নিচু জায়গায় ভবন নির্মাণ
প্রতি বর্ষায় ডুবে যায় স্কুল দুমাস পাঠদান বন্ধ
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) থেকে : মধ্যনগর উপজেলার আলমপুর দোয়াদুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্বাভাবিক বর্ষার জলেই প্লাবিত হয়। এতে প্রতি বছর বর্ষায় ছয় মাসের মধ্যে কমপক্ষে দেড়-দুই মাস ব্যাহত হয় পাঠদান কার্যক্রম।
মধ্যনগর উপজেলা আবারো দ্বিতীয় দফায় বন্যাকবলিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটির প্রায় ৬০ ভাগ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ও আসবাব পানিতে ভাসছে। এ অবস্থায় বন্ধ পাঠদান কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে এটি জানাতে পারেননি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা কোনো অভিভাবক।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার বলে, বর্ষাকালে বেশির ভাগ সময় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানিতে প্লাবিত হওয়ায় আমরা ক্লাস করতে পারি না।
চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটি নিচু জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। অতি বর্ষণে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় বর্ষার ছয় মাসের মধ্যে গড়ে দেড়-দুই মাস বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হয়। তিনি আরো বলেন, বর্ষাকালীন পানির স্বাভাবিক লেভেল থেকে উঁচু করে ভবনটি নির্মাণ করা উচিত ছিল।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বিদ্যালয়বিহীন ১৫০০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করে। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সাবেক ইউপি সদস্য দোয়াদুর রহমানের দানকৃত ৩৩ শতক ভূমিতে বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি নিচু জমিতে হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আরব আলী শ্রেণিকক্ষ জলমগ্ন হয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি নিচু এলাকায় নির্মিত হয়েছে। সাধারণ বর্ষায় শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্ভব হয় না। বিকল্প পাঠদানেরও ব্যবস্থা নেই। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন বিষয়ে এলজিইডির এক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ১২০ জন পূর্ণ করে তাকে জানানোর জন্য বলেছেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন ৪ জন। বিদ্যালয়ের সভাপতি দেবল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, ওয়াটার লেভেল পরীক্ষা না করে ভবনটি নির্মাণ করার কারণে প্রতি বছর বর্ষার পানিতে বিদ্যালয়টি তলিয়ে যায়। এতে বিদ্যালয়ের আসবাব ও পাঠদানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, আলমপুর দোয়াদুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৯ সালে নির্মিত হয়েছে। এটি নতুন ভবন বিধায় দ্বিতীয় তলা সম্প্রসারণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন বলেন, আগে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে বিদ্যালয় ভবনটিতে দোতলা সম্প্রসারণের প্রস্তাব পাঠাতে হবে। তখন আমরা আমাদের বিভাগের কার্যক্রম শুরু করব। তবে ওই বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি অবগত আছি।