×

মুক্তচিন্তা

বাস ভাড়া বৃদ্ধিতে মানুষ আরো নিঃস্ব হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২০, ০৮:৫২ পিএম

বাস মালিক এবং তাদের প্রতি দরদি কর্তাব্যক্তিদের ঔদার্যে বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাস ভাড়া প্রায় বিমান ভাড়ার কাছাকাছি চলে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এসি বাসের ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৫০ টাকা। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সেটি বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার টাকা। অথচ ১ জুন থেকে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ টাকায় ঢাকা থেকে বিমানে উঠে চট্টগ্রামে যেতে পারছেন যাত্রীরা। বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে সরকার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া পুনর্র্নির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত যুক্ত হবে। প্রজ্ঞাপনে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, একজন যাত্রীকে বাস/মিনিবাসের পাশাপাশি দুটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না। তবে কাজীর গরু খাতায় থাকলেও গোয়ালে তার দেখা যেমন মেলে না, তেমন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাত্রীরা কোনো সুফল পাচ্ছে না। ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় রাজধানী থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং দূরপাল্লার সব রোডে যাত্রী পরিবহন চলাচল শুরু করেছে। সোমবার থেকে সীমিত আসনে যাত্রী পরিবহনে বাস সার্ভিসগুলো চলাচল শুরু করলেও অধিকাংশ পরিবহন এবং যাত্রীরা করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অধিকাংশ বাস সার্ভিসের সামনে দীর্ঘ লাইন নিয়ে টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ছিল না পারস্পরিক দূরত্ব। যাত্রীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোধে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিকদের মাঝে ছিল না কোনো স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা। যত্রতত্র যাত্রী উঠানো ও নামানো হচ্ছে। অধিকাংশ পরিবহনে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা। হেলপার কিংবা কন্ডাক্টর টেনে টেনে বাসে যাত্রী তুলছেন সেই পুরনো নিয়মে। যাত্রী ওঠানোর জন্য যত্রতত্র দাঁড়াতে দেখা গেছে অধিকাংশ বাসকে। যাত্রী ওঠানোর ক্ষেত্রে এবং নামানোর ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম বা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। করোনা সংকটের কারণে দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত সোমবার সীমিত পরিসরে গণপরিবহন তথা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চালু হয়েছে। রবিবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। যাদের নিজস্ব পরিবহন নেই, সেই গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গণপরিবহনই ভরসা। বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাসে যাতে যাত্রীদের গায়ে গায়ে লেগে বসতে বা দাঁড়াতে না হয় সে জন্য অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। এর ফলে যাত্রীস্বল্পতা নিয়ে বাস চালাতে গেলে আর্থিক ক্ষতি হবে মালিকদের। তাই ভাড়া শতভাগ বাড়িয়ে সে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে। মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গত শনিবার ঢাকা ও সারাদেশে বাস-মিনিবাসের ভাড়া নজিরবিহীনভাবে ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করে। নানা মহল থেকে ওই প্রস্তাবের সমালোচনা শুরু হলে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ভাড়ার হার ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেন। এর সঙ্গে দূরের যাত্রায় সেতু ও সড়কের টোল ইত্যাদিও ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। কিন্তু করোনার কারণে শুধু কি বাস মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন? লঞ্চ-স্টিমারের মালিকরা ক্ষতির শিকার হননি? তারা তো সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য ভাড়া বাড়ানোর আবদার করেননি! তাহলে বাস মালিকদের এই দাবি কেন? করোনায় লকডাউনে প্রায় তিন মাস ধরে সব শ্রেণির মানুষকেই কার্যত গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকে পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন। বিপুল মানুষ ধারদেনায় তলিয়ে গেছেন। আমাদের দেশে এখনো এ ধরনের নিম্ন আয়ের মানুষই সংখ্যাগরিষ্ঠ। শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ানোর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ এসব নিঃস্ব মানুষের ওপর কতটা চাপ পড়বে সড়কমন্ত্রী সেটি বিবেচনায় নিয়েছেন বলে মনে হয় না।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App