×

মুক্তচিন্তা

পাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৮ এএম

পাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
যার ডাকে মুক্তিকামী মানুষ দেশমাতৃকার জন্য পাকিস্তানিদের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে পরোয়া করেনি। ইতিহাসের সেই মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সেই কালো দিন ফিরে এল অতল বেদনার আবহে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে স্বাধীনতার রূপকার ও স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনকালে নিজ জেলা গোপালগঞ্জের (ফরিদপুর) পর সবচেয়ে বেশিবার তিনি পাবনায় এসেছেন। তাঁর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে জানা যায় ১৯৫৩ সালে পাবনায় এসে আওয়ামী লীগের প্রথম জেলা কমিটি গঠন করেছিলেন। উক্ত কমিটিতে ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী সভাপতি এবং আব্দুর রব বগা মিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর এত বেশিবার পাবনায় সফর করার বিষয়ে নানা চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু পাবনাকে নিজের জেলার মত মনে করতেন। এই পাবনায় তাঁর একমাত্র ছোট ভাই শেখ নাসেরের শ্বশুর বাড়ি। এই পাবনায় তাঁর অসংখ্য বন্ধু এবং সহপাঠী ছিলেন। যাদের সাথে কলকাতায় পরিচয় হয়েছিল। এদের অনেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনৈতিকভাবে যুক্ত হয়েছিলেন। পাবনায় রাজনীতির বাইরে অনেকের সাথে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠতা ছিল। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল ঢাকার পুরানা পল্টনের ৫১/এ নম্বর বাড়িতে। যে বাড়ির মালিক ছিলেন পাবনার হোসিয়ারী ও বিড়ি ব্যবসায়ী হোসেন আলী খাঁ’র ভাই আফসার আলী খাঁ। সে সুবাদে উক্ত পরিবারের সাথে বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে পাবনায় এসেছেন। কখনো এসেছেন সাংগঠনিক সফরে। কখনো এসেছেন ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে। এরমধ্যে দুইবার আসতে হয়েছে শোক বিহ্বল ভগ্ন হৃদয় নিয়ে। একবার ১৯৭০ সালে ২৫ ডিসেম্বর আসেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আহমেদ রফিক হত্যাকাণ্ডের পর। আর শেষবার আসেন ১৯৭৩ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুর রব বগা মিয়া মৃত্যুবরণ করার পর। বঙ্গবন্ধু এই দুইবার স্বজন হারানোর বেদনায় শিশুর মত অশ্রুবিসর্জন দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সাথে পাবনা সফর করেছেন। এরমধ্যে দুটি সফর উল্লেখযোগ্য। একটি ১৯৬৬ সালের ৭ এপ্রিল পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠের জনসভা। সেদিন তিনি প্রথম প্রকাশ্যে ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন। এরপর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় তিন বছর একটানা জেলে বন্দী ছিলেন। আর পাবনায় দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য সফরটি ছিল ১৯৭২ সালের ১০ মে। পাবনায় বঙ্গবন্ধুর সফর স্মৃতি নিয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছেন পাবনার সন্তান বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি তাঁর ‘আমার দেখা বঙ্গবন্ধু’ প্রবন্ধে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৬৬ সালের ৮ এপ্রিল। ছয় দফার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রচারণায় এদিন পাবনা টাউন হলে আয়োজিত একটি জনসভায় যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। যতদূর দেখেছি ও জেনেছি- ছয় দফাকে স্বাধীনতার সিঁড়ি ভাবতেন জাতির জনক। বলতেন- 'ছয় দফায় যে পূর্ব পাকিস্তানের সাড় পাঁচ কোটি শোষিত-বঞ্চিত আদম সন্তানের কথাই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নাই।' অধিকার আদায়ের এ চিন্তা থেকেই ৬ দফার আন্দোলন দেশব্যাপী প্রচার করতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। সেই ধারাবাহিকতায় পাবনায় (টাউন হল) সমাবেশ করতে আসা। তার আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আমার চাচা আব্দুর রব বগা মিয়ার বাসায় দুপুরের খাবার খেলেন। সেখানেই জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গেলাম। বিশেষ সাক্ষাতের সুযোগ হলো। বগা চাচা বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মী এম মনসুর আলী, এম এইচ কামারুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২। বন্যা কবলিত মানুষকে বাঁচাতে কাশিনাথপুর/নগরবাড়ীতে ‘মুজিববাঁধ’ উদ্বোধন করতে আরেকবার পাবনা আসেন জাতির জনক। আমি তখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। স্বভাবতই জনসভার স্বাগত বক্তব্যের দায়িত্ব আমার ওপর পড়ল। বক্তৃতা শেষে মঞ্চ থেকে যখন মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়েছি, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু আমার হাত ধরে ফেললেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাঁড়িয়ে গিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন- ‘তুই তো ভালো বলিস’। বঙ্গবন্ধুর বুকে লেপ্টে আছি; কী বলব কী বলা উচিত, বুঝতে পারছিলাম না। মুহূর্তের জন্য হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম জাতির পিতার দিকে। পরে দুই-একটি কথা বলে স্টেজের পাশে গেলাম। পরে এই ভেবে আনন্দিত হলাম যে, মাত্র ১৮ মিনিট বক্তৃতায় যিনি সাত কোটি মানুষকে এক সুতোয় গেঁথেছিলেন, লাখ লাখ মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছেন; সেই মানুষটি যখন আমার ভাষণের প্রশংসা করলেন, তখন সেটা নিঃসন্দেহে ছোট ব্যাপার নয়। বঙ্গবন্ধুকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার মধ্য দিয়ে যথারীতি অনুষ্ঠান শেষ হলো। বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারে উঠতে যাচ্ছেন, এমন মুহূর্তে আমার কাছে জানতে চাইলেন- ঢাকা যাব কি-না? আগে-পাছে চিন্তা না করে রাজি হয়ে গেলাম। প্রথমবারের মত হেলিকপ্টার ভ্রমণের সুযোগ হলো, তা-ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। ঢাকায় হেলিকপ্টার থামলো পুরাতন বিমানবন্দর তেজগাঁওয়ে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দিলেন- ‘ওকে (আমাকে) বাসায় নিয়ে খেতে দাও, তারপর খরচ দিয়ে পাবনা পাঠিয়ে দিও’। বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছেন পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র জাতিকে ৬ দফার আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য দেশব্যাপী প্রচার অভিযান শুরু করেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় প্রতিটি জেলায় তিনি জনসভা, পথসভা ও কর্মীসভার মাধ্যমে আন্দোলনকে বেগবান করে তোলেন। ৬ দফার আন্দোলনে শরিক হওয়ার প্রচার অভিযানের অংশ হিসাবে তিনি পাবনায় আসেন এবং পাবনা টাউনহল মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেন। সেদিনের বঙ্গবন্ধুর জনসভা সফল করার জন্য আমরা একাধিকবার মিটিং করি। আমরা একেকজন একেক দায়িত্ব ভাগ করে নেই। সবার অংশগ্রহণে সেদিনের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এছাড়াও নকশালদের হাতে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমসিএ) আহমেদ রফিক খুন হবার পর ও আবদুর রব বগা মিয়া মারা যাবার খবরে পাবনায় ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন ও তাঁর সহচার্য লাভ করেছিলেন পাবনার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক আমিরুল ইসলাম রাঙা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখি ১৯৬৬ সালের ৭ এপ্রিল পাবনা টাউন হলে। তখন আমি ১৩/১৪ বছরের কিশোর। সেদিনের সেই মনোমুগ্ধকর ভাষণই আমাকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট করে। ১৯৭০ সালে দেখেছিলাম দুইবার। একবার রাজনৈতিক সফরে পাবনা এলে বগা চাচার বাড়িতে উনার সাক্ষাৎ পেয়ে ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ এর বিরুদ্ধে আমার লেখা কবিতা শোনানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। আমিরুল ইসলাম রাঙা বলেন, তারপর দেখা ১৯৭২ সালের ১০ মে। স্বাধীন বাংলার প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুইদিনের জন্য পাবনা সফরে আসেন। যথারীতি নির্ধারিত সময়ে হেলিকপ্টার নিয়ে পাবনা স্টেডিয়ামে (জিন্নাহ পার্ক) অবতরণ করলেন। সফরসঙ্গী তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ। স্টেডিয়ামে হাজার হাজার জনতা। পুলিশ, মিলিটারি আর পাহারাদার চোখে পড়ছে না। হেলিকপ্টার অবতরণের পর বঙ্গবন্ধু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সকল মানুষকে হাত নেড়ে সালাম জানাচ্ছেন আর স্বভাবসুলভ সেই হাত নিজের মাথায় বুলিয়ে নিচ্ছেন। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারের সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলেন। স্টেডিয়ামে হাজার হাজার জনতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু সবার সাথে হাত মিলাচ্ছেন। কথা বলছেন আবার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরছেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। বঙ্গবন্ধুকে বরণ করার জন্য নিজের হাতে বানানো মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সাথে আছেন পাবনা পলিটেকনিকের তৎকালীন জিএস আবদুল হাই তপন, আবুল কাশেম বিশ্বাস, আল মাহমুদ নিটু প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু আমার কাছে এলে উনাকে মাল্যদান করে বললাম আমি রাঙা। পাবনা জেলা ছাত্রলীগের মুখপত্র সাপ্তাহিক ইছামতি পত্রিকার সম্পাদক। পাবনা জেলা স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক। আমি আপনাকে পাকিস্তান দেশ কৃষ্টির বিরুদ্ধে লেখা কবিতা শুনিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমার কথা শেষ না হতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আশীর্বাদ ও ভালবাসায় সিক্ত করলেন। সন্ধ্যার পর বনমালীতে নাগরিক সংবর্ধনায় স্বহস্তে লিখিত মানপত্র দেবার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেদিনের বক্তব্যের শেষে পাবনাবাসীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।’ বঙ্গবন্ধুর পাবনা সফরের পরিসংখ্যান আগেই উল্লেখ করা হয়েছে নানানভাবে পাবনার সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক জড়িয়ে ছিল। তিনি পাবনায় প্রথম আসেন ১৯৫৩ সালে এবং সর্বশেষ আসেন ১৯৭৪ সালে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ২১ বছরে অন্তত ১৫ বার তিনি পাবনা সফর করেন। মতান্তরে অনেক লেখক ও গবেষক আরও অধিকবার বঙ্গবন্ধুর পাবনা জেলা সফর করার তথ্য প্রকাশ করেছেন। তবে বহু বই ও গবেষণাপত্র ঘেঁটে ১৪ বার পাবনায় আসার সুনির্দিষ্ট তারিখ ও তথ্য পাওয়া গেছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো- প্রথমবার ১৯৫৩ সালে প্রথমবারের মত পাবনায় আসেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথম আগমন করেন সাংগঠনিক সফরের অংশ হিসেবে। তাঁর সাথে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান ছিলেন। পাবনায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মত বিনিময় করেন। এ সফরে বঙ্গবন্ধু পাবনা এসে আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠন করেন। লোকজনের অভাবে তাঁকে কমিটি গঠন করতে কষ্ট পেতে হয়েছিল। থাকার জায়গারও সমস্যা ছিল। অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের লিখনিতে পাওয়া যায়, “… এইভাবে বিভিন্ন জেলায় কমিটি করতে পারলাম। কিন্তু রাজশাহীতে পারলাম না। পাবনায়ও কেউ এগিয়ে আসল না। থাকার জায়গা পাওয়া কষ্টকর ছিল। পরে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবদুর রব ওরফে বগাকে দিয়ে একটা কমিটি করলাম। অন্য কোনো লোক পাওয়া গেল না বলে, কয়েকজন ছাত্রের নাম দিয়ে দিলাম। পাবনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই ঘণ্টার নোটিশে এক সভা ডাকল টাউন হল মাঠে। মাইক্রোফোন ছিল না। আমি ও আতাউর রহমান সাহেব মাইক্রোফোন ছাড়াই সভা করলাম। এইভাবে উত্তরবঙ্গ সেরে আবার দক্ষিণ বঙ্গে রওনা করলাম।” তবে ওইদিন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন পাবনা উকিল বারের তরুণ আইনজীবী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, সৈয়দ ফজলে এলাহী আব্দুর রব বগা মিয়া, তৎকালীন এডওয়ার্ড কলেজের ভিপি আব্দুল মমিন তালুকদারসহ আরও অনেকে। ওইদিনই পাবনা বারের তরুণ আইনজীবী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে সভাপতি এবং সৈয়দ ফজলে এলাহী আব্দুর রব বগা মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়। পাবনায় নতুন উদ্যমে শুরু হয় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। একই বছর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আবারো উত্তরবঙ্গ সফর করেন বঙ্গবন্ধু। অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে এ সফরে পাবনা আগমনের স্পষ্টতা নেই। তবে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। গ্রন্থটিতে উল্লেখ আছে, “…. সিলেট থেকে শুরু করে দিনাজপুর এবং বগুড়া থেকে বরিশাল প্রত্যেকটা জেলাই আওয়ামী লীগ কর্মীরা সভার আয়োজন করেছিল। একমাত্র রাজশাহীতে জনসভা হয় নাই, তবে নাটোরে হয়েছিল।” দ্বিতীয়বার ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয়বার পাবনা সফরে আসেন। সেই সফরে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকসহ অনেক নেতৃবৃন্দ পাবনায় এসেছিলেন। উল্লেখ্য সেই নির্বাচনে পাবনা সদর থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা বানু প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। উক্ত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে তাঁরা সরকার গঠন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রী হয়েছিলেন। তৃতীয়বার ১৯৬২ সালে ১৫ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনার ঈশ্বরদীতে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা সভায় এসেছিলেন। সেই সভায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হোসেন সরকার, শাহ আজিজুর রহমানসহ অনেক নেতাকর্মী এসেছিলেন। সেই নির্বাচনে পাবনা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আমজাদ হোসেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। চতুর্থবার ১৯৬২ সালের ৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আবার পাবনা সফরে এসেছিলেন। সেবার পাবনা স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। পঞ্চমবার ১৯৬৪ সালের ৯ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার পাবনায় এসেছিলেন। সেবার প্রধান অতিথি হিসেবে পাবনা টাউন হল মাঠে জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। ষষ্ঠবার ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবীতে ৬ দফা পেশ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার সাথে সাথে তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান এবং তাঁর সরকারের টনক নড়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রলীগ ১১ দফা ঘোষণা করে। তৎকালীন আওয়ামী লীগের ৬ দফা এবং ছাত্রলীগের ১১ দফা ঘোষণার পর পূর্ব বাঙলার ছাত্র, শ্রমিক এবং সাধারণ মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ১৯৬৬ সালের ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনা সফরে আসেন। ওইদিন নগরবাড়ী ঘাটে হাজার হাজার জনতা বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা প্রদান করে পাবনা শহরে নিয়ে আসেন। বিকালে পাবনা টাউন হল মাঠে বিশাল জনসভা। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব বগা মিয়ার পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। সেদিন বঙ্গবন্ধু হাজার হাজার জনতার সামনে প্রথম ৬ দফা ঘোষণা করেন। পাবনার মানুষ মুহুমুহু করতালির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার প্রতি হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ জনসভায় বঙ্গবন্ধু ৬ দফা প্রস্তাবকে উভয় প্রদেশের জন্য ইংল্যান্ডের ম্যাগ্না কার্টার সঙ্গে তুলনা করেন। ১৯৬৬ সালের ৯ এপ্রিলের দৈনিক আজাদ তথ্য দিচ্ছে ১৯৬৬ সালের ৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার টাউন হল মাঠে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক বিশাল জনসভায় বক্তব্য পেশ করেন। এ জনসভার সংবাদ আজাদ (দৈনিক) ৯ এপ্রিল ১৯৬৬ শনিবার প্রথম পৃষ্ঠায় সপ্তম কলামে প্রকাশ করে। এর শেষ অংশ ছাপা হয়েছিল অষ্টম পৃষ্ঠার অষ্টম কলামে। দৈনিক ইত্তেফাক প্রকাশ করে ১৯৬৬ সালের ৯ এপ্রিল শনিবার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রথম কলামে এবং শেষ অংশ ছাপা হয়েছিল অষ্টম পৃষ্ঠার পঞ্চম কলামে। দৈনিক ইত্তেফাকে এই জনসভা সম্পর্কে লেখা হয়, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল এখানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে ঘোষণা করেন- প্রেসিডেন্ট আইয়ুব যদি পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় রাজধানী স্থানান্তরে রাজি হন, তবে তিনি ও তাহার দল ছয় দফা প্রত্যাহার করিতে প্রস্তুত’। পাবনায় ৬ দফা ঘোষণার কয়েকদিন পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। সপ্তমবার ১৯৬৯ সালের ২৩ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় আবারো পাবনায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনি পরের দিন শনিবার সকালে সেখান থেকে মোটরগাড়িতে নাটোরে রওনা দেন। তাঁর এ সফরের উদ্দেশ্য ছিল ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষের পাশে অবস্থান। এ বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাক ২৪ মে ১৯৬৯ তারিখ শনিবার প্রথম পৃষ্ঠায় পঞ্চম কলামে একটি ছোট প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার শেষ অংশ ছাপা হয় অষ্টম পৃষ্ঠার পঞ্চম কলামে। প্রতিবেদনটির অংশ বিশেষে উল্লেখ ছিল- ‘আওয়ামী লীগ নেতা জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী, জনাব আবদুল মোমিন, মিসেস আমেনা বেগম, জনাব শামসুল হক, মোল্লা মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন, বেগম নূরজাহান মোর্শেদ এবং ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ শেখ সাহেবের সঙ্গে রহিয়াছেন। প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ কর্মী নগরবাড়ী ঘাটে তাঁহাদের অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। গতরাত্রেই সুদূর বগুড়া, কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জ ও ভেড়ামারা প্রভৃতি এলাকা হইতে আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীরা পাবনা আসিয়া শেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন’। অষ্টমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনার নগরবাড়ি ঘাট হয়ে অনেকবারই উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করেছেন। ১৯৭০ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী যাওয়ার পথে নগরবাড়ি ঘাটে বিশাল সমবেত জনতা বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। বঙ্গবন্ধু এ সমাবেশে ভাষণ প্রদান করেন। তথ্যটি এপিপি’র প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী থেকে প্রতিবেদন করে পাঠায়। যা সংবাদ (দৈনিক) ১৯৭০ সালের ৩১ জানুয়ারি শনিবার ৭ম পৃষ্ঠায় ৪র্থ কলামে প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল- ‘শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক/শোষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহবান।’ নবমবার ১৯৭০ সালের মার্চের ৮ তারিখে পাবনায় এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি কুষ্টিয়া হয়ে পাবনা পৌঁছান। এখান থেকে তিনি বগুড়া গমন করেন। আসার পথে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পথসভায় বক্তৃতা দেন। দৈনিক ইত্তেফাক ১৯৭০ সালের ৯ মার্চ ১ম পৃষ্ঠায় ৪র্থ কলামে এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করে। সংবাদ প্রতিবেদনের শেষ অংশ আসে ১০ম পৃষ্ঠার ১ম কলামে। দৈনিক ইত্তেফাকে জনসভাটির ছবি এসেছিল ১৯৭০ সালের ১০ মার্চ। এ জনসভায় বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে দাবি জানান। দশমবার ১৯৭০ সালের ২৫ ডিসেম্বর পাবনায় নকশালপন্থীদের হাতে নিহত নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আহমেদ রফিক খুন হবার পর পাবনায় আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর এ সভাটি ছিল প্রতিবাদমূলক। নব-নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব আহমদ রফিক এবং খুলনার মোমতাজ উদ্দিনের হত্যার প্রতিবাদে এবং বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত রাখার উদ্দেশ্যেই এ জনসভার আয়োজন ছিল। পূর্বদেশ (দৈনিক) এর সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৯৭০ সালের ২৭ ডিসেম্বর বুধবার ১ম পৃষ্ঠায় ৪র্থ কলামে। এ জনসভায় বঙ্গবন্ধু পাবনাবাসীকে পূর্ণ শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানান। একাদশবার স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনায় প্রথমবার আসেন ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। সেবার ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে সরাসরি নগরবাড়ী এসে নামেন। সেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুজিব বাঁধ উদ্বোধন করেন। এরপর সংক্ষিপ্ত জনসমাবেশে বক্তব্য দিয়ে ঢাকা ফিরে যান। দ্বাদশবার ১৯৭২ সালের ১০ মে দুইদিনের জন্য পাবনা সফর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উত্তরাঞ্চল সফরের কর্মসূচিতে তিনি বিভিন্ন জেলা ভ্রমণের পর রাজশাহী থেকে হেলিকপ্টারে উড়াল দিয়ে পাবনায় অবতরণ করেন। পাবনার মানুষ ব্যাপক উদ্দীপনার মাধ্যমে তাঁদের প্রিয় মানুষটিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। তাঁর জনসভাও জনঅরণ্যে পরিণত হয়। ১০ মে সকালে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জলপাই রঙের বৃহৎ হেলিকপ্টারটি পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে অবতরণ করে। মাঠে হাজার হাজার বীর জনতার ‘জয় বাংলা’ আর ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ গগনবিদারী শ্লোগানে হেলিকপ্টারের বিকট আওয়াজ যেন ছাপিয়ে পড়ে। কোথাও নিরাপত্তা বাহিনী নেই। সুশৃঙ্খল জনতাই যেন বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তারক্ষী। হেলিকপ্টার অবতরণ আর বিকট শব্দ নিয়ন্ত্রণ করার পর হেলিকপ্টারের দরজা উন্মুক্ত হলে বঙ্গবন্ধু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন আর বীর জনতাকে হাত তুলে সালাম জানাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর হাত তুলে সালাম জানানো এবং সেই হাত নিজের মাথায় বুলিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধু যেন জানান দিচ্ছেন, বাঙালী জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নাই। বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছেন। তাঁর পিছনে সফরসঙ্গী মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য সফরসঙ্গী নেমে আসছেন। অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন পাবনার জেলা প্রশাসক আকবর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব বগা মিয়া এমসিএ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উদ্দিন খান, জেলা মুক্তিবাহিনীর অন্যতম প্রধান রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবী ইসলাম, ফজলুল হক মন্টু এবং আরও অনেকে। নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে বরণ করার পর পাবনার এসপি পঙ্কজ কুমার মিত্রের নেতৃত্বে চৌকস পুলিশ বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর সারিবদ্ধ জনতার কাতারে বঙ্গবন্ধু সবার সাথে হাত মেলাচ্ছেন, কথা বলছেন এবং কাউকে কাউকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরছেন। বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা থেকে কেউ বাদ পড়ছে না। সন্ধ্যায় বনমালী ইন্সটিটিউটে নাগরিক সংবর্ধনা শেষে পাবনা সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করেন। সেখানে রাত্রি যাপন করে পরেরদিন ১৯৭২ সালের ১১ মে সকাল ১১টার দিকে শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। এ বিষয়ে পূর্বদেশ (দৈনিক) ১১ মে ১৯৭২ বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শিরোনামে কয়েকটি প্রতিবেদন ছাপে। তার ১ম পৃষ্ঠার ১ম কলামে ছিল জনসভার সংবাদ। যার শেষাংশ আসে ৮ম পৃষ্ঠার ৭ম কলামে। সংবাদ প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল- ‘পাবনার জনসভায় জনসাধারণের অভাব অভিযোগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর আশ্বাস/সামর্থ্য অনুসারে সব কিছুই করা হবে।’ ত্রয়োদশবার ১৯৭৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে আবারো পাবনায় দেখা যায়। তাঁর এ আগমন ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় এক সুহৃদের মৃত্যু। সেদিন পাবনায় এসেছিলেন এক হৃদয় বিদারক ঘটনায়। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে বলিষ্ঠ রাজনীতিবিদ পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাবনা সদর আসনের প্রার্থী আব্দুর রব বগা মিয়া মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। বঙ্গবন্ধু এ সংবাদ শুনে শিশুর মতো কেঁদে ওঠেন ও পাবনা ছুটে আসেন। ১৯৭৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারির বাংলার বাণী প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম কলামে ‘উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সম্বর্ধনা’ শিরোনামে তথ্য দিচ্ছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে সফররত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৫শে ফেব্রুয়ারি বিপুল সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছে। এ তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় বঙ্গবন্ধু ২৫শে ফেব্রুয়ারি নাটোরে অবস্থান করছিলেন এবং বগা মিয়ার মৃত্যু সংবাদ শুনে সন্ধ্যায় বা রাতে পাবনা ছুটে যান এবং রাতেই ফিরে আসেন। অনির্ধারিত এই সফরে এসে বঙ্গবন্ধু কয়েক ঘণ্টা পাবনা শহরে অবস্থান করেছিলেন। চতুর্দশবার বঙ্গবন্ধু এ সফরে পাবনার ওপর দিয়ে উড়ে যান। বিমানে ২ ঘণ্টার ভ্রমণে আকাশ থেকে শুধু টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, জামালপুর ও বগুড়ার বন্যা প্লাবিত এলাকার দৃশ্য দেখেন। দৈনিক বাংলার বাণী এ ঘটনার সংবাদ নিয়ে আসে ১৯৭৪ সালের ৯ জুলাই মঙ্গলবার প্রথম পৃষ্ঠার ষষ্ঠ কলামে। তথ্যপঞ্জি: ১. অসমাপ্ত আত্মজীবনী। শেখ মুজিবুর রহমান। জুন ২০১২। ২. আমার দেখা বঙ্গবন্ধু। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৫ আগস্ট ২০২১। ৩. বঙ্গবন্ধু: ইতিহাসের অমর মহানায়ক। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৭ মার্চ ২০২২। ৪. বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা থেকে বাদ পড়েননি কেউই। গোলাম মওলা। ১৬ জানুয়ারি ২০২০। ৫. সেই সুখ স্মৃতি আজও জীবন্ত, পাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। পাবনার খবর। ১৮ জানুয়ারি ২০২০। ৬. যমুনার জল ছুঁয়ে যাওয়া এই জনপদ: মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। ৭. উত্তরবঙ্গে বঙ্গবন্ধু। আনারুল হক আনা। ২৪ আগস্ট ২০২০। ৮. মুক্তিযুদ্ধের কিছু কথা পাবনা জেল। আবুল কালাম আজাদ। ১৯৯১। ৯. স্বাধীনতা যুদ্ধে পাবনার পশ্চিম রণাঙ্গন। রবিউল আলম সেন্টু। ২০১০। লেখক: মিজানুর রহমান সোহেল, হেড অব অনলাইন, ভোরের কাগজ

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App