×

চাপা আতঙ্ক, উত্তেজনায় মধুমতী তীরের পঞ্চপল্লী

Icon

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য, মধুখালী (ফরিদপুর) থেকে

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাপা আতঙ্ক, উত্তেজনায় মধুমতী তীরের পঞ্চপল্লী
 কোথাও এক দুজন, আবার কোথাও চার পাঁচজন মধ্যবয়সি নারীর জটলা। কেউ গালে হাত দিয়ে বসে আছেন, আবার কেউ শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন। বাড়ির পর বাড়ি খাঁ খাঁ করছে। কোনো পুরুষ মানুষ নেই, নেই সন্তানরাও। উঠানের কোনে কোথাও হাঁস-মোরগ আবার কোথাও গরু বেঁধে রাখা। বেশির ভাগ ঘরের সদর দরজায় তালা ঝুলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ওই জনপদটির চিত্র এমনই। পুরো এলাকা থমকে আছে। 

গতকাল শুক্রবার মধুমতী নদীর তীর ধরে ফরিদুপরের মধুখালী উপজেলার পঞ্চপল্লী গ্রামে সরজমিন এই চিত্র ধরা পড়ে। সেখানে যেতে মোড়ে মোড়ে পুলিশ, এপিবিএন এবং বিজিবি সদস্যরা ছাড়া গ্রামে আর কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামটি ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলার সীমান্ত অঞ্চল। 

সরজমিন দেখা গেছে, আগুন লাগা মন্দিরটি ছোট আকৃতির এবং এর চারদিকে দেয়াল আর উপরে চৌচালা টিন। আর সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকানো। ওই মন্দির লাগোয়া পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণের জন্য পাশেই কয়েকদিন ধরে কাজ করছিলেন একদল শ্রমিক, যাদের বাড়িঘর অন্য এলাকায়। পুরো এলাকাটিতেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন এবং আশপাশে তেমন কোনো মুসলিম বসতি নেই। এই বিদ্যালয় এবং মন্দিরকে ঘিরেই গত ১৮ এপ্রিল ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। সেদিন সন্ধ্যার পর প্রতিমায় আগুনের খবর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে পড়লে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। 

অন্যদিকে তখন মন্দিরের পাশে স্কুলে ছিলেন নির্মাণশ্রমিকরা। সেখানে চার জন নির্মাণশ্রমিক, একজন রড মিস্ত্রি, একজন শ্রমিক সর্দার এবং আরেকজন নসিমন চালক ছিলেন। মন্দিরে কালি প্রতিমায় আগুন দেয়াকে কেন্দ্র করে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নির্মাণশ্রমিক দুই সহোদর কিশোরকে। এসময় আহত হয় আরো ২ জন। মন্দিরের প্রতিমায় আগুন লাগার ঘটনা এবং পিটিয়ে শ্রমিকদের হত্যার পর জল গড়িয়েছে বহুদূর। পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। ভয়ে গ্রাম ছাড়েন সব পুরুষ এবং তাদের সন্তানরা। 

জানতে চাইলে ফরিদপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, পঞ্চপল্লীর মন্দিরে আগুন, দুই নির্মাণশ্রমিককে হত্যা এবং সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ জন। পিটিয়ে হত্যার আগে মন্দিরের প্রতিমার শরীরে আগুন দেয়া হয়েছিল- সেই আগুন কারা দিল এবং কেন দিল এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার জানান, আগুন কারা দিল এবং কেন দিল তার তদন্ত আমরা শুরু করেছি। কিন্তু কোনো প্রমাণ পাচ্ছি না। যার কাছেই বিষয়টি জানতে চাইছি তিনিই বলছেন, আমরা শুনেছি, দেখেছি। তবু আমরা তদন্তে আছি। নিশ্চয়ই তদন্তে বের হয়ে আসবে। 

তবে পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, মন্দিরের প্রতিমায় আগুনের সূত্রপাত জানার চেয়েও কারা নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে মারলেন সেই তথ্যটি বের করতে পুলিশ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তবু মন্দিরে কালি প্রতিমায় কারা আগুন লাগলো? সেই ঘটনায় কারা জড়িত? আগুনের পর হাজার হাজার মানুষই বা এত অল্প সময়ে কীভাবে সেখানে জড়ো হলো? কারা উত্তেজিত হয়ে দুই শ্রমিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করল- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরজমিনে যাওয়া হয় ফরিদপুরের পঞ্চপল্লী গ্রামে। 

কী ঘটেছিল ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় : কৃষ্ণনগর এলাকায় এক বটবৃক্ষের এক পাশে পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্যপাশে বারোয়ারি কালি মন্দির। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বৃদ্ধ নারী জানান, দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে এই মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে আসছে মন্দিরের পাশেই থাকা প্রভাস মণ্ডল ও তপতী মণ্ডলের পরিবার। পারিবারিক ঐতিহ্যের খাতিরে সেখানে মাঝে মাঝে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাতে যেতেন প্রভাস মন্ডল ও তপতী মণ্ডলের দ্বাদশ শ্রেণিপড়ুয়া তৃষা মণ্ডল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায়ও তিনি সেখানে প্রদীপ জ্বালাতে যান। প্রদীপ জ্বালানোর সময় ওই বিদ্যালয়ে শ্রমিকের কাজ করা কয়েকজন তৃষাকে উত্ত্যক্ত করে কিছু কথা বলে।

 এই ঘটনা নিয়ে তৃষার মা তপতী মণ্ডল এবং বাবা প্রভাস মণ্ডলের সঙ্গে শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর তারা বাসায় চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর তপতী আবারও মন্দিরে যান ঘুঁটে (গোবর দিয়ে তৈরি একপ্রকার লাকড়ি) আনতে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান শ্রমিকদের মধ্যে একজন লাইটার দিয়ে কালি মূর্তির শাড়িতে আগুন দিয়ে মন্দির থেকে নেমে যাচ্ছে। 

এসময় তিনি চিৎকার দিলে বাড়ি থেকে তার স্বামী প্রভাসসহ প্রতিবেশি আরো কয়েকজন মন্দিরে যান। প্রভাস এবং তপতী নিজেরাই মূর্তির আগুন নেভান। আগুন নিভিয়ে দুধ এনে কালি মূর্তির উপরে ঢালেন।  তবে তপতী মণ্ডল এসব কথা অস্বীকার করে বলেছেন, গ্রামের যিনি এসব কথা বলেছেন- তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। মেয়ে নয়, সেদিন সন্ধ্যাবাতি আমিই দিয়েছিলাম। শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে কোনো কথা কাটাকাটি হয়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন মধ্যবয়স্ক নারী জানান, সন্ধ্যাবেলা আমি গরুর ঘাস নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় দেখেছি তপতীর মেয়ে সন্ধ্যাবাতি দিয়ে যাচ্ছে। শুধু এদিন নয়, তপতীর মেয়ে মাঝে মাঝে সন্ধ্যাবাতি দিতে আসত। আমি তপতীকে বলেছি, মেয়েকে সন্ধ্যাবেলা একা মন্দিরে পাঠানো ঠিক নয়। সেদিনও মেয়ে সন্ধ্যাবাতি দিয়ে যাওয়ার পর চিৎকার শুরু হয়। এরপর আমিসহ মন্দিরের আশপাশের আরো কয়েকটি বাড়ির ১০-১২ জন নারী পুরুষ এসে হাজির হই। তখন কয়েকজন জড়ো হওয়ার পর একজন শ্রমিক বলছিল, আমরা আগুন লাগাইনি। আবার কয়েকজন বলছিল, যদি লাগাই তাহলে কি করবেন। এই নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকলে শ্রমিকরা বিদ্যালয়ের সামনে থাকা বিদ্যালয়ের কাজের জন্য রড নিয়ে আসা নসিমন দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু নসিমনটি চালু না হওয়ায় তারা তৎক্ষণাৎ সেই জায়গা ত্যাগ করতে পারেননি। 

এরমধ্যে গ্রামের আরো কয়েকজন মানুষ এবং স্থানীয় চৌকিদার এসে হাজির হন। এরপর চৌকিদার স্থানীয় ইউপি মেম্বার অজিত কুমার বিশ্বাসকে ঘটনা জানালে তিনিও কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসে। তবে এর মধ্যেই মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার হিন্দু লোকজন ঘটনাস্থলে চলে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে অজিত শ্রমিকদের বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে রাখেন। 

পরে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লিংকন বিশ্বাস ঘটনাস্থলে আসেন। তখন উত্তেজিত জনতা ‘ধর ধর’ বলে ইটপাটকেল, রড, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে রুমের দরজা জানালা ভাঙতে শুরু করে। পরে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে অজিত ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামানকে ফোনে ডেকে আনেন। চেয়ারম্যান কক্ষের ভেতরে যান। গতকাল চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বারকে কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা পলাতক। তবে এই ঘটনায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রমিকদের জেরা করার এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান তাদের মারধর করে মন্দিরে আগুন দেয়ার কারণ জানতে চান। কিন্তু চেয়ারম্যান মার শুরু করার পরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উত্তেজিত জনতা মেম্বার এবং চেয়ারম্যানের কথা পাত্তা না দিয়ে ওই শ্রমিকদের মারধর শুরু করেন। 

এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে চেয়ারম্যান শ্রেণিকক্ষ থেকে বাইরে চলে এসে থানায় ফোন করেন। কিছু সময় পর মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। এসময় উত্তেজিত জনতা তাদেরও অবরুদ্ধ করে। পরে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য শাখার সদস্যরা এসে রাত ১১টার পর রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে স্থানীয়দের ছত্রভঙ্গ করে দেন। ততক্ষণে দুই নির্মাণশ্রমিক মারা যান। 

হাজার হাজার জনতা কীভাবে জড়ো হলো : গ্রামের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ এপ্রিল ওই ঘটনার শুরু সন্ধ্যা ৭টার দিকে। প্রথমে কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরমধ্যে কয়েকজন মোবাইলে পোড়া মূর্তির ছবি তুলে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। আশপাশের সব গ্রামের লোকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় খুব সহজেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও দিনের কাজ শেষে কয়েক গ্রামের মানুষ স্থানীয় বাজারে আড্ডা দেয়। কৃষ্ণনগর এলাকার যেসব লোকজন বাজারে উপস্থিত ছিল তাদের মাধ্যমে অন্য গ্রামের লোকজনের মধ্যেও বিষয়টি জানাজানি হয়। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজার হাজার লোকজন ওই মন্দিরের সামনে চলে আসেন। 

স্থানীয়রা জানায়, এই ভিড়কে একত্রিত করে কয়েকজন উগ্র লোক। তারাই অন্যদের উত্তেজিত করে শ্রমিকদের ওপর এই মর্মান্তিক হামলা চালায়। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও এই হামলায় অংশ নেয়। হামলায় দুই শ্রমিক মারা যাওয়ায় তিনটি মামলা হয়। মামলায় পুরো গ্রাম বর্তমানে পুরুষশূন্য।

জানতে চাইলে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ভোরের কাগজকে বলেন, এটি পরিকল্পিত নাকি হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা তা তদন্ত শেষ না হলে বোঝা যাবে না। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘উদ্বেগ ও আতঙ্ক’ : মন্দিরে আগুন এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এক সপ্তাহ পর এসেও এলাকায় উত্তেজনা পুরোপুরি প্রশমিত হতে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা বলেছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘উদ্বেগ ও আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত বুধবার থেকে ফরিদপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জ থেকে এক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আছে এপিবিএনের সদস্যরাও। ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ফরিদপুর সদরসহ মধুখালী উপজেলার বালিয়াকান্দি পঞ্চপল্লীর কাছে ও বাঘাটে বাজার এলাকায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে তারা টহল পরিচালনা করছে। 

মধুখালীর বাঘাট বাজারে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টাঙ্গাইল পুলিশের এসআই মো. জাকিরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে মুসলিমরা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। তারা নামাজের পরপরই মিছিল নিয়ে পঞ্চপল্লী গ্রামে যাওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকায় কোনো ঘটনা ছাড়াই দিন পার হয়েছে। প্রকাশ্যে উত্তেজনা না থাকলেও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের ‘চাপা ক্ষোভ’ বিরাজ করছে। অন্যদিকে, হিন্দুরা আছেন অন্য ধরনের আতঙ্কে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেছে- সে কথা বলা যাবে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে কোনো ঘটনাপ্রবাহ ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যাতে কোনো ঘাটতি তৈরি না হয় সেজন্য পুলিশের পাশপাশি বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। 

তবে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান বলেছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিজিবিসহ অন্যদের প্রত্যাহার করা হবে। সরজমিন দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা এবং মুসলিমদের দিক থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে হিন্দুদের মধ্যে। 

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল শুক্রবার পুরো উপজেলাজুড়ে তিনি নিজেই টহল দিয়েছেন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের শিকার দুই ভাই আশরাফুল খান ও আসাদুল খানের পরিবারের সঙ্গে দেখাও করেছেন। মন্ত্রী আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির জন্য এ ঘটনা ‘পরিকল্পিতভাবে’ ঘটানো হয়েছিল। তবে এই পরিকল্পনা কাদের তরফ থেকে করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করাই হবে সব ধর্মের মানুষের কর্তব্য। 

সুতরাং এখানে কোনো উদ্বেগ উৎকণ্ঠার বিষয় নাই। তিনি মনে করেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা হতে পারে। সেজন্য তারা সতর্ক আছেন। সর্তাকাবস্থার কথা জানা গেল পঞ্চপল্লীর কৃষ্ণনগরের বড়বাড়ির গৃহবধূদের কাছ থেকেও। জনাদশেক গৃহবধূ গতকাল কাঠফাটা রোদে আমগাছের নিচে বসে অনাগত দিনগুলোর কথা ভাবছেন। তারা প্রত্যেকেই বাড়িতে তালা দিয়ে সেখানে বসে দিন পার করছেন। 

দশজনের ভিড়ের মধ্য থেকে অঞ্জনা নামের এক গৃহবধূ শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, একসপ্তাহ ধরে ‘বেটা-বিটিক’ কাউকেই দেখছি না। ঘরে খাবার নেই। কী যে হবে? এরপরই কাকে যেন উদ্দেশ্য করে বলছেন, শ্রমিকদের মারতি গেলি কেন? আবার চোখে জল। এসময়ই পাশে থাকা আরেক গৃহবধূর মোবাইল বেজে উঠলে তিনি একটু দূরে সরে যান। ফিরে এসে বললেন, মোর জামাই ফোন করেছিল, খাবার পাঠাবে। তার উক্তি, মা কালিকেই পুড়িয়ে দিয়েছে। খাবার পাঠিয়ে কী হবে, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App