×

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ডেমরার সেই বাসে অগ্নিসংযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ডেমরার সেই বাসে অগ্নিসংযোগ
  • ঘুমন্ত হেলপারকে পুড়িয়ে হত্যা

রাজধানীর ডেমরায় অছিম পরিবহনে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত হেল্পারকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তারা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মো. সাহেদ আহমেদ এবং মনির মুন্সির ব্যক্তিগত গাড়িচালক বিএনপিকর্মী মাহাবুবুর রহমান সোহাগ। বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যে আগুন দেয়ার সময় ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিটিটিসি বলছে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। তবে ওই শীর্ষ নেতাদের নাম প্রকাশ করেনি সংস্থাটি। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটান বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

পরদিন ২৯ অক্টোবর ভোরে ডেমরার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ডে রাখা অছিম পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মো. নাইম ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যান এবং অপর হেলপার মো. রবিউল গুরুতর দগ্ধ হন। এ ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি মামলা হয়। সিটিটিসি এ মামলার তদন্তে নেমে প্রথমেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি শনাক্ত করা হয়। গাড়িটি সেদিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই গাড়ির সূত্র ধরে মূল অগ্নিসংযোগকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ি ও অগ্নিসংযোগের পেট্রোল নেয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। 

অতিরিক্ত কমিশনার আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান ২৮ অক্টোবরের ধারাবাহিকতা এবং তাদের এই নাশকতা অব্যাহত রাখার জন্য মনির মুন্সি তার নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পান। নির্দেশনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নাশকতার মাত্রা আরো বাড়ানো এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটানো যাতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরই অংশ হিসেবে তিনি বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেন। তিনি নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য তার অপর সহযোগী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেন। তারা দুজন মিলে একটি পরিকল্পনা করেন, তারা স্থির করেন এমন একটি ঘটনা ঘটানো হবে যাতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডেমরার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কয়েকবার গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে রেকি করেন এবং দেখতে থাকেন কোন জায়গা সিসি ক্যামেরার আওতামুক্ত। পরে তারা কাক্সিক্ষত টার্গেট পেয়ে বড়ভাঙ্গা মার্কেটে চলে যান। সেখান থেকে একটি মোটরসাইকেল থেকে তারা ২ লিটার পেট্রোল নেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক করা অছিম পরিবহনের গাড়ির কাছে যান। সেখানে একটি গাড়ির চালকের সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে পেট্রোল ঢেলে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। 

নিমেষেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। সিটিটিসি প্রধান বলেন, মনির মুন্সি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। দলে আরো বড় পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন তিনি। ঘটনার নির্দেশদাতাদের শনাক্ত করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্দেশদাতাদের নাম আমরা পেয়েছি। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের বিষয়ে এখনই কোনো তথ্য বলব না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App