×

মুক্তচিন্তা

সামাজিক বৈষম্যে অপরাধে জড়াচ্ছে শিক্ষাঙ্গন বিমুখ শিশুরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম

সামাজিক বৈষম্যে অপরাধে জড়াচ্ছে শিক্ষাঙ্গন বিমুখ শিশুরা
বাল্যবিয়ে, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, নিরাপদ খাবারসহ শিশুদের জীবনধারণের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ দেখা গেলেও শিশুদের সামাজিক বৈষম্য রোধে তেমন কোন ভূমিকা দেখা যায় না। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বয়ং শিক্ষকদের দ্বারাই যে শিশুরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তা হতে উত্তরণে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না বললেই চলে। শিক্ষাঙ্গনে দুজন শিক্ষার্থীর প্রতি দু’ধরণের আচরণের কারণেও শিশুমনে সামাজিক অনীহার জন্ম নিতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শিশুদের শৌচাগার ব্যবহারে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে অসচেতন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া সকল বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আলাদা শৌচাগার, যা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও বৈষম্য সৃষ্টি করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে এমন তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে দারিদ্র্যতার কষাঘাত ও কিশোর গ্যাংয়ের নেতিবাচক তৎপরতার জন্য শিশুরা বিদ্যালয়মুখী না হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানের কাজে শিশু শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় শিশুরা কম সময় ও স্বল্প শ্রমে চোরাচালানে শ্রম দেয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে শিশুরা এসব অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এতে খুব অল্প বয়সে শিশুরা মাদকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়। তবে গণপরিবহণে কর্মরত শিশুশ্রমিকরাই মাদক ও অপরাধের সঙ্গে বেশি জড়ায় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিফ কনসালটেন্ট ডাঃ শোয়েবুর রেজা চৌধুরী বলেন, শিশুদের মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হলো মানসিক মোটিভেশনের অভাব। তিনি বলেন, সামাজিক অবহেলা ও বৈষম্যের কারণেও শিশুদের মনে সমাজের প্রতি অনীহা ও ক্ষোভের জন্ম হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিলে শিশুদের সামাজিক সমতা পেতে সহায়তা করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। শিশুদের মানসিক বিকাশের এ দায়িত্ব মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপরও বর্তায়। তবে কোন শিশু যদি একবার মাদকাসক্ত হয়ে যায় তা সম্পূর্ণরূপে কখনোই নিরাময় করা সম্ভব নয়। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবসার উদ্দিন জানান, প্রতিবছর ডিসেম্বরে আমরা শিশুদের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির জন্য শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করলেও পরে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। পরিবারের চাপের কারণে তারা অর্থ উপার্জনের আত্মনিয়োগ করে। তিনি বলেন, অর্থ উপার্জনের প্রতি পরিবারের এ চাপ সৃষ্টি করার দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত দারিদ্রের কষাঘাত দ্বিতীয়ত পিতা-মাতার বাড়তি উপার্জনের লালসা। সুতরাং সকল শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা গেলে শতভাগ নিরক্ষরতা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি শিশুদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। তবে ধনী-গরীবের সামাজিক বৈষম্যও শিশুদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার সৃষ্টির অন্যতম কারণ। রাজবাড়ী সদর উপজেলার ডাউকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদা খাতুন জানান, সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। আবার কিছু কিছু বিদ্যালয়ে উন্নত শৌচাগার ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলোকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন ও পরিচর্যা করার উদ্যোগ খুব কমই দেখা যায়। প্রতিবছর শিশুদের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির জন্য বিদ্যালয় থেকে উদ্যোগ নিলেও বছর শেষে বেশকিছু শিশু স্বাক্ষরতার আওতার বাইরে থেকেই যায় জানান এ প্রধান শিক্ষক। তিনি আরো বলেন, আবার এমন কিছু শিশু আছে যাদের অনেক চেষ্টার পরও শিক্ষাঙ্গণমুখী করা যায় না। স্বাক্ষরতার চেয়ে তাদের কাছে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। লেখক: মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার, সংবাদকর্মী

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App