×

মুক্তচিন্তা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০৭:১৯ পিএম

করোনা সংক্রমণের প্রায় এক বছর হতে চলেছে, কিন্তু থেমে নেই আক্রান্তের হার বরং বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিষেধক তৈরি করার জন্য। এখন পর্যন্ত কয়েকটি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের শেষ ধাপে রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই আবার সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে করোনার দ্বিতীয় ধাপ বলছে। তাদের ভাষ্যমতে, এটি আগের তুলনায় আরো শক্তিশালী রূপ ধারণ করতে পারে। সংস্থাটি দেশগুলোকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার অনুরোধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিধিনিষেধের প্রতিবাদে ইতালির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। বেলজিয়ামে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকদেরও সেবা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লাগামহীনভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে উন্নত দেশগুলো।

শীত শুরু হওয়ার আগে থেকেই মূলত ধারণা করা হচ্ছিল যে শীতে বাড়তে পারে করোনার প্রবণতা। শীত পুরোপুরি শুরু না হলেও অনুভূত হওয়ার মধ্যেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি হিসাবে যে তথ্য দেয়া হচ্ছে, বেসরকারি হিসাবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্যবিদরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদে দেখা যায় যে, আগের তুলনায় কোভিড লক্ষণসহ করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ভয়াবহ বায়ুদূষণ করোনা সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে অত্যন্ত সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। বিশেষ করে যারা অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগে ভুগছেন, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। শীত পুরোপুরি শুরু হলে এই হার যে আরো বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। এর সঙ্গে করোনার সংক্রমণ যুক্ত হলে তা যে কোনো পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, শীত বা অতি ঠাণ্ডায় করোনা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠে এবং বিস্তার লাভ করে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো শীতপ্রধান হওয়ায় সেখানে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়া এবং তৃতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কার পেছনে এই শীতই কারণ হয়ে রয়েছে। আমাদের দেশে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং শীতের সময় কখনো কখনো তীব্র শীত অনুভূত হয়। এখনো শীত পুরোপুরি শুরু হয়নি। তার আগেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আলামত ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শীত যদি তীব্র হয়ে উঠে কিংবা স্বাভাবিক শীতের মাত্রায় থাকে তখন পরিস্থিতির যে অবনতি হতে পারে তা এখনই আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যেসব নিয়মকানুন জনসাধারণকে অবহিত করা হয়েছে, তাদের তা স্মরণ করিয়ে দিতে নতুন করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়াসহ জনসমাগম এড়িয়ে চলার বিষয়গুলো নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া এবং টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে অনতিবিলম্বে ব্যাপক প্রচার করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণত শীত মৌসুমে বিয়েসহ অন্যান্য জনসমাগমমূলক অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।

শীতকালে ভাইরাসযুক্ত ছোট বায়ুকণা অধিক সময় বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ফলে অধিক মানুষ সংক্রমিত হয়। শীতকালে সাধারণত অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত অসুখ হয়ে থাকে। যেমন- ফ্লু, শ্বাসনালি-ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী রোগ, নানা ধরনের শিশু রোগ। যখন অন্য একটি ভাইরাস সংক্রমিত করে তখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সহজ হয়ে যায়। কারণ প্রথম ভাইরাসটি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি দখল করে রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শীতের সময়ে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি রাখতে হবে। মাস্ক ব্যবহার না করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। শীতে বিভিন্ন দূষণ থেকে দূরে থাকতে হবে কেননা দূষণের কবলে পড়লে অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে, যার ফলে করোনার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় টেস্ট বাড়ানো, রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসার জন্য আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা ভ্যাকসিন যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের হাতের নাগালে না আসছে ততদিন নিজ থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।

শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App