×

মুক্তচিন্তা

একটি আপাতত চুপ থাকা গভীর ঘটনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:১৬ পিএম

সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য বনাম মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুঝুন এবার। আখেরে ছাত্রলীগের কিছু হবে না। সমাজতান্ত্রিক বা প্রগতিশীল নামে পরিচিত সংগঠনগুলোরও কিছু হবে না। লাভবান হবে নুরু আর লোকসানে পড়ল মুক্তিযুদ্ধ নামটি। এই ষড়যন্ত্র বা উদ্ভ‚ত পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা? শেখ হাসিনা আছেন বলে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কারণ তিনি প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠতা দিয়ে এমন এক ইমেজ তৈরি করেছেন ঘোর দুশমনও জানে তিনি না থাকলে সবকিছু কেমন উল্টো হয়ে যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বারবার। যার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করছে সাধারণ ছাত্র এবং মিডিয়া। এটা মানতে হবে ছাত্রলীগ আগের মতো গৌরবের কোনো জায়গায় নেই। আসলে সত্য বলতে গেলে বহুকাল মানে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই নেই। মনোযোগ দিয়ে ইতিহাসের দিকে তাকালেই চোখে পড়বে স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার মতো বুকের পাটা ছিল না কারো। জামায়াত-শিবির বা মুসলিম লীগ তখন মৃতপ্রায়। রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধীরা ছিল কোণঠাসা। সে সময় বঙ্গবন্ধুর সরকার ও তাকে বিব্রত করার দায়িত্বপালন করেছিল ছাত্রলীগের নেতারা। আপনি সত্যবাদী হলেই জানবেন কারো দোষ কম-বেশি হলেও মানতে হবে একদিকে মুজিববাদী ছাত্রলীগ আরেকদিকে বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রলীগ। এ দুয়ের দ্ব›েদ্ব ভাগ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে শুরু হয় আত্মহনন আর সর্বনাশের পালা। সত্যভাষী হলে বলতে হবে ভারে ধারে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পাল্লাই ছিল জনপ্রিয়। আমার জীবনের প্রথম ভোট আমি দিয়েছিলাম মশালে। জাসদের সেই প্রার্থী ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ ও মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা এম এ হান্নানের পুত্র নূরদ্দীন জাহেদ মঞ্জু। বোঝা কি খুব মুশকিল কীভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছিল ছাত্রলীগের রাজনীতি? এবং সে সুযোগে যত স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক দালাল লাইন দিয়েছিল জাসদের পেছনে। যতদিন না বঙ্গবন্ধু চার জাতীয় নেতা নিহত হলেন দেশে সামরিক সরকার এলো ততদিন তারা ঘাপটি মেরে থাকল সেখানে। জিয়াউর রহমান এসে দরজা খুলে দিতেই স্বরূপে বেরিয়ে এলো তারা। মোদ্দাকথা এই ছাত্রলীগের হাতেই দেশের ইতিহাস ও শাসনের সর্বনাশের শুরু। যে কারণে আ স ম রব, শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকী তিন খলিফা নামে পরিচিত কারো মধ্যে আমি গৌরবের লেশমাত্র দেখি না আর। কবিতায় যেমন বলা হয়েছে, তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি... সে কাজটা তো তারা করল-ই না বরং পতাকা মাটি ও অর্জনকেই ফেলে দিয়েছিল ঘোর বিপদে। তারপরও ছাত্রলীগ টিকে আছে। সমাজতন্ত্রের নামে জাসদ বাসদসহ নানা ভাগে বিভক্ত ছাত্রলীগের সংগঠনগুলো জাতীয় রাজনীতিতে দুর্বল হলেও ছাত্র সমাজে তাদের অস্তিত্ব প্রবল। এটাও আমাদের এক ধরনের নিয়তি। যৌবনে সমাজতন্ত্র বা আধুনিক প্রগতিশীল থাকার পর এক বয়সে বিশেষত চল্লিশের পর সিংহভাগ বাঙালি সে পথ আর মাড়ায় না। তখন ধর্ম সংস্কার বার্ধক্য নানা নামে তার জায়গা হয় অন্য কোনো শিবিরে। তবু ছাত্র রাজনীতি চলমান। বিরোধিতা করলেও মানতে হবে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারুণ্য-ই এ দেশের প্রগতিশীলতা ধারণ করে আছে। সে কারণেই তারা এখনো প্রতিবাদমুখর হতে জানে। এটাও মানা দরকার কোনো সময় কোনো সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনকে আমরা নত বিনয়ী বা সহনশীল হতে দেখি না। সামরিক সরকারের সময় গজিয়ে ওঠা ছাত্র সংগঠনগুলো যেমন বেসামরিক আমলেও তাই। সম্প্রতি যে ঘটনায় দেশের ছাত্র ও তারুণ্য টালমাটাল তার পেছনেও একই কারণ। ডাকসু ভবনে হামলায় আহত ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়েছে বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ব্যানারে থাকা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টের দুই অংশ ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সঙ্গে বামপন্থি সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের দুই অংশ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, স্বতন্ত্র জোট, ছাত্র গণমঞ্চ ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এই জোটের শরিক হয়েছে। সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে এই জোট করেছেন তারা। সব মেনে নিয়েই বলছি এই জোট কি টিকবে? না এই জোট কোনো ফলাফল বয়ে আনবে? নুরু ভিপি পদে নির্বাচিত ছাত্র নেতা। তার জয় ছিল আনন্দ ও বিস্ময়ের। এই কারণে যে তার জয় সহজ কিছু ছিল না। সে জিতে এসে কাহিনী তৈরি করেছে বটে কিন্তু সবদিক থেকে তার ওপর দেখি হামলা আর হামলা। এটাও বুঝতে পারি এত হামলার কিছু উসকানিও আছে নিশ্চয়ই। মাঝে মাঝে ধারণা করি রাগ অভিমান আর কোণঠাসা মিলে যখন মানুষ ক্লান্ত বা পথহারা হয় তখন তার আশ্রয় যে কোনো খড়কুটো। সুযোগ সন্ধানী স্বাধীনতাবিরোধী আর বিএনপির রাজনীতিও বসে নেই। তারা এই সুযোগ কাজে লাগাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুযোগটা করে দিচ্ছে কারা? ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য দায়ী সংগঠনের নাম মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তাহলে সমীকরণটা কি? সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য বনাম মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুঝুন এবার। আখেরে ছাত্রলীগের কিছু হবে না। সমাজতান্ত্রিক বা প্রগতিশীল নামে পরিচিত সংগঠনগুলোরও কিছু হবে না। লাভবান হবে নুরু আর লোকসানে পড়ল মুক্তিযুদ্ধ নামটি। এই ষড়যন্ত্র বা উদ্ভ‚ত পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা? শেখ হাসিনা আছেন বলে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কারণ তিনি প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠতা দিয়ে এমন এক ইমেজ তৈরি করেছেন ঘোর দুশমনও জানে তিনি না থাকলে সবকিছু কেমন উল্টো হয়ে যেতে পারে। তারা এটাও বোঝে সুখে থাকা সচ্ছলতায় থাকা মানুষকে রাস্তায় নামানো যাবে না। তাই মাঝে মাঝে ছাত্রছাত্রীদের উসকে দিয়ে এসিড টেস্ট করে তারা। আর এই উসকানি এখনো সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও একসময় হয়তো থাকবে না। ছাত্রলীগের অতীত আস্ফালন ও ভ‚মিকা আওয়ামী লীগকে অনেক ভুগিয়েছে। যার কারণে আমরা ভুগেছি। ভুগেছে গোটা জাতি। দুঃখের বিষয় এই এত বছর পর আবার যখন আওয়ামী লীগ সরকার ও দেশ শাসনে রেকর্ড করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তখন সেই পুরনো অতীত ফিরিয়ে আনছে ছাত্রলীগ। নামধারী বললেই কি সমস্যা ঘুচে যাবে? না মানুষ তা মেনে নেবে? তাই এর সমাধান মূলত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে। তারা যদি এর গুরুত্ব বুঝতে না পারেন বা বুঝেও চুপ থাকেন সময় ছেড়ে কথা বলবে না। জোট নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কিন্তু প্রশ্ন আছে। বামধারা এখনো যেখানে আলো ও আশার প্রতীক সেখানে সময় বুঝে যার তার সঙ্গে জোট বাধা কি আসলেই কাজের কাজ? নুরু নিশ্চিতভাবে আমাদের সমবেদনা আর সমর্থনে আছে। কারণ সে নির্যাতিত। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে জোটের কি প্রভাব দেখি আমরা? ড. কামাল হোসেন আর বাতিল নেতাদের সঙ্গে জোট বাধা দলগুলো এখন কোথায়? তাদের কি আসলেই সমাজে কোনো ভ‚মিকা আছে? তাই সাবধান করব এই বলে কোমলমতি বা এখনো যারা ঘাত প্রতিঘাতে জীবনে ম্যাচিওড হয়নি পূর্ণতা কিংবা ম্যাচিওরিটি আসেনি যাদের তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। ছাত্রলীগ বিরোধিতা তাদের সহিংসতা আর গুণ্ডামির বিরোধিতা অবশ্য কর্তব্য। তাদের ঠেকাতেই হবে। কিন্তু এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইমেজ বঙ্গবন্ধুকন্যা আর জাতীয় রাজনীতি মিশিয়ে ফেলে তারা যেন কারো গদী চাওয়ার লোভের শিকার না হয়। তাতে কারো কোনো লাভ নেই। উল্টো ন্যায্য আন্দোলন চলে যাবে ভুল পথে। মানুষের সহমর্মিতা বা সমর্থনও থাকবে না সঙ্গে। দ্রোহ মন্দ কিছু না। তারুণ্যের অহঙ্কার যে দ্রোহ তা যেন জাতীয় রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভুল ধারার হাতে না পড়ে। নুরুর ভবিষ্যৎও সেখানেই। সে কি নতুন নুরু হবে না হাইকোর্টের নুর পাগলা হয়ে টিকে থাকবে তার উত্তর দেবে সময়। অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App