×

মুক্তচিন্তা

ছাত্র রাজনীতির সংস্কার প্রয়োজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০৭ পিএম

অতীতের দিকে তাকালে আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতিতে অনেক অর্জন দেখতে পাই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা, ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। অতীতের সেই আদর্শিক রাজনীতি পথভ্রষ্ট রূপ নিয়েছে বর্তমান ছাত্র রাজনীতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সমালোচনার মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতি তার গৌরব হারিয়ে ফেলছে। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্রনেতারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, হলের সিট নৈরাজ্য, ইভটিজিং, ধর্ষণ, শিক্ষার্থী খুন ও শিক্ষক লাঞ্ছিতসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে ছাত্রদের নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ব মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। সম্প্রতি ভিন্ন মতকে কেন্দ্র করেই বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে। তারাও কিন্তু বুয়েটের মেধাবী ছাত্র। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিবেকবর্জিত মনুষ্যত্বহীন মেধাবী ছাত্র। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের মানুষ বুয়েটসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানান। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সমালোচনা উঠে এসেছে। বর্তমানে বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় প্রশাসন থেকে সাময়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমান এই ছাত্র রাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের ও সাধারণ মানুষদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি দরকার, তবে সেটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুধারার রাজনীতি চর্চা প্রয়োজন। বর্তমান ছাত্র রাজনীতিতে যে ছাত্রনেতাদের সব শিক্ষার্থীর অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব সেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ছাত্র নির্যাতন, বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে যে দ্ব›দ্ব সংঘর্ষ সৃষ্টি হচ্ছে তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র নেতৃত্বের ওপর ভরসা পাচ্ছে না। কয়েক বছর আগে এসব ঘটনা ঘটলে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। এতে ছাত্রদের ক্লাস, পরীক্ষা ও সেশনজটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন গ্রুপের দ্ব›দ্ব, সংঘর্ষ ও বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্মের জন্য মূল রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। যেখানে সংগঠনগুলোর মূল নেতৃত্ব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হচ্ছে না। যে বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ জ্ঞানকেন্দ্র। যেখানে একজন ছাত্র নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে নেতৃত্বের মাধ্যমের পরবর্তী সময়ে মূল রাজনৈতিক দলগুলো কাজের মধ্য দিয়ে দেশের জন্য কাজ করবে অথচ রাজনীতির কারণে অনেক ছাত্রের জীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পরিবর্তন আনা ও সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ বাস্তবায়ন এখন সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত। যেহেতু বর্তমান ছাত্র রাজনীতিতে একটি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ক্রমশ খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এজন্য আন্তরিকভাবে মূল রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আলোচনা সাপেক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর স্বচ্ছতা আনা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে কোনো সহিংসতা পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন নীতি প্রয়োগ করতে হবে, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি কোনো লেজুড়বৃত্তি না হয়ে সুষ্ঠু নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করা হয়। শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App