডাসহ নানা কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে নিত্যদিন তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

অপরদিকে, কালাদি-রূপসী সড়কেও দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে। মুড়াপাড়া শীতলক্ষ্যা ব্রিজসংলগ্ন সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আটকে পড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কারণে বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকরা পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। এসব যানজটে আটকে পড়ে অনেকেই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে যানজটের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিদেশগামী যাত্রীরা এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক ব্যবহার করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সময়মতো পৌঁছতে পারছেন না। সিলেট থেকে আসা গাজীপুরগামী মালবাহী ট্রাকচালক আলী আকবর বলেন, গোলাকান্দাইল থেকে কাঞ্চন টোলপ্লাজায় আসতে সময় লেগেছে ৪ ঘণ্টা। এখনো যানজটে আটকা পড়ে আছি। কখন গাজীপুর পৌঁছতে পারব জানি না।

বগুড়া থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রাকচালক আব্দুস সালাম বলেন, মালবাহী গাড়ি নিয়ে চলতে গিয়ে আমরা আতঙ্কে থাকি। সড়কে নেই হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তির শেষ নেই। আমাদের গাড়ির চালকরা অনেকেই ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বিশ্বরোড এলাকার শ্রমিক আমেনা বেগম বলেন, প্রতিদিন এখন যানজট লেগে থাকে। এ জন্য এখন পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলে যাই। প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা অতিক্রম করতে অবশ্য দেড় ঘণ্টা আগে রওনা দিতে হয়। এতে করে কষ্ট বাড়ে।

ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম বলেন, স্বল্প পুলিশ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এখনো সব পুলিশ আসেনি। এছাড়া সব জায়গায় এখন যানজট। আমরা যানজট নিরসনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের ইনচার্জ শরফুদ্দিন বলেন, তারাব এলাকার যানজট নিরসন করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এখন কাঁচপুর-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট রয়েছে। বর্তমানে ওই যানজট নিরসনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।