ডিসি-এসপির কাছে অভিযোগ
সুনামগঞ্জে বালু-পাথরবাহী নৌযানে চাঁদাবাজি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ/রাহাদ হাসান মুন্না, সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুর থেকে : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীপথে বালু-পাথর পরিবহনের সময় জেলার চারটি স্থানে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার জাকির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন বালু ব্যবসায়ী, নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, এসবের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত থাকার ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এ বিষয়ে অনেকটা উদাসীন। জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদনে বলা হয়েছে, যাদুকাটা নদীর বালু ও আমদানি করা পাথর ব্যবসায়ী ও নৌকার মালিকেরা দীর্ঘদিন থেকে নৌকায় সারাদেশে বালু ও পাথর সরবরাহ করে আসছেন। কিন্তু এ বালু-পাথর পরিবহনে পথে পথে টোলের নামে চাঁদা আদায় হচ্ছে। চাহিদা মতো টাকা না দিলে নৌকার মালিক ও শ্রমিকদের নির্যাতন করা হয়।
ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, চাঁদাবাজির কারণে আমরা ব্যবসায়ী, শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সবার পক্ষ থেকেই লিখিত আবেদন করেছি। আমরা চাই এই অন্যায় বন্ধ হোক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর ফাজিলপুর বালুমহাল এলাকা থেকে বালু-পাথর নদীপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। এসব পণ্য পরিবহনে ছোট-বড় নৌকা ও বাল্কহেড ব্যবহৃত হয়। এসব নৌযান থেকে তাহিরপুর উপজেলার ঘাগড়া-পাঠানপাড়াঘাট, আনোয়ারপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর এবং জামালগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর এলাকায় টোল ও খাস আদায়ের নামে নৌযান থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ফতেপুর ও দুর্লভপুর ঘাটে কোনো পণ্য উঠানামা না করলেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ দুটি ঘাট ইজারা দিয়েছে। এসব ঘাটে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ঘনফুট বালুর জন্য ২৫ পয়সা টোল আদায় করার কথা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে এক টাকা করে। আবার আনোয়ারপুর এলাকার ঘাটে খাস আদায় করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ভূমি অফিসের লোকজনের খাস আদায় করার কথা থাকলেও এখানে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন টাকা আদায় করছেন। ঘাগড়া এলাকাতেও একই অবস্থা।
আনোয়ারপুর ও ঘাগড়া এলাকায় আগে প্রতি ঘনফুট বালুতে ২০ পয়সা আদায় করা হতো। এরপর উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ছোট নৌকা থেকে ১০০ টাকা, মাঝারি নৌকা থেকে ৩০০ টাকা এবং বড় নৌকা থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখন জোর করে নৌকাপ্রতি ৩ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে নৌকা আটকে রাখা হয়, করা হয় শ্রমিকদের মারধর। এ চাঁদাবাজির প্রতিবাদে গত শনিবার যাদুকাটা নদীর মিয়ারচর এলাকায় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা মানববন্ধন করেন। এর পরেরদিন প্রতিবাদ সভা হয়েছে জামালগঞ্জে।
বাদাঘাট স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সদস্য কামাল মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে বালু-পাথর পরিবহনে এ চারটি ঘাটে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়। এ চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে ব্যবসায়ীরা সুনামগঞ্জ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
মিয়ারচর বালু-পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গণি মিয়া বলেন, আমরা অসহায়। ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হচ্ছে। কোনো নিয়মনীতি নেই। যারা এসব করছে, তারা এমপির লোক। তিনি বললেই এসব বন্ধ হবে।
ফাজিলপুর বালুমহালের সাবেক ইজারাদার সেলিম আহমদ বলেন, এখানে দুটি ঘাট সম্পূর্ণ অবৈধ। এখানে কোনো পণ্য উঠানামা করে না। আরেকটি ঘাটে নিয়ম অনুযায়ী খাস আদায় হচ্ছে না। এ চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়ী, শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ জন্য প্রশাসন ও পুলিশকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার বলেন, আমি জনগণের সঙ্গে আছি। পরিষ্কারভাবে প্রশাসন ও পুলিশকে বলেছি যে বা যারাই বাড়তি টাকা নেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। আমি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে নেই। আমি বলেছি, এখন ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব প্রশাসন ও পুলিশের।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, সরকারের নিয়মের বাইরে কোথাও কেউ টাকা আদায় করতে পারবে না। কয়েকদিন পূর্বে এ জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।