×

মুক্তচিন্তা

নারী-পুরুষের সাম্যের সংবিধান চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২৯ পিএম

নারী-পুরুষের সাম্যের সংবিধান চাই
মানব সভ্যতার আদি সংগঠন হচ্ছে পরিবার। আর বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক ঐশ্বরিক, আত্মিক। যা কোনো মানদণ্ডেই পরিমাপযোগ্য নয়। অথচ এই পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৈষম্যের শিকার কন্যা সন্তানরা। যেহেতু পরিবার থেকেই গড়ে উঠে সমাজ। তাই সেই আদিকালেও এই বৈষম্য ছিল, এখনো রয়েছে। এই বৈষম্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কন্যা সন্তানকে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ না দেয়া। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হিন্দু আইন মোতাবেক বাংলাদেশে এখনো পিতার পৈত্রিক সম্পত্তির দাবিদার পুত্র সন্তানরা। মূলত হিন্দুধর্মাবলম্বী কেউ মারা গেলে নিয়ম অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে সবার আগে তার পুত্র, পুত্রের অনুপস্থিতিতে পৌত্র (পুত্রের পুত্র) এবং পুত্র ও পৌত্রের অনুপস্থিতিতে প্রপৌত্র (পুত্রের পুত্রের পুত্র) সম্পূর্ণ উত্তরাধিকারী হন। কারণ, পুত্র তার পিতার, পৌত্র তার পিতার ও প্রপৌত্র তার পিতা ও পিতামহের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরপর আসেন মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী। সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার আইন-১৯৩৭ অনুসারে, বিধবা স্ত্রী তার জীবদ্দশায় মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে পুত্রের সমান জীবনস্বত্ব (ভোগ) পাবেন। তবে সেই সম্পত্তি বিক্রি কিংবা দান করতে পারবেন না তিনি। ফলে অনেক সময় স্বামীর মৃত্যুর পর ওই বিধবার আশ্রয়স্থল হয় বৃদ্ধাশ্রম কিংবা অন্যের নিগ্রহের শিকার হয়ে জীবনযাপন করতে হয়। বলা প্রয়োজন, এই সময়ে তার সবচেয়ে বড় আপনজন ছেলে বা বাবার বাড়ির লোকজন পাশে থাকেন না! এদিকে আইনের মারপ্যাঁচে ভাইদের কাছ থেকে বোনেরা কিছু (সম্পত্তি) আদায় করেও নিতে পারেন না। স্বামীর বাড়িতেও ঠাঁই হয় না। যেহেতু নারীরা সারা জীবনে নিজের বলে তেমন কিছু সঞ্চয় করতে পারেন না, সেহেতু পরনির্ভরশীল হয়েই তাকে বাঁচতে হয়। জীবনের শেষ সময়টাতে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করেন এবং মৃত্যুর প্রতীক্ষায় থাকেন! কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তব! আর বেশিরভাগ পরিবারেই এমনটা ঘটে থাকে। যদিও সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীরা মা, মেয়ে, বোন হওয়ায় পরিবারের এই নোংরা দিকটা সামনে আনতে চান না। মজার বিষয় হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সেটা লুফে নেয়। পিতার মৃত্যুর পরপরই সম্পত্তি ভোগে আইনি দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেন পুত্র সন্তানরা! পাশাপাশি অবিবাহিত বোনকে ঘাড় থেকে নামানোর জন্য বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। যেন এটাই তার একমাত্র কর্তব্য। আর তখন এই সমাজ বাহবা দেয়- বাহ! একজন ভাই তার বোনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সমাজ এটা বলে না, তিল তিল করে গড়ে ওঠা এক বোনের স্বপ্ন এভাবে ধ্বংস করে দিও না। যাও, স্বপ্ন পূরণে তার পাশে দাঁড়াও। মানবিক মানুষ হও। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, সম্পত্তির বিষয়ে হিন্দু আইনে থাকা প্রচলিত আইন সংস্কার করা জরুরি। আর অবশ্যই সেখানে একজন নারী সম্পর্ক ভেদে তার প্রাপ্য অধিকার বুঝে পাবে। পাশাপাশি সকল আইনের ঊর্ধ্বে ‘মানবতার সংবিধান’ প্রতিষ্ঠা হওয়াও একান্ত প্রয়োজন। মানবতা না থাকলে সমাজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। তাই আসুন ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মানবিক সংবিধান সবার হৃদয়ে ধারণ করি। তবেই অন্ধকার দূর করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App