×

বাজারে নৈরাজ্য

৩৫ টাকার ডাব হাত ঘুরে উঠল দেড়শতে

Icon

মরিয়ম সেঁজুতি

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৩৫ টাকার ডাব  হাত ঘুরে উঠল দেড়শতে

ছবি: সংগৃহীত

সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডাবের চাহিদাও বেড়েছে। এই সুযোগে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ডাব সিন্ডিকেটের কারণে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো ডাব। 

অভিযোগ রয়েছে, বাগানমালিকরা যে ডাব ৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন, সেই ডাব হাতঘুরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকায়। রাজধানীর পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ নৈরাজ্য চলছে বলে জানা গেছে।  মূলত তীব্র গরমে এখন জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। 

আবহাওয়া অফিসের তথ্য, দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা আরো বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে জনজীবনে বাড়তে পারে অস্বস্তি। এ পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়ছে ডাব, তরমুজসহ অন্যান্য রসাল ফলের। আর এই সুযোগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এসব ফলের দাম। 

গতকাল রবিবার মতিঝিল, বাবুবাজার, মিডফোর্ড, ঢাকা মেডিকেল ও রমনা পার্কসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, ছোট সাইজের প্রতি পিস ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। আর মাঝারি ও বড় সাইজের ডাবের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। 

বিক্রেতারা জানান, তীব্র গরমে বেড়ে গেছে ডাবের চাহিদা। তাই দাম বাড়ছে। রাজধানীর মতিঝিল দিলকুশা এলাকায় জীবন বীমা করপোরেশনের সামনে কথা হয় ডাব বিক্রেতা রহমানের সঙ্গে। তিনি ছোট-বড় প্রতিটি ডাব বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা দরে। 

কেন এত দাম জানতে চাইলে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, পাইকারি বিক্রেতাদের জিজ্ঞেস করেন, কেন এত দাম? আমি বলতে পারব না। ছোট ডাবের দামও কেন দেড়শ টাকা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা তাই বিক্রি করছি। আপনার ইচ্ছা হলে নিবেন, ইচ্ছা না হলে নিবেন না। 

রমনা পার্কের সামনে ডাব বিক্রেতা রোমান বলেন, বাজারে ডাবের চাহিদা অনেক বেশি। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, তীব্র গরমে চাহিদা মেটাতে গাছ থেকে এখন ছোট ছোট ডাব পেড়ে ফেলা হচ্ছে। এতে সামনে ডাবের সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে দাম আরো বাড়তে পারে। আড়ত পর্যায়ে ১০০ ডাবের দাম প্রায় ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কদিন আগেও ১০০ ডাব কিনেছি ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায়। তবে বর্তমানে সেটি কিনতে হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। ছোট সাইজের ডাব হলে হয়তো কিছু কম টাকায় মিলছে। 

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের ডাব বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এমনিতেই ডাবের দাম বাড়ে। তবে এ বছর তীব্র গরমে সেটি আরো বেড়েছে। 

এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, চাহিদার তুলনায় ডাব অনেক কম। পাশাপাশি বেড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা। এতে ডাবের দাম আরো বাড়ছে।

রাজধানীর বাদামতলীর পাইকারি ডাব বিক্রেতা তৌহিদ হোসেন বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর সময়ও পাইকারিতে ডাবের দাম এত বাড়েনি। তবে এবার গরম বাড়ায় ডাবের চাহিদা প্রচুর বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় ডাব কম থাকায় দাম বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, গ্রামেও ডাবের দাম বেড়ে গেছে। আগে যেখানে ছোট সাইজের ডাব ৩০-৪০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ। সব মিলিয়ে কয়েকবার হাত বদলের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সেটি গিয়ে ঠেকছে অন্তত ১০০ টাকায়। 

ভোক্তারা বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর সময় চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানোর খেলায় মেতেছিলেন ডাব ব্যবসায়ীরা। আর এবার মেতেছেন গরমকে পুঁজি করে। তাদের এ অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে পকেট ফাঁকা হবে সাধারণ ক্রেতাদের।

মুগদা মেডিকেলে রোগী নিয়ে আসা নজরুল ইসলাম নামে একজন জানান, ডাবের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি পথ্য হলেও দিন দিন এর দাম বাড়ছে। ফলে সবার জন্য ডাব খাওয়া এখন বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে। 

মোরশেদুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ডাক্তার ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই অতিরিক্ত দাম হওয়া সত্ত্বেও ডাব কিনতে বাধ্য হয়েছি। এক পিস ডাব ১৫০ টাকা। এভাবে চললে কয়েক দিন পর আর ডাবই খেতে পারবে না রোগীরা। 

একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আরিফুল ইসলাম বলেন, ডাবে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা এ তীব্র গরমে যে কোনো ডায়রিয়া বা বমিজনিত কিংবা পানিস্বল্পতায় খুবই উপকারী। তাই রোগীদের সবসময়ই ডাব খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। ডাবের বাজারের যখন এ অবস্থা, তখন অস্থির অন্যান্য ফলের বাজারও। রমজানের তুলনায় দাম সামান্য কমলেও এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ ফল। বয়কটের ভয়ে বাজারে কমে যাওয়া তরমুজের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে এর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App