×

তথ্যপ্রযুক্তি

এজিএম ছাড়া বেসিসের অডিটর ফার্ম বদল কি আইনসম্মত?

মিজানুর রহমান সোহেল

মিজানুর রহমান সোহেল

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১০:৫০ এএম

এজিএম ছাড়া বেসিসের অডিটর ফার্ম বদল কি আইনসম্মত?

বেসিস লোগো

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এজিএম ছাড়াই একটি অডিটর ফার্মকে নিয়োগ দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বেসিস সদস্যদের মধ্যে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ বেসিসের এমন কর্মকাণ্ডে তীব্র সমালোচনা করছে, কেউবা নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে সদস্যদের স্বার্থে কাজ করতে বলছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ৩০ মার্চ বেসিসের এজিএমে ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির জন্য মিজান ইসলাম অ্যান্ড কোং নামের একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে জানা গেল অধিকারী অ্যান্ড কোং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে অডিট করিয়েছে বেসিস। ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষা করানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বেসিসের তিন জন পরিচালক। তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে বলেছেন, আইন অমান্য করে বেসিস ভিন্ন অডিটর দিয়ে নিরীক্ষা করিয়েছে। 

মিজান ইসলাম অ্যান্ড কোং কেন অডিটরের দায়িত্ব নিয়েও অডিট করেনি? এ বিষয়ে খোঁজ নিতে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মিজান ইসলামকে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি। তিনি অসুস্থতার কারণে সাধারণত কল রিসিভ করতে পারেন না বলে তার অফিস থেকে জানানো হয়েছে। তাদের আরেক পার্টনার মামুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি অফিসের বাইরে। আমাদের একেক পার্ট একেকজন পার্টনার দেখেন। তবে অফিসে গিয়ে জানাতে পারবো কে বেসিস দেখতো এবং কেন অডিট করতে পারেনি। পরে অবশ্য তিনি কোনো তথ্য জানাননি। 

বেসিসের অডিট করা প্রতিষ্ঠান অধিকারী রয় এন্ড কোং এর স্বত্বাধিকারী মোহন অধিকারীর সঙ্গে গত ৬ মার্চ যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারছি না। তবে আপনাকে খোঁজ নিয়ে জানাবো। এরপর ১০ মার্চ তাদের আরেক পার্টনার কে ডি রয় ও প্রতিষ্ঠানটির টপ ম্যানেজমেন্টে সদ্য যোগদান করা দেবব্রত দেব রয় ভোরের কাগজ অফিসে এসে সরাসরি দেখা করেন। সেখানে তারা জানান, আগের প্রতিষ্ঠান ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড (ডিভিসি) আটকে গিয়েছিল বলে কাজটি করতে পারেনি। আমরা আইন মেনে তাদের থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে এরপর অডিট করেছি। সম্প্রতি অডিট নিয়ে যেসব আলোচনা হচ্ছে আমাদের অবজার্ভেশনে এমন কোনো ইস্যু আসেনি। 

তবে আইনে কী আছে? এজিএম ছাড়া বেসিসের অডিটর ফার্ম বদল কি আইনসম্মত হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বেসিস সদস্য মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, এটা একদম আইনসম্মত হয়নি। অডিটর ফার্ম বদল করতে হলে অবশ্যই এজিএম করে বদল করতে হবে। বেসিসের মেমোরান্ডামের ২০ ধারায় একাউন্টস ও অডিট বিভাগে বলা আছে, অডিট সংক্রান্ত অনিয়ম করলে ওই বোর্ড পরবর্তী ৬ বছর কোনো ট্রেড বডিতে আর নির্বাচন করতে পারবে না। 

তবে ভিন্ন কথা বলছেন কর্পোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার কাজী এরশাদুল আলম। তিনি বলেন ভোরের কাগজকে বলেন, বেসিসের অডিটর ফার্ম বদল করার বিষয়টি বেআইনি হয়নি তবে অনিয়মিত হয়েছে, যা পরবর্তীতে জেনারেল মিটিংয়ে নিয়মিত করে নিলেই হবে। তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি অ্যাক্টে ২১০ ধারার ৭ নং উপ ধারায় বলা আছে, নিরীক্ষকের কোনো পদ সাময়িকভাবে শূন্য হলে পরিচালক পরিষদ উক্ত পদ পূরণ করতে পারবে এবং পদটি শূন্য থাকাকালে বাকী নিরীক্ষক কেউ থাকলে চালিয়ে যেতে পারবে। এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত অডিট ফার্ম অপারগতার কারণে চলে গেলে পরিচালক পরিষদ নিয়ম অনুযায়ী নতুন অডিট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা করিয়েছেন। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, সবার উপরে বেসিসের সাধারণ সদস্য এবং তাদের কাছে আমাদের সর্বাপেক্ষা দায়বদ্ধতা। আমরা বেসিস ও সদস্যদের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষায় আইনি বিধিমালা অনুসরণ করে অডিটর ফার্ম বদল করেছি। 

তিনি বলেন, একটি চলমান বছরের মাঝপথে কোন কারণে নিয়োগপ্রাপ্ত অডিটর দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে, বাংলাদেশের কোম্পানি আইনেই নতুন অডিটর নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে করণীয় বলে দেয়া আছে। এ প্রেক্ষিতে আমরা অডিটর রেগুলেটরি কাউন্সিল, বেসিসের সদস্য, সংশ্লিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলি। অনেকগুলো ম্যান্ডেটরি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং বেসিসের স্বার্থ রক্ষায় অডিটর ফার্ম বদল করেছি। আমরা কেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় এই কাজটি করেছি, সেটা সাধারণ সদস্যদের সামনে আগামী ১৬ মার্চ এজিএমে বিস্তারিতভাবে বিষয়টি তুলে ধরবো।

টাইমলাইন: বেসিস নির্বাচন ২০২৪-২৬

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App