×

উপজেলা ভোটে আছে বিএনপির বড় অংশই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উপজেলা ভোটে আছে  বিএনপির বড় অংশই

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার হতে চায় না বিএনপি। এমন কারণ দেখিয়েই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এমকি নেতাকর্মী কেউ অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও দলের যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন; তাদের একটি বড় অংশ প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদের ভোটে থাকছেন।

নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের একটা বড় অংশ শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবেন; নাকি প্রত্যাহার করবেন এ নিয়ে তাদের অনেকে এখনো দোলাচলে রয়েছেন। কেউ কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ সোমবার পর্যন্ত সময় নিতে চাইছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন জমা দেয়া ৪৫ জনের বেশির ভাগই প্রত্যাাহার করেননি।

তবে এখনো পর্যন্ত কতজন নেতা দলীয় নির্দেশ মেনে মনোনায়ন প্রত্যাহার করেছেন তার কোনো সঠিক তথ্যও কেন্দ্রে নেই বলে জানান কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। বিএনপির সাবেক ও বর্তমান মিলে অন্তত ৪৫ জন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি গত সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিএনপি দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ বার্তা ইতোমধ্যে সাংগঠনিকভাবে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়া নেতাদের সঙ্গে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কথা বলছি। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলার নেতারাও কথা বলছেন, যাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ফেলেন। অনেকের সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করি, শেষ দিন অধিকাংশই প্রত্যাহার করে নেবেন। আর না করলে দল তো নিশ্চয়ই একটা সিদ্ধান্ত নেবেই।

গতকাল রবিবার বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী ভোরের কাগজকে বলেন, ভোটে তারা শেষ পর্যন্ত থাকতে চান। কারণ ভোটের মাঠে জোয়ার উঠেছে। তাদের ভালো করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ভোটে থাকার ব্যাপারে এসব নেতার যুক্তি- আন্দোলন চলাকালে তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নির্বাচনের আগে ও পরে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বহুকষ্টে তাদের জামিন নেয়া গেলেও; কোর্ট থেকে এমন একজন জামিনদার চাওয়া হয় যিনি সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বেশি গুরত্ব দেয়া হয়।

তৃণমূল নেতাদের দাবি, বেশ কয়েক বছর দল নির্বাচনের বাইরে থাকার কারণে দলের বা দলসমর্থিত গণ্যমান্য পর্যায়ের এমন কোনো ব্যক্তি নেই যারা তৃলমূল কর্মীদের দুঃসময়ে সাপোর্ট দিতে পারে।

মাঠের এসব নেতারা বলেন, এই মুহূর্তে তৃণমূল নেতাদের সরকারের জুলুম অত্যাচার থেকে বাঁচতে হলেও ভোটে যাওয়া জরুরি। নির্বাচনে আগ্রহীদের এসব বেশির ভাগ নেতাই সাবেক। বর্তমানে কমিটিতে আছেন, এমন নেতার সংখ্যা খুব কম।

সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, আমি আগে বিএনপির কমিটিতে ছিলাম, এখন কোনো পদে নেই। জনগণ চাচ্ছে আমি যেন নির্বাচন করি। তাই আমি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।

নির্বাচনে আগ্রহী ত্রিশাল উপজেলা বিএনপি নেতা আনোয়ার শাদাত বলেন, আমার বাবা ত্রিশাল থেকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমিও জনপ্রতিনিধি হই। তার ইচ্ছাতেই বিএনপির সঙ্গে আছি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে গণসংযোগ শুরু করেছি। জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। দলীয় সিদ্ধান্তে বহিষ্কার করলেও নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করে জনগণের সেবা করতে চাই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ওমরাও খান রহস্য রেখে চলছেন। তিনি বলেন, প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত দেখা যাক কী হয়। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় বিএনপির চার নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া ও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা সফিক উদ্দিন।

তাদের মধ্যে গৌছ খান বলেন, আমি নির্বাচনী মাঠে এখনো আছি। আমার অবস্থানও ভালো। তবে নির্বাচনে থাকব কি থাকব না, সে সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি।

শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকতে চান যারা : শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকতে চান বিএনপি এমন নেতাদের মধ্যে আরো রয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লার উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন, নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে সাবেক বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন ও ভোলাহাটে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস।

সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি নেতা তপু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু। গতকাল রবিবার দুপুরে সরাইল সদরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন। অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, তারেক রহমানের নির্দেশ ও বিএনপির কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মনোনয়নপত্র জমা দেয়া বিএনপির অপর নেতাকর্মীরাও দলকে ভালোবেসে হাইকমান্ডের নির্দেশ বাস্তবায়নে অতি দ্রুতই এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলেও জানান তিনি।

জানতে চাইলে তপু ভোরের কাগজকে বলেন, যারা বিএনপি পরিবারের সদস্য। যারা বিএনপিকে মনে-প্রাণে ভালোবাসেন। তারা অবশ্যই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। সরে না দাঁড়ালে বুঝতে হবে তারা দলের কেউ নন। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App