×

তথ্যপ্রযুক্তি

বেসিস নির্বাচন

পলিসি লেভেলে কাজ করতে চান মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪, ০১:১২ পিএম

পলিসি লেভেলে কাজ করতে চান মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ

এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ। ছবি: ভোরের কাগজ

দেশের সফটওয়্যার সেবা খাতের বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ২০২৪-২৬ মেয়াদী কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন আগামী ৮ মে। নির্বাচনে ‘টিম সাকসেস’ প্যানেল থেকে অংশ নিচ্ছেন এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ। ২০২১ সালের ১৮ মে বেসিসকে নির্বাচনী ধারায় ফিরিয়ে আনতে হাইকোর্ট তার আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি করেন। কোনো আইনি কর্তৃত্ব ও প্রক্রিয়া ছাড়াই বেসিসের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সময় বাড়ানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করলে আমিনউল্লাহ ব্যাপক আলোচনায় আসেন। তার চেষ্টার প্রেক্ষিতে বেসিস পুনরায় নির্বাচনী ধারায় ফিরে আসে। 

গত ১৭ বছর ধরে বেসিসে বহু স্ট্যান্ডিং কমিটির দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে পলিসি লেভেলে কাজ করতে চান। ডিজিটাল পরিষেবায় অসংখ্য আইনগত বিষয় রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। বিশেষত সফটওয়্যার বা সংশ্লিষ্ট নতুন উদ্ভাবন করার পরেও অনেকে কপিরাইট বা প্যাটেন্ট নিয়ে চিন্তা করেন না। ফলে প্রতিষ্ঠানটি বড় হলে নানান জটিলতায় পরেন। এছাড়া ট্যাক্স বা আইনি বিভিন্ন প্যাঁচ সম্পর্কে ধারণা না থাকার দরুন এ খাতের মানুষ বিপাকে পড়েন। এসব বিষয়ে সরাসরি নিজে সম্পৃক্ত হয়ে বেসিস সদস্যদের উন্নয়নে কাজ করতে চান মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ। এ সময়ে বহুল আলোচিত কর অব্যাহতি ২০৪১ সাল পর্যন্ত নিশ্চিত করতেও সরকারের শীর্ষ মহলে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে। তিনি নির্বাচিত হলে সুনির্দিষ্ট ১১টি কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

১. একজন আইটি ব্যবসায়ী ও আইনজীবী হিসেবে বেসিসের সদস্য কোম্পানিগুলোর জন্য সরকারের সকল পলিসি লেভেলে কাজ করতে চান তিনি।

২. স্থানীয় বাজার সফটওয়্যার ও শিল্পের মেধাস্বত্ব আইন, কপিরাইট, প্যাটেন্ট, ডিজাইন, ট্রেডমার্ক, ট্যাক্স, ভ্যাট, ট্যাক্স এক্সেম্পশন, ইনসেন্টিভসহ আইটি খাতকে সর্ববৃহৎ খাতে পরিণত করা পর্যন্ত সরকারের সাথে দর কষাকষি করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত কর এক্সেম্পশন এর দাবী আদায়ে ও সকল প্রকার আইন ও নীতিমালার উপযোগী সংশোধন এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেসিসের পক্ষে সরকারকে সরাসরি সহযোগিতা করে ও পলিসি লেভেলে জোড়ালোভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে চান তিনি।

এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ

৩. সরকারের সঙ্গে সকল নীতিমালা বাস্তবায়নে বেসিসের সংবিধান সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সম্পন্ন করতে যথাযথ কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন। তিনি তাঁর ৩২ বছরের চৌকস অভিজ্ঞতাকে বেসিসের জন্যে কাজে লাগাতে চান। বেসিসকে ঢেলে সাজাতে চান। কর, ভ্যাট ও যেকোনো আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে যেন কোনো বেসিস সদস্যদের ভোগান্তি না হয় সে ব্যাপারে কাজ করতে তিনি বদ্ধপরিকর। ইনসেন্টিভ ১০% থেকে ৮% এ নেমে এসেছে। সেটাকে পুনরায় ১০% এ পুনর্বহাল রাখার জন্যে জোড়ালোভাবে সরকারের সাথে দর কষাকষি করে নিশ্চিত করতে চান।

৪. তিনি বিশ্বাস করেন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সফল হওয়ার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো সরকারের সাথে আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে সমন্বয়ক হয়ে সংগঠনের জন্য তথা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সহায়ক ও ব্যবসা বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন। আর তার জন্য প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের সহায়ক নীতিমালা ও পলিসি লেভেলে সরকারকে বুঝানো ও সরকারের সাথে কাজ করা। তিনি মনে করেন আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি সবেমাত্র রানওয়েতে টেকঅফ হতে যাচ্ছে। ঠিক এ সময়ে যদি সরকার আমাদের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়, তাহলে ইন্ডাস্ট্রি বড় হবে না। ইন্ডাস্ট্রি বড় না হলে এ দেশের আইটি খাত বড় হবে না। আর এই তথ্য ও প্রযুক্তি খাত বড় না হলে সত্যিকারের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই দেশকে স্মার্ট করতে হলে দেশের তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের ক্রমবর্ধমান সবচেয়ে বড় সংগঠন এই বেসিসকে বড় করতে হবে। তাই তিনি এটা নিয়ে সরকারের সাথে কাজ করতে চান।

৫. আর বেসিসকে বড় করতে হলে বেসিসকে আরো ইউনিফর্মড ও ডিসিপ্লিনড করতে হবে। বেসিস ইউনিফর্মড হলেই সদস্যরা আরো ইউনিফর্মড ও ডিসিপ্লিনড হবে, চাঙ্গা হবে, ইন্সপায়ার্ড হবে। আর সেই সাথে বেসিসকে আরো দক্ষ, স্মার্ট ও সময়োপযোগী সচিবালয় তৈরি করতে চান। বেসিসে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চান।

৬. তিনি নির্বাচিত হলে বেসিসে সবসময়ের জন্য ট্যাক্স, ভ্যাট, যেকোনো লিগ্যাল ইস্যু নিয়ে হেল্পডেস্কসহ একটি লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট খুলবেন। যেখানে বেসিসের সকল সদস্যরা ফ্রি পরামর্শ পাবেন। আর অন্যান্য লিগ্যাল ইস্যুতে যদি কোনো আইনজীবী কাজ করে সেক্ষেত্রে বেসিস সদস্যদের জন্য ৫০% ডিসকাউন্ট এর ব্যবস্থা করবেন।

৭. প্রত্যেকটা সদস্য কোম্পানির প্রোডাক্ট ও সেবাগুলোকে কপিরাইট, প্যাটেন্ট, ডিজাইন, ও রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক করে তাদের প্রোডাক্টের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে সকল প্রকার সেবা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন। তাহলে সফটওয়্যারও যে একটা সম্পদ ! সফটওয়্যারও যে একটা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি যা কী না ব্যাংক মর্টগেজ রেখে বেসিসের সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে লোন দিতে পারে। সে ব্যাপারে তিনি নিরলসভাবে কাজ করতে চান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত।

৮. দেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের তথ্য ও প্রযুক্তি খাত, বিদেশী ভাষা প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তি রপ্তানিতে বেসিসে ভূমিকা রাখতে চান। এই খাতই হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত।

৯. বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আলাদা বা শ্রম আইনের সংশোধন করে একটা সময়োপযোগী আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের সাথে কাজ করে সেটা নিশ্চিত করতে চান।

১০. একটি সদস্য প্রতিষ্ঠান যেন অন্য একটি সদস্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে লোভ দেখিয়ে না নিয়ে যেতে পারে, সেটার জন্য বেসিসে আলাদা একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে চান।

১১. আগামী দুই বছরে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে কোলাবরেশন করে কমপক্ষে ১০টি আইটি পার্ক/ভবন স্থাপন করার উদ্যোগ নিতে চান। যেখানে সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ শর্তে ও সাশ্রয়ী মূল্যে অফিসের সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক সকল সুবিধা ভোগ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ আমিনউল্লাহর বাবা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা একজন “রত্নগর্ভা” উপাধি প্রাপ্ত। সাত ভাই-বোনের মধ্যে মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ ষষ্ঠ সন্তান। তিনি কুমিল্লা জেলা স্কুল, নটরডেম কলেজ তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী  লাভ করেন এবং পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রী ও আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দুইজন কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোকগমন করেন।

আমিনউল্লাহ বিশ্বব্যাংকের একটি উইং এমজিএফে (ম্যাচিং গ্রান্ট ফ্যাসালিটি) ছয় বছর ফিন্যানশিয়াল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় দেশের প্রায় ৪০০ শত রপ্তানিকারকদের কমপ্লায়েন্স ডেভেলপমেন্টের জন্য ফান্ডিং করার বিশাল এক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে কিভাবে ফান্ডিং করে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যাওয়া যায় তার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করছেন। 

পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পারিবারিক ব্যবসা গার্মেন্টস ও এগ্রো ব্যবসার পাশাপাশি ২০০৪ সালে তথ্য প্রযুক্তি খাতে “এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেড” নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি গড়ে তোলেন।

গত ১৭ বছর যাবত বেসিসের সাধারণ সদস্য হিসেবে বেসিসে বহু স্ট্যান্ডিং কমিটির সাথে যুক্ত হয়ে বহু কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বেসিসের আইপিআর (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস) ফোরামের কনভেনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি আরও দুইটি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অতীতে আরো দুইটি স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বেসিসের প্রায় অর্ধ শতাধিক সদস্যদের ট্যাক্স ও লিগ্যাল বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

আমিনউল্লাহ প্রায় ২৬টি কর্পোরেট কোম্পানির লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রবি আজিয়াটা, বুলিয়ান মার্ট, ডিসিসিআই, বিডা, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, শিল্প ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ ইউনিট, ফ্লোরা, চালডাল ডটকম অন্যতম। 

তিনি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী ছিলেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে একজন সফল অ্যাথলেটও ছিলেন। বর্তমানে তিনি আইটি ব্যবসার পাশাপাশি আইনজীবী হিসেবেও সুপরিচিত। 

১৯৮৫ সালে স্পোর্টস ও সামাজিক জনকল্যাণমূলক “ঢাকা ইয়ুথ ক্লাব” নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবেও বেশ অনেক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২১ বছর যাবত নীড (ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ইম্যান্সিপেশন ফ্রম ডিজ্যাবিলিটি) নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠাতা করেন ও বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

টাইমলাইন: বেসিস নির্বাচন ২০২৪-২৬

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App