×

তথ্যপ্রযুক্তি

বাংলাদেশকে স্টার্টআপ হাব হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চান রাফসান সামির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ০৪:০৬ এএম

বাংলাদেশকে স্টার্টআপ হাব হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চান রাফসান সামির

উইনক্লাউড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফসান জানি সামির। ছবি: ভোরের কাগজ

আমি রাফসান জানি সামির। বেসিসের ২০২৪-২৬ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা রফিকুল ইসলাম ডিউক ভাইয়ের নেতৃত্বে ‘টিম সাকসেস’-এর পক্ষ থেকে অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরির একজন প্রার্থী। পড়াশোনা গ্রাজুয়েশন টেলিকম্যুনিকেশন এবং মাস্টার্স কম্পিউটার সাইন্সে। প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি ১৯৯৯ সালে স্কুল পড়ুয়া অবস্থায়। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি বড় হয়ে সফটওয়্যার বানাবো। ওই সময় আমাদের ইন্টারনেট ছিল কম্পিউটার ম্যাগাজিন। দেশি-বিদেশি অনেক কম্পিউটার ম্যাগাজিনে পাওয়া যেত তখন। কিন্তু আমি খুব ভাগ্যবান ২০০০ সালের শেষের দিকে বিটিসিএল ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া শুরু করে, তখন আমার জেলা শহর নোয়াখালীতে ২০০১ সালের শুরু থেকেই বিটিসিএল (তৎকালীন টিএনটি)-এর মাধ্যমে আমার বাসায় ইন্টারনেট ছিল। 

২০০১ সালের বিজ্ঞান মেলায় প্রথম আমার লেখা মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার প্রদর্শন করি। আমাদের ৯০ এর দশকের ছেলে-মেয়েদের জন্য কম্পিউটারের ইন্টারেস্টেড হওয়ার আরেকটা বড় কারণ ছিল বাংলার পথিকৃৎ জনাব মোস্তফা জব্বার ভাইয়ের বিটিভিতে প্রকাশিত ‘কম্পিউটার’ নামক টিভি প্রোগ্রাম। সত্যিকার অর্থে এর পরে এখন পর্যন্ত সেই স্বাদের টিভি প্রোগ্রাম আর পাইনি। জব্বার ভাইয়ের এই প্রোগ্রাম আমাদের অনেকের জীবনে এখনো দাগ কেটে আছে। আজকে অনেক ভালো লাগে যখন আমি নিজে জব্বার ভাইদের গড়া বেসিসে কার্যনির্বাহী পদের জন্য ‘টিম সাকসেস’-এর হয়ে নির্বাচন করছি। 

২০১০ সালে আমার প্রথম কোম্পানি ‘ক্লাউড কোডার’ শুরু করি। শুরু থেকেই একটু জটিল ধরণের কাজ এবং ‘আরএনডি (গবেষণা ও উন্নয়ন)’ পছন্দ করতাম। পছন্দের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এরিয়া ছিল টেলিকম্যুনিকেশন সুইচ এবং বিলিং। কালে ক্রমে অনেক ধনের প্রোডাক্ট এবং ক্লাউড সার্ভিস নিয়ে কাজ করেছি। ২০১৮ সালে এসে প্রথম জাপান থেকে মাইক্রোচিপ ডিজাইনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশে মাইক্রোচিপ ডিজাইন নিয়ে কাজ করার মত দক্ষ রিসোর্সে পাওয়া যায়নি সেই সময়। তারপরেও প্রায় ৪০০ জন ইঞ্জিনিয়ার থেকে ৫ জনকে আমরা সিলেক্ট করি এবং কাজের জন্য প্রস্তুত করি। জাপানের প্রজেক্ট প্রায় ৩ বছর চলে, এরপরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির জন্য একটি ‘এফপিজিএ’ ডিজাইন করি। এখন আমরা রিস্ক ফাইভ (RISCV) আর্কিটেকচারের উপরে একটি ডুয়েলকোর প্রসেসর ডিজাইনে দ্বারপ্রান্তে।

উইনক্লাউড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফসান জানি সামির 

ক্লাউড কোডারের সাম্প্রতিক আরেকটি উল্লেখযোগ্য ইনোভেশন হলো ‘ROYALGPT’ নামের প্রথম ৮ বিলিয়ন প্যারামিটার যুক্ত বাংলা এলএলএম (লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজে মডেল), রয়েলজিপিটি ল্যাঙ্গুয়েজে মডেলটি বাংলা ভাষায় করা প্রথম এলএলএম-এর একটি ভার্সন আমরা ওপেনসোর্স হিসাবে মার্কেটে রিলিজ করবো শিগগির। এছাড়াও আমি আরো কয়েকটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছি। সবগুলোই সফটওয়্যার বা আইটিইএস কোম্পানি।  

অ্যাসোসিয়েট কোম্পানিগুলোর জন্য প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধানতম হলো এক্সেস টু ফিন্যান্স। অ্যাসোসিয়েট বা স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো এখনো জানে না তাদেরকে কোম্পানি চালানোর জন্য লোন নিতে হবে নাকি ইনভেস্টমেন্ট নিতে হবে।  দেশ অথবা বিদেশ থেকে কিভাবে ফিন্যান্স সংগ্রহ করতে হবে? ফিন্যান্স কি লোন হিসাবে নাকি ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে? শর্টটার্ম বা লংটার্ম ফিনান্সিয়াল প্ল্যান কিভাবে করতে হবে? কোম্পানির ভ্যালুয়েশন সঠিকভাবে কিভাবে করা যায়? সরকারের কাছ থেকে কিভাবে সহযোগিতা পাওয়া যাবে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে সহজ কোনো গাইডলাইন আমাদের সামনে নেই। বেসিসের সহায়তা নিয়ে এই ধরণের গাইডলাইন এবং ওয়ান স্টপ হেল্পডেস্ক বানানো সম্ভব। 

আমার আরেকটা বড় টার্গেট হলো- সিঙ্গাপুরের মত বাংলাদেশকে প্রথমে সাউথ ইস্ট এশিয়া, পরে এশিয়া মহাদেশে এবং পরবর্তীতে পুরো পৃথিবীতে কিভাবে স্টার্টআপ হাব হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় তার জন্য সরকারের সঙ্গে পলিসি লেভেলে কাজ করতে চাই। জেনে অবাক হবেন, দেশের সিংহভাগ স্টার্টআপ যারা দেশের বাইরে থেকে ফান্ড রাইজ করেছেন, তাদের ৯০% কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করেছেন সিঙ্গাপুরে! তাই পলিসি লেভেলে এমনভাবে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই যাতে শুধু দেশি স্টার্টআপ না; বিদেশি স্টার্টআপরাও এদেশে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করবে।  

আরেকটা জিনিস হলো স্টার্টআপ কোম্পানি এবং সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আমরা একই ধরণের সফটওয়্যার বা সার্ভিস নিয়ে লোকাল মার্কেটে প্রতিযোগিতা করছি। এই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া যায় এবং বিশাল বাজারের মাইক্রোচিপ বা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মত ডিপ টেকনোলজিতে স্টার্টআপদেরকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা যায় এ নিয়ে সরকার এবং স্টার্টআপদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মনে রাখতে হবে সারা বিশ্বের সেরা ডিপ টেক কোম্পানিগুলোর শুরু কিন্তু ২ বা ৩ জন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে হয়েছিল। সেটা আমরাও করে দেখাতে চাই।  

টাইমলাইন: বেসিস নির্বাচন ২০২৪-২৬

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App