×

তথ্যপ্রযুক্তি

গোপন ক্যামেরা: কী করবেন কী করবেন না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১১:২৫ পিএম

গোপন ক্যামেরা: কী করবেন কী করবেন না

গোপন ক্যামেরা: কী করবেন কী করবেন না

গোপনে ভিডিওর মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা বা সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন) এখন বেশ পরিচিত। গোপন ক্যামেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ডিভাইস। এই বিশেষ উপকরণটি নিজস্ব অথবা ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য  ব্যবহৃত হতে পারে এবং সামাজিক অথবা নাগরিক কার্যক্রমে এটির উপকারিতা অনেক। তবে, এই ক্যামেরা স্থাপন করা বা ব্যবহার করার আগে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোনিবেশ করা জরুরি।

১. আইন এবং নীতি মেনে চলা: গোপন ক্যামেরা ব্যবহারের জন্য অবশ্যই স্থানীয় আইন এবং নীতি মেনে চলা জরুরি। এটির ব্যবহারে সম্পূর্ণ অনুমতি প্রাপ্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

২. উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা: ক্যামেরা স্থাপনের আগে, আপনার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে স্থাপন করা জরুরি। 

৩. ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত ব্যবহার নির্দিষ্ট করা: গোপন ক্যামেরা স্থাপনের আগে, তা কি ধরনের ব্যবহারে আসবে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করুন। ক্যামেরার ব্যবহার ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনগুলো মনোনিবেশ করুন।

৪. প্রয়োজনে সুরক্ষা বৃদ্ধি করুন: ক্যামেরা স্থাপন এবং ব্যবহারের জন্য আবশ্যক সুরক্ষা প্রয়োজন, যাতে এটি দুর্যোগ বা আক্রমণের খোঁজ করতে সাহায্য করতে পারে।

৫. গোপনীয়তা মেনে চলা: গোপন ক্যামেরা স্থাপনের জন্য গোপনীয়তা মেনে চলা জরুরি। অনুমোদন প্রাপ্ত করার আগে, আপনার ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে মনোনিবেশ করুন।

গোপন ক্যামেরা একটি শক্তিশালী সুরক্ষা সাধনের উপায়, তবে এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা জরুরি যাতে সামাজিক সংবাদ এবং আইন একসাথে রক্ষা করা হতে পারে।

গোপন ক্যামেরা: বিস্তারিত নজরদারি এবং সুরক্ষার কৌশল সম্পর্কে সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক জেনিফার আলম বলেন, গোপন ক্যামেরা স্থাপন করার পূর্বে এবং তাদের ব্যবহারে একটি সঠিক উদ্দেশ্য স্থাপন করতে এবং সুরক্ষা মেনে চলতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মন্তব্য করা গুরুত্বপূর্ণ।

১. স্থান নির্বাচন এবং অনুমতি:

গোপন ক্যামেরা স্থাপনের আগে, আপনার উদ্দেশ্যটি স্পষ্টভাবে জানা জরুরি। ক্যামেরার উপস্থাপন বা দিক নির্বাচন করার জন্য মনোনিবেশ করুন এবং যেভাবে এটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার হবে তার উদ্দেশ্যে বিবেচনা করুন। অনুমতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থানীয় আইনের সাথে মেলানো আবশ্যক।

২. সুরক্ষা মানদণ্ড মেনে চলা:

ক্যামেরা স্থাপনের সময়ে এবং তাদের ব্যবহারের সময়ে সুরক্ষা মানদণ্ড মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। ক্যামেরা স্থাপন করার পর, এটির চুরি, অন্যান্য সাংঘাতিক হয়রানি অথবা আক্রমণ হওয়ার জন্য সুযোগ কমাতে সাহায্য করতে সুরক্ষা উপায়গুলি নেওয়া জরুরি।

৩. মনিটরিং এবং প্রয়োজনে পূর্বানুমতি:

গোপন ক্যামেরা মনিটর করা হওয়া জরুরি, যাতে আপনি সর্বদা একটি নজর রাখতে পারেন। প্রয়োজনে, যদি আপনি এমন একটি স্থানে থাকেন যাতে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, তবে প্রয়োজনে পূর্বানুমতি অনুমোদন প্রদান করুন যাতে অন্যকে ব্যবহার করার জন্য অনুমতি প্রদান করা হতে পারে।

৪. গোপনীয়তা মেনে চলা:

গোপন ক্যামেরা ব্যবহারের সময়ে গোপনীয়তা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। স্থাপিত ক্যামেরাগুলির ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ব্যবহারকারীদের জন্য অনুমতি নিতে না হলে, ক্যামেরার উপস্থিতি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ।

৫. ক্যামেরা ডেটা সুরক্ষা:

ক্যামেরা ডেটা সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কেউ অনুধাবন অথবা সাধারণভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ক্যামেরার সিস্টেমের সুরক্ষা উপায়গুলি প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে যান এবং প্রয়োজনে ডেটা এনক্রিপ্ট করতে সহায়ক হতে পারে। গোপন ক্যামেরা স্থাপন এবং ব্যবহার সম্পর্কে আপনির অবগত এবং সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তা সুরক্ষিত এবং কার্যকর হতে পারে। গোপন ক্যামেরা থেকে নিরাপদ থাকার ব্যাপারে জেনিফার আলমের পরামর্শ-

১. কখনো ট্রায়াল রুমে গিয়ে পোশাক প্রথমেই পরিবর্তন করে ফেলবেন না। বরং কাপড়ের ওপর তা পরীক্ষা করে দেখুন। ট্রায়াল রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে বা আলো রেখে চেক করে ফেলুন এবং খেয়াল করে দেখুন কোনোভাবে নজরদারি করা হচ্ছে কি না বা কোথাও কোনো ক্যামেরা বসানো রয়েছে কি না, কোন আলো জ্বলছে কিনা। আশপাশে কোথাও কাপড় ঝোলানো থাকলে তার আড়ালে কোনো ক্যামেরা আছে কি না, পরীক্ষা করে দেখুন।

২. টয়লেট বা ওয়াশ রুমে গিয়ে একবার অন্তত গোপন  ক্যামেরা বা সিসিটিভির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। বিশেষ করে হোটেল, বিউটি পার্লার, দোকানের ট্রায়াল রুমে সতর্ক থাকুন।

৩. ট্রায়াল রুমে সাধারণত আয়না থাকে। আঙুল ঠেকিয়ে দেখুন তা সত্যিকারের আয়না কি না। কারণ, নকল আয়নার মাধ্যমে দৃষ্টি বিভ্রম ঘটিয়ে প্রতারণা করা হতে পারে। আসল আয়নার সঙ্গে নকল আয়না বা ট্রান্সপারেন্ট গ্লাস যুক্ত থাকতে পারে। এতে একপাশ থেকে নিজের চেহারা দেখা গেলেও অন্যপাশ থেকে কেউ দেখছে কি না তা বোঝার উপায় থাকে না। এ ধরনের আয়না শনাক্ত করতে আঙুল আয়নার ওপর রাখুন। যদি আপনার আঙুলের মাথার প্রতিবিম্ব আঙুলের মাথার সঙ্গে না লাগে (মাঝে যদি ফাঁকা থাকে) তাহলে আয়নাটি সাধারণ বা আসল। আর যদি আঙুলের মাথা প্রতিবিম্বের মাথার সঙ্গে লেগে যায়, তার মানে আয়না নকল।

৪. গোপন ক্যামেরা থাকতে পারে, এমন স্থানে আপনার সন্দেহ হলে চারপাশে কোথাও ছিদ্র আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখুন। দরজা-জানলা বা দেয়ালের ফাঁকফোকর দিয়ে মোবাইলে কেউ ছবি তুলছে কি না, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে। সিসিটিভি বা মোবাইলে তোলা এ ফুটেজ অনেক ক্ষেত্রে নানা অশ্লীল সাইটে বিক্রি বা ব্ল্যাকমেইল করা হয়।

৫. অপরিচিত স্থানে ঘুমানোর আগে উজ্জ্বল আলো নিভিয়ে রাখা ভালো।

৬. এখন বড় বড় মার্কেট থেকে শুরু করে ছোটখাটো দোকানেও গোপন ক্যামেরা থাকতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসে গোপন ক্যামেরা শনাক্তকরণ অ্যাপস পাওয়া যায়। প্রয়োজনে এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন কোথাও ক্যামেরা লুকানো রয়েছে কি না। হোটেলে বা শপিং মলের ট্রায়ালরুমে গিয়ে অনেকেই অস্বস্তিতে ভোগেন। গোপন কোনো ক্যামেরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে কি না তা নিয়ে মনে শঙ্কা থাকে। গোপন ক্যামেরা খুঁজতে স্মার্টফোন কিভাবে ব্যাবহার করা যায় এই বিষয়ে জেনিফার আলম বলেন, গোপন ক্যামেরা খুঁজে বের করতে স্মার্টফোনের ক্যামেরা কাজে লাগাতে পারেন। কম আলোতে ছবি তুলতে কম দামি কিছু ক্যামেরা ইনফ্রারেড (আইআর) লাইট ব্যবহার করে।

যেভাবে খুঁজবেন ইনফ্রারেড লাইট

* প্রথমে ফোনের ক্যামেরা চালু করুন এবং রিমোটের দিকে তাক করুন।

* এতে রিমোটের লাইট জ্বলে উঠবে। হয় জ্বলেই থাকবে, নয়তো জ্বলবে-নিভবে।

* এভাবে যদি কাজ না হয়, তবে ফ্রন্ট ও রিয়ার দুই দিকের ক্যামেরা দিয়েই চেষ্টা করে দেখুন।

* আর কাজ হলে ফোন হাতে নিয়েই পুরো রুম স্ক্যান করুন। কোনো সক্রিয় ক্যামেরা থেকে থাকলে আপনি অবশ্যই ইনফ্রারেড লাইট দেখতে পাবেন।

নেটওয়ার্ক দেখে শনাক্ত করুন

লোকাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে কোন কোন ডিভাইস কানেক্টেড আছে সেটা দেখতে ‘ফিঙ্গ’ নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। কোনো ক্যামেরা থেকে থাকলে সেটার নামও তালিকায় দেখা যাবে। নেটওয়ার্ক অ্যানালাইজার অ্যাপটি অ্যানড্রয়েড ও আইওএস—দুটি প্ল্যাটফরমেই ব্যবহার করা যাবে। যদি এরপরও কিছু না পান, তবে নিশ্চিত হতে বাজার থেকে কিনতে পারেন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর। মাইক্রোফোন বা ক্যামেরা থেকে আসা যেকোনো সিগন্যাল এটি শনাক্ত করতে পারবে।

সমাধান কী? কাকে জানাবে?

গোপন ক্যামেরা আক্রান্ত হলে প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়গুলো অবগত করতে হবে এবং ১৮ বছরের কম বয়সী হলে পরিবারকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানকে অবগত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সকল ধরনের আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App