×

মুক্তচিন্তা

বৈষম্যও কমাতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ০২:১৭ পিএম

বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু আয় গত বছরের চেয়ে ৮ ডলার বেড়েছে। গত বছর এ আয় ছিল ১ হাজার ৬০২ ডলার, যা চলতি বছরে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত মঙ্গলবার একনেকের নির্বাহী পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সারা বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া এবং মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতি খুবই আশাপ্রদ খবর। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাথাপিছু আয় ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পরিমাণে অর্জিত হয়েছে বর্তমান সরকার আমলে। এমন অর্জন সরকারের মুকুটে সাফল্যের পালক যোগ করেছে। এর জন্য সরকারের অভিনন্দন প্রাপ্য। বিবিএস সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, বাস্তবে যা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। ফলে জিডিপির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশ স্বাধীনের প্রথম ৩৪ বছরে জিডিপি ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে উন্নীত হয়েছে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। মূলত, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কারণেই মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ৩টা খাতের মধ্যে কৃষি খাতে ২ দশমিক ৯৭, শিল্প খাতে ১০ দশমিক ২২ ও সেবা খাতে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। জনগণের সর্বমোট ব্যক্তিগত আয়কে জনপ্রতি ভাগ দিয়ে মাথাপিছু আয় নির্ধারণ হয়ে থাকে। তবে প্রকট বৈষম্যের এ সমাজে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছেন কিনা সেটা বড় প্রশ্ন। বিশ্লেষকদের মতে, মাথাপিছু আয় বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে সংকট আরো তীব্র হতে পারে। একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। মূলত সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতির সুফল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ঘুষ, দুর্নীতি, কর ফাঁকির বিষয়টি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। তবে বর্তমান সরকার যে দারিদ্র্য বিমোচনে তৎপর সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নানা বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাণিজ্য, বৈদেশিক আয় ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে আগের তুলনায়। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে হাঁটছে দেশ। আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করি, এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি জরুরি হচ্ছে, বৈষম্য কমাতে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। বৈষম্য বিলোপ সম্ভব হলেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির শতভাগ সুফল দেশবাসী পেতে পারে; যা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App