×

মুক্তচিন্তা

নদীভাঙন রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ০১:৩৩ পিএম

দেশে প্রতি বছরই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীভাঙনের শিকার হয়। বর্ষাকালে নদীর প্রবাহের বিস্তৃতি অনেক বেশি থাকে। বর্ষা শেষে নদীর স্রোত ও পরিধি অনেক কমে যায়। এতে দু’ক‚লে ভাঙন শুরু হয়। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বছরে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। আর ঘরবাড়ি, ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় অসংখ্য মানুষ। গতকাল ভোরের কাগজে খবরে প্রকাশ, বর্তমানে দেশের ৩১টি জেলার প্রায় ৪০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে স্কুল-মাদ্রাসা ও বহু বাঁধ। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, থাকা-খাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বানভাসিরা। পানি যত বাড়ছে বিভিন্ন স্থানে তত তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় অনেকে ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাঁধের ওপর। হাজারো মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নদীভাঙন রোধের কি কোনো উপায় নেই? এক গবেষণা রিপোর্ট বলছে, গত চার দশকে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীতে দেড় লাখ হেক্টর জমি হারিয়ে গেছে। আর চর জেগে উঠেছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি। সেই হিসাবে বাংলাদেশ নদীতে ১ লাখ হেক্টর জমি হারিয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে যমুনা ঢোকার পর থেকেই সেখানকার জেলাগুলোয় ভাঙন হচ্ছে। গাইবান্ধা, জামালপুর ও পাশের জেলাগুলো এর মধ্যে রয়েছে। কয়েক দশক ধরেই সিরাজগঞ্জ সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ এলাকা। ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুরও এর মধ্যে রয়েছে। মূলত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীতেই সবচেয়ে বেশি ভাঙনের ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানোর উপায় নেই। আমাদের দেশের মানুষ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে আছে। নদীভাঙন, তা নিছক প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া নয়। দীর্ঘ অবহেলা ও পরিকল্পনাহীনতা কিংবা উন্নয়নের ভ্রান্ত মডেলই আমাদের গ্রাম ও শহরগুলোকে নদীর করাল গ্রাসের কাছে বিপন্ন করে তুলেছে। আমরা দেখি, প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয় ভাঙন রোধে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার নামে ব্যয় হয়েছে, সেই হিসাব পাওয়া কঠিন। সেই অর্থ কতটা কাজে আসে, সেটা আরেকটি প্রশ্ন। কারণ ভাঙন রোধে নদীতীরে যেসব প্রকৌশল স্থাপনা তৈরি করা হয়, সেগুলোর গুণগত মান, কৌশল নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই। দেশের বিভিন্ন জনপদকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে শত শত কোটি টাকা খরচ করলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি কি দেখা যায়? নদীভাঙন রোধে আমাদের সামর্থ্য এ যাবৎকাল খুব একটা প্রমাণিত হয়নি বলেই প্রতীয়মান। কাজের চেয়ে প্রতিশ্রুতি আর দুর্নীতিই বেশি হয়েছে। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন বা ড্রেজিংয়ের কারণে ক্ষতির শিকার হয় নদী। বাংলাদেশে নদীভাঙন প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর পূর্বাভাস এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App