×

মুক্তচিন্তা

সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করার এখনই সময়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:২৫ পিএম

সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করার এখনই সময়
তরুণরাই একটি দেশের চালিকাশক্তি। একটি সফল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পূর্বশর্ত হল সুস্থ ও কর্মক্ষম তরুণ সমাজ। কিন্তু যদি দীর্ঘমেয়াদী আসক্তির প্রভাবে সেই তরুণ জনশক্তির সিংহভাগ অকাল মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে তাহলে দেশের উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়বে বলে মনে করি। কিন্তু কেন এই অশনি সংকেত? এর মূলে রয়েছে তামাক এবং এর সহজলভ্যতা, বিশেষ করে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মাঝে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র ২০১৪ সালের গ্লোবাল স্কুল বেইজড স্টুডেন্ট হেলথ সার্ভে (জিএসএসএইচ) অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৩-১৭ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯.৮ শতাংশ এবং ১৬-১৭ বছর বয়সী তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ শতাংশ। এছাড়াও ২০২০ সালে ভারতীয় গবেষক কে ঈশ্বরী ও এম এম কুলকার্নি এর সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইনে বেশিরভাগ ধূমপায়ী আস্ত প্যাকেটের পরিবর্তে সিগারেটের খুচরা শলাকা কিনে থাকে। এতে করে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ ধূমপানে আসক্ত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র এফসিটিসি স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হিসেবে এফসিটিসি এর আলোকে ২০০৫ সালে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে উক্ত আইনটি আরো সময়োপযোগী করার জন্য সংশোধন করা হয়। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ নয় যা এ আইনের একটি অন্যতম দুর্বলতম দিক। সিগারেটের খুচরা শলাকা ও তামাকজাত দ্রব্য খোলা বিক্রির সুযোগ থাকায় বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ও নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের পুরো প্যাকেট বা বান্ডেল ক্রয় করার সামর্থ্য নেই তারা খুব সহজেই খুচরা শলাকা এবং খোলা তামাকজাত দ্রব্য ক্রয় করতে সক্ষম হয়। এ কারণে তরুণ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর তামাকে আসক্তিও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই এ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং তাদের মাঝে তামাকজাত দ্রব্য বিশেষ করে ধূমপানের প্রবণতা কমাতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) এর বিদ্যমান আইন আরও শক্তিশালী করা জরুরী। এছাড়া সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য খুচরা বা খোলা বিক্রি করলে বিক্রেতাদের অধিক লাভ হয়, কারণ তারা পুরো প্যাকেটের তুলনায় শলাকাপ্রতি বাড়তি দাম রাখতে পারে। ফলে তারা পুরো প্যাকেট বা বান্ডেল বিক্রির চেয়ে খুচরা বা খোলা বিক্রিতে বেশি আগ্রহী থাকে। অন্যদিকে, সিগারেটের খুচরা শলাকা ও তামাকজাত দ্রব্য খোলা বিক্রয় করলে সেখানে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেখানো সম্ভব হয় না। ফলে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপসমূহ বিশেষ করে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা তামাক দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর ১৬ নং ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা একান্ত জরুরী। এফসিটিসি’র এর ১৬ নং ধারা অনুযায়ী বিড়ি বা সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং ছোট প্যাকেট বিক্রি বন্ধে আইন প্রণয়ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এফসিটিসি আর্টিকেল ১৬-এর রিপোর্ট অনুসারে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য খোলা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন অথবা সংশোধনের ফলে জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ যেমন- থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং কম্বোডিয়া সহ বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিগারেটের খুচরা শলাকা ও খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে এবং এর সুফল ভোগ করছে। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও খুচরা শলাকা বিক্রয় বন্ধ হলে তরুণরা সহজে তামাকের খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ বিষয়টি বিবেচনা করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি কারণ এর সাথে জড়িত দেশের ভবিষ্যৎ। আইনটির সংশোধন হলে জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও তরুণদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সফলতা লাভ করা সম্ভব হবে। কারণ একটি শক্তিশালী আইনই পারে আমাদের তরুণদের তামাকসৃষ্ট স্বাস্থ্যক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। লেখক: প্রফেসর ডা. আব্দুল মালেক, ডিএমসিএইচ এবং সদস্য, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App