×

মুক্তচিন্তা

খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৩৯ পিএম

দেশের ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে ক্রমেই ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, মোট খেলাপি বা শ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। খেলাপি ঋণের ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের। এছাড়া ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। বিদেশি ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো -বর্তমানে স্থবির হয়ে আছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে আসতে সাহস পাচ্ছে না। এমন স্থবির পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেকেই শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণ বাড়ছে না। অন্যদিকে আগে বিতরণ হওয়া ঋণের টাকাও ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক। ফলে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সঠিক উদ্যোক্তাকে না দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেও উৎপাদনে যেতে পারছেন না। আবার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খেলাপি ঋণ বিস্তারের অন্যতম কারণ অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ। এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে ব্যাংকগুলোর পক্ষে সুদের হার কমানো সম্ভব নয়। সুদের হার না কমলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না, যা অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটাবে। কাজেই খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। এজন্য সবার আগে দরকার ব্যাংকিং খাতকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না দিলে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধে এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App