×

তথ্যপ্রযুক্তি

মোবাইল গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায়

প্রতিযোগিতা আইন ও এসএমপি প্রবিধানমালার যথাযথ প্রয়োগ জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

প্রতিযোগিতা আইন ও এসএমপি প্রবিধানমালার যথাযথ প্রয়োগ জরুরি

প্রতিযোগিতা আইন ও এসএমপি প্রবিধানমালার যথাযথ প্রয়োগ জরুরি

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে “টেলিযোগাযোগ খাতে বাজার প্রতিযোগিতা, মুঠোফোন গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান। 

তিনি বলেন, মার্কেটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য কমিশন কাজ করবে। গ্রাহকদের অভিযোগ ও করণীয় বিষয়ক সুপারিশ কমিশনের কাছে উপস্থাপন করার জন্য মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতির প্রতি তিনি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, আগামী মাসে আমরা গণশুনানী অনুষ্ঠিত করতে যাচ্ছি। যা হবে ৮টি বিভাগে। এছাড়াও অনলাইনে শুনানী অনুষ্ঠিত করা হবে। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই ইনোভেশন এন্ড রিসার্স সেন্টার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সাবেক সচিব) ডাঃ বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, গ্রামের মানুষ নেটওয়ার্কের দুর্বলতা থাকলেও ব্যবহার করতে পেরেই খুশী। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাইলে নেটওয়ার্কের গতি বৃদ্ধির বিকল্প নাই। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপকার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত তার বক্তব্যে বলেন, অপারেটরদের অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এখানে কোন একটি অপারেটর বেশী সুবিধা নিচ্ছে একথা ঠিক না। মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি অপারেটরের বিজনেস পলিসির কারণেই তারা অগ্রগামী হয়। আর ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই তারা পিছিয়ে যায়। আমরা উন্নত সেবা দেওয়ার জন্যে কাজ করে যাচ্ছি। 

রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মো. ফজলে হুদা বলেন, ৫৭ শতাংশ রাজস্ব সরকারকে দিতে হয়। আর মাঝখানের কিছু অপারেটরদেরকে বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দিতে হয় ২১ শতাংশ। ২৬/২৭ টাকার মধ্যে আমাদেরকে অপারেশন পরিচালনা করতে হয়। এর মধ্যে যদি অসামঞ্জস্যপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে তাহলে দু’একটি অপারেটর ঝরে পড়লে বাজারে মনোপলি প্রতিষ্ঠা হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে খুব দ্রুতই এসএমপি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

বাংলালিংকের চীফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তৈমুর রহমান বলেন, ছোট অপারেটর হিসেবে আমরা খুব চাপে আছি। আমাদের প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ এবং স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। এসএমপি বাস্তবায়িত হলে আমাদের সুবিধার পাশাপাশি নতুন করে বিদেশী বিনিয়োগ বা অন্য অপারেটর ব্যবসায় আসতে উৎসাহিত হবে। 

ফাইবার আট হোমের চীফ রেগুলেটরি অফিসার আব্বাস ফারুক তাদের নিজেদের বাজার প্রতিযোগিতায় চরম বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। 

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একসময় সিটিসেল বাজারে মনোপলি করতো। এরপর গ্রামীণ টেলিকম ইনকামিং এবং আউটগোয়িং উভয়কলে ১০ টাকা করে চার্জ নিত। আবারো সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একটি অপারেটর ৫২ শতাংশ বাজার দখল করে আছে আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ৩.৫ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। এই বৈষম্যের কারণেই নতুন করে বিদেশী বিনিয়োগ বা দেশী বিনিয়োগ আসতে চাচ্ছে না টেলিকম খাতে। 

আরো বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সংগঠনের উপদেষ্টা ড. কামরুজ্জামান, এড. বেলাল প্রমুখ। 

মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মোঃ খালেদ আবু নাছের বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর রয়েছে। এই অপারেটরদের বর্তমানে যে গ্রাহক সংখ্যা ও রেভিনিউ মার্কেট শেয়ার রয়েছে তার ভিত্তিতে এইচএইচআই (হারফেন্ডাল-হার্শম্যান ইনডেক্স)সূচক অনুসারে বাজার প্রতিযোগিতায় খুবই একপেশে কর্তৃত্বপূর্ণ একটি অপারেটরের উপস্থিতি নির্দেশ করে। এইচএইচআই সূচক হলো বাজার প্রতিযোগিতার অবস্থা পরিমাপে বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। 

বর্তমানে এ খাতে গ্রাহকের ভিত্তিতে প্রথম অবস্থানে থাকা গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার ৪৩.২%, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবি আজিয়াটার ৩০.৬%, বাংলালিংকের ২২.৮% এবং চতুর্থ অপারেটর টেলিটকের ৩.৪%। রেভিনিউয়ের দিক থেকে গ্রামীণফোনের বাজার হিস্যা প্রায় ৫০%। বাজার প্রতিযোগিতা পরিমাপের আরেকটি সূচক কনসেন্ট্রেশন রেশিও। বর্তমানে মোবাইল সেবার বাজারের সিআর-৩ তথা প্রথম তিন অপারেটরের মার্কেট শেয়ারের সমষ্টি গ্রাহকভিত্তিতে ৯৬.৬% আর রেভিনিউ ভিত্তিতে ৯৮.৫%। 

এই অবস্থা নির্দেশ করে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে এই বাজার মনোপলির দিকে ধাবিত হবে। সর্বশেষ অবস্থানে থাকা তিনটি অপারেটরের জন্য এই বাজারে টিকে থাকা তাই বেশ কঠিন। একই সাথে টেলিযোগাযোগ খাতের বিনিয়োগও সংকটের মুখে পড়বে। এই অবস্থা একটি বিপদজনক পরিস্থিতির সংকেত দেয় যেখানে বাজার প্রতিযোগিতা ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 

যার ফলশ্রুতিতে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, উদ্ভাবনী সেবার প্রসার বাজারে হ্রাস পাবে এবং সার্বিকভাবে তা মোবাইলভিত্তিক সেবার অর্থনৈতিক অবদানে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে। এই পরিস্থিতির নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অতিসত্ত্বর তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। 

বর্তমানে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের বাজার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে যে সব নীতিমালা ও আইন-কানুন  রয়েছে সেগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এই দেশে প্রতিযোগিতা আইন রয়েছে-সেটি ভঙ্গ করে কোনো অপারেটর যদি ক্রস সাবসিডি, প্রতিযোগিতা ভঙ্গকারী মূল্য নির্ধারণ করে অথবা খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের প্রতিযোগিতা বিরোধী অফার দেয় তাহলে সেসব নিয়ন্ত্রণে বিধান রয়েছে কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। এই সব প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যক্রম মনিটরিং এবং প্রতিরোধ করতে একটি নীতিমালা ইতিমধ্যে ২০১৮ সালে বিটিআরসি প্রণয়ন করেছে, যা এসএমপি রেগুলেশন (সিগফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার) ২০১৮ নামে পরিচিত। 

এই এসএমপি বিধিমালার ভিত্তিতে বিটিআরসি ২০১৯ সালে ২০টি নিয়ন্ত্রণমূলক বিষয় নির্ধারণ করেছিল। যার মধ্যে মাত্র ৩টি বিষয় প্রয়োগ করা হয়েছে ২০২০ সালে, বাকিগুলো এখনো আলোর মুখ দেখে নি। এছাড়াও প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যক্রম মনিটরিং-এর ক্ষেত্রে এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের পর্যালোচনা করতে দেখা যায়নি। ১৯ কোটির বেশি মোবাইল গ্রাহকের স্বার্থে বাজার প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে অবিলম্বে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকারের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App