×

মুক্তচিন্তা

এই আগ্রাসন রুখতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৪৯ পিএম

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে শুভবোধসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল সবার যূথবদ্ধ প্রয়াস জরুরি। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে গত বছরের মে মাসে সারাদেশে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। গ্রেপ্তার করা হয় দেড় লক্ষাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে। র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রায় ৪০০ মাদক ব্যবসায়ী। ১০২ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণের পর প্রাণের ভয়ে গা ঢাকা দেয় অনেকে। এত কিছুর পরও ঠেকানো যায়নি মাদকের কারবার। মাদকের এই আগ্রাসন দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সৃষ্টি করছে অবক্ষয়। দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্যও তা মূর্তমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় থমকে যাওয়া মাদক ব্যবসা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মাদকের ঢল থামাতে সাঁড়াশি অভিযান আবার জোরদার করতে হবে। তবে নতুন করে সারাদেশে তিন হাজার মাদক কারবারির তালিকা তৈরি করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মাদক পাচারের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ এ তালিকায় উঠে এসেছে অর্ধশতাধিক গডফাদারের নাম। করা হয়েছে ৬৪ জেলার ১২৮ জনের শর্ট তালিকাও। অধিদপ্তর থেকে এই তালিকা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। দ্রুত এই তালিকা ধরে অভিযান শুরু করতে হবে। মাদক নিয়ে যে ভয়াবহতার কথা আমরা বলছি, তার সূচনা গত শতকের আশির দশকের গোড়ার দিকে। একে একে আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করল হেরোইন, কোকেন ও ফেনসিডিল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অনুপ্রবেশ করল ইয়াবা। হালের ফ্যাশন সিসা, ইয়াবা সহজলভ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে নতুন করে আইস যুক্ত হয়ে পড়েছে। বলাই বাহুল্য, থানা পুলিশকে হাত করেই চলছে এই ব্যবসা। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। দেশের বিরাটসংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মাদকের নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তারুণ্যগ্রাসী মাদক বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। মাদকের থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। সমাজপতি, রাজনীতিক, সরকারি কর্মজীবী, পুলিশ সবাই যখন মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন, তখন মাদক ঠেকানো যাবে কীভাবে? এই প্রশ্ন বারবার সামনে আসছে। সীমান্তবর্তী এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেসব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। প্রশাসনিক কঠোর অবস্থান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতাই পারবে ইয়াবার শিকড় উপরে ফেলে এর বিস্তার ঠেকাতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App