×

তথ্যপ্রযুক্তি

ডিজিটাল মার্কেটার হতে চান?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১৬ এএম

ডিজিটাল মার্কেটার হতে চান?
একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাইলে বিভিন্ন বাধা বিপত্তি ও চড়াই উৎরাই পার হতে হয়। একটি বাস্তব সত্য কথা, ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোন শর্টকাট নেই। অধ্যবসায়, সাধনা আর প্রাকটিস নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। একমাস বা তিনমাসের কোর্স করে আপনি হয়তো কিছু আইডিয়া পাবেন তবে মার্কেটার হওয়ার পথ বহু দূর। ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কি থাকতেই হবে? প্রথমত আপনার একটি ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার থাকতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশিরভাগ কাজ আপনি ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ ছাড়া করতে পারবেন না। অনেকেই হয়তো আপনাকে মোবাইলে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে বলবে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ফোনে আপনি খুব অল্প বা বেসিক কিছু কাজ ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারবেন না। গুগল ও ইউটিউবে সার্চ করা জানতে হবে যেকোনো সমস্যার সমাধান ইউটিউব বা গুগল সার্চ করে বের করার দক্ষতা থাকতে হবে, কেননা প্রায় সব সমস্যার সমাধানই ইউটিউব বা গুগলে আছে। অনেকেই আমাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দিয়ে একদম খুঁটিনাটি প্রশ্ন করেন। সময় থাকলে অবশ্যই রিপ্লাই দেই। কিন্তু সত্যি বলতে ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার? কোন বিষয়ে দিয়ে শুরু করা যায়? ডিজিটাল মার্কেটিং এর জব ডিমান্ড কেমন? আসলে এই প্রশ্নগুলো কিন্তু আপনার গুগল থেকেই বের করা উচিত। আপনি যখন একজন ব্যস্ত মানুষের সাথে কথা বলবেন তার কিন্তু এত সময় হবে না বিস্তারিত আলোচনা করার। সুতরাং টু দ্যা পয়েন্টে কিছু প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারেন। তাছাড়াও, ডিজিটাল দুনিয়ায় কাজ করতে প্রতিনিয়ত আপনাকে অসংখ্য সমস্যায় পড়তে হবে, এই সমস্যাগুলোর উত্তর কিন্তু আপনাকে গুগল/ইউটিউব থেকেই বের করতে হবে। হাজারো সমস্যার সমাধান নিজেকেই বের কর‍তে হবে। আপনাকে কেউ ২/৪ টা বিষয় দেখিয়ে দিতে পারে কিন্তু প্রতিনিয়ত হয়তো কেউ দেখাবে না। নতুন নতুন আপডেটের সাথে পরিচিত হতে হবে নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে হবে এবং ডিজিটাল দুনিয়ার যেকোনো আপডেটের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। অনলাইন দুনিয়া সর্বদা পরিবর্তনশীল তাই আপডেট থাকা ছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং করা কষ্টসাধ্য। কেননা আজকে যে বিষয়টি বহুল ব্যবহৃত আগামীকাল হয়তো তা গুগল হতে নিষিদ্ধের ঘোষণা আসতে পারে। শুধু কি তাই, আপনি যদি ফেসবুক বিজনেস ম্যানেজারে কাজ করে থাকেন, তবে দেখবেন ১ বছর আগের ইন্টারফেসের সাথে আজকের ইন্টারফেসের কোন মিল নেই। কিংবা এসইও এর ক্ষেত্রে ১ বছর আগের গুগলের আপডেট থেকে আজকের আপডেট সম্পূর্ণ আলাদা। ভালো ট্রেইনার বা ইন্সটিটিউট একটা ভালো ট্রেইনার বা ইন্সটিটিউট থেকে ট্রেনিং নেয়া যেতে পারে বা অনলাইনে Udemy বা Coursera বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেইনিং নেয়া যেতে পারে। যেকোন ট্রেইনার বা ইন্সটিটিউট হতে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার আগে তার ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে যারা ডিজিটাল মার্কেটিং শেখায় তাদের অধিকাংশই মানসম্মত ট্রেনিং দেয় না। ফলে ভাল প্রতিষ্ঠান ও ভাল ট্রেইনার না হলে সাফল্য অর্জন করা কঠিন। নাম বলতে চাই না তবে বাংলাদেশেও বেশ ভালো কিছু ট্রেইনার ও ট্রেনিং ইন্সটিটিউট আছে। কিছু ফ্রি কোর্স Google Digital Garage হতে ফ্রি ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যায় সেখান থেকে সার্টিফিকেটও প্রদান করে। যদিও এটা খুব বেসিক একটা কোর্স। Udemy প্রায়ই বিভিন্ন অফার দেয় ও বিভিন্ন ফ্রি কোর্সও তাদের থাকে। Facebook Blueprint (ফ্রি ভার্সন) হচ্ছে ফেসবুকের অফিসিয়াল ট্রেনিং প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক থেকেও কোর্সে পাশ করে সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। বেসিক ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার পর আপনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারেন। যা আপনার প্রোফাইল ও সিভিকে করবে এক কথায় অসাধারণ। সেগুলো হলো- Digital Garage: Fundamentals of Digital Marketing Certification, Google Analytics IQ Certification, Hootsuite Social Marketing Certification, Google Ads Certification, YouTube Certification, Facebook BluePrint Certification, Twitter (X) Flight School Certification, HubSpot Email Marketing Certification, Ahrefs Academy, SEMrush Academy ইত্যাদি। গুগলে সার্চ করলে সবগুলোরই বিস্তারিত পাবেন। কি শিখে শুরু করবো? সবগুলো বিষয় একসাথে প্র্যাকটিস না করে নিজের আগ্রহ আছে এমন একটি বিষয়ে মনযোগী হতে হবে। একটি বিষয় মোটামোটি আয়ত্ব হলে বাকি বিষয়গুলোতে আস্তে আস্তে মনোযোগ দেয়া যেতে পারে। আমি সাজেস্ট করবো প্রথমে ফেসবুক মার্কেটিং দিয়ে শুরু করা যায়। তারপর অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, তারপর গুগল এডস তারপর এসইও ইত্যাদি। তবে এই সিরিয়াল মেন্টেইন করা কোন আবশ্যক কিছুনা। মার্কেটারদের সাথে সম্পর্ক রাখা ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে জড়িত প্রফেশনালদের সাথে সম্পর্ক রাখলে খুবই ভালো। তাদের নিকট হতে সাজেশন ও ভালো গাইডলাইন পাওয়া যেতে পারে। আপনার ফেসবুক টাইমলাইনকে ফানি না বানিয়ে আপনি ভালো কিছু পেইজ ও প্রোফাইলকে ফলো করতে পারেন। যুক্ত হতে পারেন ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপে। আশার কথা হচ্ছে বাংলাতেও এখন বেশ ভালো কিছু রিসোর্সফুল গ্রুপ আছে। পার্সোনাল পোর্টফলিও অনলাইনে ধাপে ধাপে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে হবে, যেমন ফেসবুক, ইউটিউবে মিনিংফুল কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে বা নিজস্ব পোর্টফলিও ওয়েবসাইট তৈরি করে। এমন কোন ডিজিটাল মার্কেটার পাওয়া দুষ্কর হবে যার অনলাইনে উপস্থিতি নেই। আপনি কোন ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠানের কাজ পেতে চাইলে অবশ্যই তারা আপনার পোর্টফলিও দেখতে চাইবে। আপনার দেখানোর মত কিছু না থাকলে কেনই বা একটি প্রতিষ্ঠান আপনাকে কাজ দিবে? এই পোর্টফলিও শুধু দেখানোর জন্যও না। আপনার কাজের প্র‍্যাকটিসগুলো কিন্তু এই পোর্টফলিও সাইট দিয়ে করে নিতে পারেন। আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে হোম পেজ, অ্যাবাউট পেজ, কন্টাক্ট পেজ ও ব্লগ পেজ অন্তত সুন্দরভাবে অপ্টিমাইজ করা উচিত। তারপর সেখানে আপনি যেসব কাজ করেছেন তার বর্ণনা দেয়া উচিত। যদি আপনি আগে কোন কাজ না করে থাকেন তবে আপাতত পেজগুলো অপ্টিমাইজ করে রাখতে পারেন। তারপর চেষ্টা করতে হবে আপনার সাইটকে র‍্যাংক করানোর। আপনার হোমপেজ ও ব্লগগুলোকে র‍্যাংক করাতে পারলে সেটিই আপনার দেখানোর মত একটি পোর্টফোলিও হতে পারে। সপ্তাহে অন্তত একটি করে ভালো মানের ব্লগ পাবলিশ করুন সাইটে। মার্কেটপ্লেসে সার্ভিস দেয়া অন্তত তিনমাস পূর্ণ শেখায় মনোযোগ দিতে হবে ও পরের তিনমাস প্রাকটিস করতে হবে। মোট ছয় মাস হওয়ার পর বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে আইডি খুলে সার্ভিস দেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশের অনেক মানুষই অল্প কিছুদিন শিখে মার্কেটপ্লেসে যাওয়া শুরু করে ফলে তার সার্ভিস খারাপ হয়। ক্লায়েন্ট তাকে নেগেটিভ রিভিউ দেয় ফলে তার মার্কেটপ্লেসে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়। ফলে ক্লায়েন্ট ও মার্কেটপ্লেস অথোরিটি বাংলাদেশি ফ্রিল্যন্সারদের সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা নেয়। যার ভুক্তভুগী হয় সব বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার। সুতরাং অন্তত ৬ মাস শিখার আগে মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য অ্যাপ্লাই না করাই যুক্তিসঙ্গত হবে। মার্কেটপ্লেসে ভালো করলে তিনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন বা ভালো কোম্পানিতে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে জব করতে পারেন। প্রতিনিয়ত শেখা মনে রাখবেন শেখার কোন শেষ নেই, শেখার কোন বয়স নেই। শেখা ও প্র্যাকটিস অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। আপনি কাজ পান বা না পান আপনাকে কিন্তু নিয়মিত লার্নিং চালিয়ে যেতেই হবে। ডিজিটাল মার্কেটারের ভবিষ্যৎ কি? একটা কোম্পানি শুধু একটা আইডিয়া আর ডিজিটাল মার্কেটিং গ্রোথ হ্যাকিং করে মার্কেটের বড় শেয়ার দখল করে নিতে পারে। সেজন্য ডিজিটাল মার্কেটিং হয়ে গেছে মার্কেটিং এর প্রাণ। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং পিছনে পড়ে যাচ্ছে আর ডিজিটাল মার্কেটিং জায়গা দখল করছে। ফলে প্রায় সব ধরণের কোম্পানিই ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারছে। সেই সাথে মার্কেটে কদর বাড়ছে ডিজিটাল মার্কেটারদের। ক্রমান্বয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিষ্ট হয়ে উঠছে একটি লোভনীয় চাকরির মাধ্যম। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের কথা না বললেই নয়। ডিজিটাল মার্কেটিং এখন ফ্রিল্যান্সারদের এক নাম্বার চয়েস! কেউ ডিজিটাল মার্কেটিং এর আকর্ষণীয় জব করছে কেউবা করছে ফ্রিল্যান্সিং। কথাগুলো যত সহজে বললাম আসলে কাজটা কিন্তু এত সহজ না! ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রগুলো কি কি এই আকর্ষণীয় প্রফেশনে যেতে প্রয়োজন স্কিল বা দক্ষতা, নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিতি ও কঠোর পরিশ্রম। ডিজিটাল মার্কেটিং এর রয়েছে অনেকগুলো ক্ষেত্র যেমন- • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা (SEO) • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা (SMM) • ভিডিও মার্কেটিং বা ইউটিউব মার্কেটিং • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং • ইমেইল মার্কেটিং • কনটেন্ট মার্কেটিং • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বা (SEM) • CPA মার্কেটিং ইত্যাদি । এতগুলো ক্ষেত্রের মধ্যে কোনটি শিখবো? মনে রাখবেন ডিজিটাল মার্কেটিং যারা শিখতে চান তাদের সবগুলো সেক্টরে কাজ করতে হবে এমনটা মোটেও ভাবা ঠিক নয়। আপনি যদি ভালভাবে শিখতে পারেন তবে যেকোনো একটি সেক্টরই আপনার জন্য যথেষ্ট হবে, হতে পারে তা ফেসবুক মার্কেটিং বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা ইউটিউব মার্কেটিং বা ইমেইল মার্কেটিং। আবারো বলছি সফল হতে যেকোন একটি সেক্টরে দক্ষতাই যথেষ্ট। পরিশেষে বলি, ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া একটা চলমান অধ্যবসায়ের বিষয়। আমি চেষ্টা করেছি স্বল্প কথায় ডিজিটাল মার্কেটার হায়ার পদ্ধতি বর্ণনা করেছি। বাকিটা গুগল ঘেঁটে নিজেই কিছুদিন এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করে পড়তে হবে। এটাই ডিজিটাল মার্কেটার হওয়ার ১ম লেসন। লেখক: শাহরিয়ার হাসান, ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিস্ট, উইডেভস

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App