সিংগাইর
প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে উত্তপ্ত ৪ বিদ্যালয়
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মাসুম বাদশাহ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) থেকে : নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সিংগাইর উপজেলার ৪টি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগে দাবিতে মাববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। আর এমন পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার, নৈতিকতা ও মানবতাবোধ নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা তাদের বিরুদ্ধে অনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশ করার না শর্তে অভিযুক্ত একাধিক প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছর শাসনামলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে সভাপতি ছিলেন তাদের দলীয় মনোনীত ব্যক্তি। বিভিন্ন কারণে প্রধান শিক্ষকরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কথা শুনতে বাধ্য হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য আমরা (প্রধান শিক্ষকরা) দায়ী না। তারা আরো বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত রবিবার (২৫ আগস্ট) রায়দক্ষিণ কোহিনুর মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মকবুল হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় রবিনসহ ২০-২৫ জনের নামে মামলা করেন ওই স্কুলের আরেক শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন। মামলায় রবিনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে ১৯ আগস্ট জামিরত্তা সত্য গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল আলমের পদত্যাগ দাবিতে ৮ দফা দাবির লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন তালেবপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কোহিনুর ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এছাড়া গত ১১ আগস্ট ধল্লা ইউনিয়ন কাউন্সিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদকে বিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে এসব ঘটনায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। অভিভাবকরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম হান্নান বলেন, ইতোমধ্যে তালেবপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। রায় দক্ষিণ স্কুলে মারামারি হয়েছে। সেখানে প্রধান শিক্ষক স্কুলে যাচ্ছেন না। ধল্লা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলে না যেতে পেরে ইউএনও স্যার ও আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জামিরত্তা স্কুলের বর্তমান পরিবেশ শান্ত রয়েছে। অতি দ্রুত স্কুলগুলোর পরিবেশ শান্ত হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে হবে। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত করা যাবে না। শিক্ষাঙ্গনে ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে। কারও বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পদত্যাগে বাধ্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে। তাদের বলপূর্বক পদত্যাগের সুযোগে নেই।