×

তথ্যপ্রযুক্তি

প্রযুক্তি দিয়ে বদলাতে চাই বাংলাদেশ: সালেহ মোহাম্মদ মোবিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৬ পিএম

প্রযুক্তি দিয়ে বদলাতে চাই বাংলাদেশ: সালেহ মোহাম্মদ মোবিন

বেস্ট সফট টেকনোলজির ফাউন্ডার সিইও সালেহ মোহাম্মদ মোবিন

সালেহ মোহাম্মদ মোবিন। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক প্রডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে সফলতার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। গত ১ জুলাই উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন করে বেস্ট সফট টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন। তার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে। ভোরের কাগজ: দেশের মানুষের জন্য আর কি কি কাজ করে থাকেন? সালেহ মোহাম্মদ মোবিন: বিজনেসের পাশাপাশি বাংলাদেশ আইটি প্রফেশনাল ফ্রেন্ডস ক্লাব নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। যার বর্তমানে মেম্বার হলো প্রায় ১২ হাজার। এখানে আইটির বিভিন্ন প্রডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে ওয়ার্কশপ, সেমিনারসহ ফ্রি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এতে করে বেকার ও ও যারা জব খুঁজছেন তাদের জন্য অনেক উপকার হয়। এছাড়াও লিংকডইনে প্রায় ৪৭ হাজার ফলোয়ার আমার সাথে যুক্ত আছেন। জব ও ক্যারিয়ার বিষয়ক অনেক পরামর্শ দিয়ে সেবা করে থাকি। ভোরের কাগজ: প্রযুক্তির কোন সেক্টরে কীভাবে ক্যারিয়ার গড়লেন? সালেহ মোহাম্মদ মোবিন: ২০০১ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটি আইটি কোম্পানিতে জয়েন করি। পজ সফটওয়্যার থেকে শুরু করে অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ইআরপি সফটওয়্যারসহ এসএপি, ওরাকল ইআরপি নিয়ে কাজ করে আসছি। একে একে অনেকগুলো সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করার ফলে ক্যারিয়ার হিসেবে আইটিকে বেছে নিয়েছি এবং বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে সফটওয়্যার সেল করে মার্কেটে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। ভোরের কাগজ: তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হলেন কীভাবে? সালেহ মোহাম্মদ মোবিন: সবারই একটা ড্রিম থাকে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করার। তাই আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই বেস্ট সফট টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। ভোরের কাগজ: ‘প্রযুক্তি দিয়ে বদলাতে চাই বাংলাদেশ’ কীভাবে? এর পরিকল্পনা বা ভিশন কী? সালেহ মোহাম্মদ মোবিন: ৪র্থ শিল্প বিপ্লব চলছে সারা বিশ্বে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের তরুণরা এখন আইওটি ব্যবহার করছে। ব্লক চেইন, ক্লাউড কম্পিউটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিংয়ের মত প্রযুক্তিগুলো ঢুকে যাচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন কাজে। এখন অফিস আদালতে লোকজন নিয়োগ হচ্ছে অনলাইনে। সব ধরনের কেনাকাটা হচ্ছে অনলাইনে। ব্যাংক বীমা কোম্পানিগুলো ও চলছে অনলাইনের মাধ্যমে। বিকাশ রকেট নগদ এর মত সার্ভিসগুলোতে লেনদেন বেড়ে গেছে বহুগুণ। কিছু দিন পর দেখবেন মানুষে আর হাতে টাকা নিয়ে ঘুরবে না। টাকা হয়ে যাবে ইলেকট্রনিকস টাকা। সব লেন দেন হবে মোবাইল কিংবা ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে। সব কাজেই ব্যবহৃত হবে মেশিন বা রোবটের মত টেকনোলজি। বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে আপনাকে আমাকে চলতে হবে টেকনোলজির সাপোর্ট নিয়ে। আমাদের বাংলাদেশ ও এগিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে। আগে মানুষ বুঝতে পারত না সফটওয়্যার কি জিনিস। আর এখন পাড়ার মুদি দোকানে পজ সফটওয়ার ব্যবহার করে। সবাই টাকার বদলে ব্যবহার করছে ব্যাংকের কার্ড। যোগাযোগ ব্যবস্থায় চলে আসছে আমূল পরিবর্তন। বাসের জন্য আর আমাদের বসে থাকতে হয় না। ঢাকা শহরে চালু হয়েছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল। আমরা আস্তে আস্তে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। এখন অফিসে যেতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বাসায় বসেও অফিসের কাজ করা যাচ্ছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো কম্পিউটারাইজড হয়ে যাচ্ছে। তাই ঘরে বসে ও অফিসের হিসাব নিকাশ দেখতে পারছে। মোবাইলে চলে আসছে প্রতি দিনের রিপোর্ট। ভোরের কাগজ: নতুন কেউ কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে? সালেহ মোহাম্মদ মোবিন: নতুন উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই জেনে শুনে বুঝে বিজনেসে আসতে হবে। যে কাউকে বিজনেসে আসার আগে প্রডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে ৩/৪ বছর ফিজিক্যাল কাজ করে শিখে তার পর আসা উচিৎ। যত কম বয়সে বিজনেসে আসা যায় ততই ভালো হবে। তবে উদ্যোক্তা হওয়া মানে অনেক ধৈর্য এবং চ্যালেঞ্জের দরকার। সেই মানসিকতা সবার থাকতে হবে। ভোরের কাগজ: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চাকরির জন্য কোন প্রশিক্ষণগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? সালেহ মোহাম্মদ মোবিন: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চাকরির জন্য আইটির প্রডাক্ট ও সার্ভিসের উপর বিভিন্ন প্রফেশনাল ট্রেনিং নিতে পারে। সফটওয়্যারের বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজের উপর প্রশিক্ষণ নিতে পারে। তা ছাড়া গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন ভিডিও এডিটিংসহ অনেক প্রশিক্ষণ আছে। তাছাড়া নেটওয়ার্কিংয়ের কাজেরও অনেক ডিমান্ড লোকাল মার্কেটে আছে। মনে রাখতে হবে যে কোন কাজে আপনাকে এক্সপার্ট হতে হবে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সাররাও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ এনে করে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভোরের কাগজ: বেকারত্ব হ্রাস করতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া জরুরি? সালেহ মোহাম্মদ মোবিন: বেকারত্ব হ্রাস করতে হলে সরকার এবং পাবলিক সেক্টরকে এক সাথে কাজ করতে হবে। জবের কারিকুলামগুলোকে কলেজ ইউনিভার্সিটির সিলেবাসে অ্যাড করতে হবে। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যোগ উপযোগী করতে হবে। আর ছাত্র ছাত্রীদের জেনারেল পড়াশোনার পাশাপাশি আইটির প্রডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে বিভিন্ন প্রফেশনাল ট্রেনিং নিয়ে তৈরি থাকতে হবে। আইটি প্রফেশনে থেকে মানুষের সেবা করতে পেরে আমি নিজেও গর্ব বোধ করছি। গত কয়েক বছরে অনেকগুলো কোম্পানিতে সফটওয়্যার বিক্রি করে ডিজিটাল বাংলাদেশকে ডিজিটালের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আমরা নতুন নতুন টেকনোলজিস ব্যবহার করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার চেষ্টা করছি। এই করোনা আমাদেরকে অনেক জায়গায় পিছিয়ে দিলেও কিছু কিছু জায়গায় ৫ বছরের ও বেশি এগিয়ে দিয়েছে। যেমন ধরুন টেকনোলজিতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এখন আমরা জুম, গুগল মিটের মাধ্যমে অনলাইন মিটিং করতে পারি। স্ট্রিমইয়ার্ডের মাধ্যমে ফেসবুক লাইভ প্রোগ্রাম করতে পারি। বাসায় বসে অফিস করতে পারি। বাসায় বসে বাজার করতে পারি। ক্যাশ টাকা হাতে না নিয়েও বিকাশ, রকেট ও এটিএম কার্ড দিয়ে যে কোন কেনা কাটা করতে পারি। আমি বদলাতে চাই বাংলাদেশটাকে। বদলাতে চাই পুরো পৃথিবীটাকে। তাই প্রতিদিন নতুন নতুন টেকনোলজির সাথে পরিচিত হই আর নিজেকে বদলাই। আমি মনে করি- আমি বদলালেই বদলাবে দেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App