×

তথ্যপ্রযুক্তি

অক্সফোর্ড ইকোনোমিকসের গবেষণা

২০২৮ সালে ঢাকার কর্মশক্তিতে যুক্ত হবেন ৩ লাখ নারী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম

২০২৮ সালে ঢাকার কর্মশক্তিতে যুক্ত হবেন ৩ লাখ নারী

প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে ২০২৮ সালে ঢাকার কর্মশক্তিতে যুক্ত হবেন ৩ লাখ নারী

বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইডশেয়ারিং অ্যাপ উবার বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) “রাইড-হেইলিং: আ প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন’স ইকোনমিক অপরচুনিটি ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে রাইডশেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর যুগান্তকারী ভূমিকার কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে প্রকাশ করা হয়েছে যে, কর্মশক্তিতে আরও বেশি সংখ্যক নারীকে যুক্ত করতে এ সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নারীদের কর্মশক্তিতে যোগদান কিংবা আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য উচ্চ অবস্থানে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে রাইডশেয়ারিং সার্ভিসগুলো। এতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে: 

যাতায়াতের সুব্যবস্থার ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে ঢাকার নারী কর্মশক্তির হার বৃদ্ধি পেতে পারে ১৩ শতাংশের বেশি। রাইডশেয়ারিং সুবিধার ফলে প্রায় ৩ লাখ নারী ঢাকার কর্মশক্তিতে যোগ দেবেন এবং এই বৃদ্ধির ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে ঢাকার অর্থনীতির আকার ১.৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে। 

প্রতিবেদনটি প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত পরিবহন নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং রাইড-হেইলিং সেবাসমূহ এই প্রয়োজনীয়তা পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উবারের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নারী ক্ষমতায়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। বাংলাদেশে নারীদের নিরাপদ চলাচল এবং অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর এই ভূমিকা ও উদ্যোগের প্রতি আমি প্রশংসা ও সমর্থন জানাচ্ছি।

উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উবার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো খুবই জরুরি। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থার ফলে আরও বেশি সংখ্যক নারীর জন্য কর্মশক্তিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। উবার এবং অন্যান্য রাইডশেয়ারিং সার্ভিসগুলোকে এই ‘জেন্ডার কমিউট গ্যাপ’ সমাধানে কাজ করতে দেখে আমি আনন্দিত। এর মাধ্যমে নারীরা নিরাপদে ও সুবিধাজনকভাবে সরাসরি কর্মস্থল বা নিজের কাছাকাছি গণপরিবহন স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারেন। বর্তমান ও ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যে অবদান রাখায় নারীদের সাহায্য করতে পেরে উবার গর্বিত।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর লিড ইকোনমিস্ট বালি কৌর সোধি বলেন, বিশ্বজুড়ে অর্থ উপার্জনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণের হার এখনো তুলনামূলকভাবে কম। নারীদের শিক্ষা কিংবা যোগ্যতা যে পুরুষদের তুলনায় কম এমন কিন্তু নয়। মূল বিষয়টি হলো, বিশেষত উদীয়মান বাজারে নারীরা এখনো গৃহস্থালি ও সেবা প্রদানের কাজ বেশি করে থাকেন। এই প্রতিবেদনটি নারীদের কর্মশক্তিতে প্রবেশ বা কর্মজীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যাতায়াতের বাধা দূর করতে সহায়তার লক্ষ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য একটি প্রমাণ-ভিত্তিক নীতির সুপারিশ করে।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে ঢাকায় মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত একটি জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যও ব্যবহৃত হয়েছে। উবার এবং অক্সফোর্ড ইকোনমিকস মিলিতভাবে উবার যাত্রীদের নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। ঢাকার নারী ও পুরুষদের রাইডশেয়ারিং সংক্রান্ত আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়াই এই জরিপের লক্ষ্য ছিল। 

জরিপটি থেকে নারীদের কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণে রাইড শেয়ারিংয়ের প্রভাব নিয়ে বেশ কিছু আগ্রহোদ্দীপক তথ্য পাওয়া যায়। যেমন- 

কর্মশক্তিতে যোগদান: 

প্রতি ৩ জনে ১ জনের বেশি নারী যাত্রী একমত হয়েছেন যে, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের সহজলভ্যতার কারণে তারা কর্মশক্তিতে যোগ দিতে সক্ষম হয়েছেন। 

কাজ ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা: 

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক নারী বলেছেন যে, রাইডশেয়ারিং সার্ভিস তাদের কাজ ও পরিবারের মধ্যে সময়ের সুষম বণ্টনে সাহায্য করে। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নিজের সুবিধামতো ব্যবস্থা করে নিতেও সাহায্য করে। 

নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব: 

জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে কর্মশক্তিতে যাতায়াতের জন্য রাইডশেয়ারিং ব্যবহারকারী ১০ জনের প্রায় ৯ জন (৮৯ শতাংশ) বলেছেন যে, অন্যান্য যাতায়াত ব্যবস্থার চেয়ে নিরাপদ হওয়ার কারণেই তারা রাইডশেয়ারিং বেছে নিয়েছেন।       

কর্মসংস্থানের সুযোগ: 

১০ জনের মাঝে প্রায় ৩ জন কর্মজীবী নারী যাত্রী একমত হয়েছেন যে, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের সহজলভ্যতার কারণে তাদের জন্য নিজেদের উপযুক্ত কাজের সুযোগ গ্রহণ করা সহজ হয়েছে। 

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নারীদের কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণের পরিমাণ কম। ২০২২ সালে পৃথিবীতে নারীদের কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ছিল ৪৭ শতাংশ, যা বাংলাদেশে ছিল ৪৩ শতাংশ। প্রতিবেদনটি অনুসারে, নারীর যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুটি চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপদ যানবাহনের স্বল্পতা এবং কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে বর্তমান ভারসাম্যহীনতা। 

স্বাধীন বৈশ্বিক উপদেষ্টা সংস্থা অক্সফোর্ড ইকোনমিকসকে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করার জন্য নিয়োগ দিয়েছে উবার। এই প্রতিবেদন কর্মশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরেছে। একইসাথে এটি ২০২৮ সালের মধ্যে ব্যক্তি ও বৃহত্তর অর্থনীতির সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধা বাস্তবায়নের একটি আভাস দেয়। রাইড শেয়ারিংয়ের সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুবিধার আনুমানিক হার নির্ণয়ের জন্য অক্সফোর্ড ইকোনমিকসকে উবার থেকে বেনামী ও সমষ্টিগত মালিকানা তথ্য প্রদান করা হয়েছিল। 

বিস্তারিত প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এই ঠিকানায়। 




সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App